অভাবের সংসারে ঘরে নেই মিষ্টি, মায়ের হাতে জল খেয়েই খুশি উচ্চমাধ্যমিকে পঞ্চম সোমনাথ

বাবা ছিলেন পেশায় সবজি বিক্রেতা। কিন্তু চার বছর আগে একটি দুর্ঘটনায় পা ভেঙে যাওয়ায় কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। বাধ্য হয়ে সোমনাথের মা বিড়ি বাঁধার কাজে লাগেন।
সোমনাথ পাল
সোমনাথ পালছবি - সংগৃহীত
Published on

অভাবের সংসারে আশার আলো ফোটাল সোমনাথ। আজ শুক্রবার, উচ্চমাধ্যমিকের ফলপ্রকাশ হয়েছে। এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে বাঁকুড়া গোয়েঙ্কা বিদ্যায়তনে ছাত্র সোমনাথ পাল৷ তার বাড়ি সানবাঁধা এলাকায়। উচ্চমাধ্যমিকে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৪৷

অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এই ছাত্রের মুখে রেজাল্ট বেরোনোর পর মিষ্টিও তুলে দিতে পারেননি সোমনাথের মা। শুধু মায়ের হাতে এক গ্লাস জল খেয়েই খুশি হয়েছে সোমনাথ। বাবা ছিলেন পেশায় সবজি বিক্রেতা। কিন্তু চার বছর আগে একটি দুর্ঘটনায় পা ভেঙে যাওয়ায় কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। বাধ্য হয়ে সোমনাথের মা বিড়ি বাঁধার কাজে লাগেন। যা আয় হয় সেই দিয়েই সংসার চলে। কার্যত নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অবস্থা। টিনের চালের একটি ছোট্ট বাড়িতে কোনোরকমে দিন গুজরান হয় সোমনাথদের।

উচ্চমাধ্যমিকে ছেলের এই চমকপ্রদ ফল দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সোমনাথের মা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সোমনাথ জানান, অভাব অনটনের মাঝেও যে এতো ভালো ফল করবে নিজেও আশা করেনি সে। তার কথায়, 'ভাল পরীক্ষা দিয়েছিলাম৷ তবে পঞ্চম স্থান পাব আশা করিনি৷'

আগামীদিনে শিক্ষক হতে চায় সে। তাই ভূগোলে অনার্স নিয়েই পড়াশোনা করতে চায় সে। সোমনাথের মতে সমাজকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে শিক্ষকদের ভূমিকা অপরিহার্য। শিক্ষকরা হলেন সমাজের মেরুদণ্ড। তাই নিজেও এই পেশায় আসতে চায় সে।

সোমনাথের এই অভূতপূর্ব রেজাল্টের পিছনে রয়েছে তাঁর শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। মোট ৫টি টিউশন ছিল সোমনাথের। সে জানিয়েছে, পরিবারের আর্থিক দুর্দশার কথা মাথায় রেখে তাঁকে বিনাপয়সায় পড়াতেন তাঁর শিক্ষকরা।

সংসারের এই ভয়ঙ্কর আর্থিক দুরবস্থার কারণে পড়াশোনা খুব বেশিদিন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তাই আগামী দিনে ছেলের পড়াশোনা চালাতে সাহায্য চান সোমনাথের মা।

উল্লেখ্য, এই বছর মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৭,২০,৮৬২ জন। তাদের মধ্যে পাশ করেছেন ৬,৩৬,৮৭৫ জন। এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে পাশের হার ৮৮.৪৪%। ছেলেদের পাশের হার ৯০.১৯% এবং মেয়েদের পাশের হার ৮৬.৯৮%। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে পাশের হার ৮৫.৫৯%। ৮৮.৩৫% পাশের হার রয়েছে তপশিলি জাতি এবং উপজাতির মধ্যে।

সোমনাথ পাল
স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার কাটিয়ে UPSC-তে ১৭৭ র‍্যাঙ্ক করলেন ৭ বছরের মেয়ের মা শিবাঙ্গী

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in