“বাঙালির যেভাবে অধঃপতন হয়েছে, তাতে সেটিং তো হতেই পারে।“ দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং তৃণমূলের সঙ্গে সেটিং নিয়ে এবার বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন রানাঘাটের নবনির্বাচিত বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার।
লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপির ফলাফল এবং মন্ত্রী না হতে পারা নিয়ে এর আগে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। দলের নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকাশ্যে প্রশংসাও করেছিলেন তিনি। তাছাড়া জিততে না পেরে দল এবং দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মন্তব্য করেছিলেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষও।
আর এবার মুখ খুললেন রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার। সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, "ভোটের দিন এক ফেক অফিসার আমি নিজে ধরেছি। কেন্দ্র থেকে আসা পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে টাকার জোরে সেটিং হয়ে গিয়েছিল তৃণমূলের। পর্যবেক্ষকরা ব্যবস্থা না নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে যেতে বলেছেন। আইপ্যাক'র লোক কাউন্টিংয়ে এসে বসেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর আচরণও দেখেছি। সেটিং না হলে কী করে এমন হয়।"
সেটিং কি শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং পর্যবেক্ষকদের মধ্যে হয়েছিল, নাকি তৃণমূল-বিজেপির মধ্যেও হয়েছিল? এই নিয়ে প্রশ্ন করলে জগন্নাথ জানান, “হতেই পারে। বাংলার যা চরিত্র, আজকে যেভাবে অধঃপতন হয়ে গেছে, বাঙালী অধঃপতিত হয়ে গেছে। কারণ আজকে বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না পয়সার জন্য। সেই প্রভাব সারা সমাজের মধ্যেই পড়ে।“
বাংলায় বিজেপির এত কম আসন প্রসঙ্গে তিনি জানান, “দলের যারা বলিষ্ট নেতৃত্ব আছেন, কেন এরকম হল, কী করলে আগামী দিনে এর থেকে বাঁচা যাবে বা এরমধ্যে কোনো জালিয়াতি, কাউন্টিংয়ে-ভোটিংয়ে কী হল, এই ব্যাপার নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ সব পার্টিরই থাকা উচিত, আমাদেরও নিশ্চয় করবেন।“
পশ্চিমবঙ্গ থেকে দু'জন মন্ত্রী হয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় - বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার এবং বনগাঁর সাংসদ শাক্তনু ঠাকুর। এই তালিকায় ঠাঁই না পাওয়ায় আগেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিষ্ণুপুরের টানা দু'বারের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ।
বুধবার রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, "দলের অনেকেই এবার বিরোধিতা করেছিলেন আমার টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে। দু'-একজন বাদে সকলেই প্রচার করেছিলেন আমি হেরে যাব বলে। কিন্তু মানুষ আমার সঙ্গে ছিলেন, তাই জিতেছি। মন্ত্রী কাকে করা হবে সেটা দল বিচার করবে। দল মনে করেনি তাই আমাকে মন্ত্রী করেনি। তার জন্য আমি বিদ্রোহী হতে পারি না। সমালোচনা করতে পারি।“
পরবর্তী রাজ্য সভাপতি করা হলে, তিনি কি দায়িত্ব নেবেন? এ প্রসঙ্গে জগন্নাথ সরকার জানান, “প্রস্তুত আছি। আমি দলের সৈনিক। আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা পালন করব।“ উল্লেখ্য, লোকসভায় জিতে মোদীর মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাই জল্পনা তৈরি হয়েছে পরবর্তী রাজ্য সভাপতি কে হবেন তা নিয়ে। জগন্নাথ সরকার সাংসদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মার্জিনে জয়ী হয়েছেন, সেকারণে তাঁকে নিয়েও জল্পনা হচ্ছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন