১০০ দিনের কাজে দুর্নীতি মাথা চাড়া দিয়েছে রাজ্যজুড়ে। একের পর এক কান্ড সামনে আসছে। সবক্ষেত্রেই নাম জড়িয়েছে শাসকদল তৃণমূলের। বাদ যাচ্ছে না সরকারি কর্মীদের নামও। সম্প্রতি মালদা জেলার রতুয়া ১ নম্বর ব্লকের বাহারাল গ্রাম পঞ্চায়েতে এমনই ঘটনা সামনে এসেছে। যেখানে ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির জেরে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে ৩ পঞ্চায়েত কর্মীকে। আর এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
কি ঘটেছে রাতুয়ায়? জানা গেছে, বহুদিন ধরেই ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতি নিয়ে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে মলাদার জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্রের কাছে। তার ভিত্তিতেই বাহারাল গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রাম রোজগার সহায়ক মানিক আলম, কাহালা গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রাম রোজগার সহায়ক মহম্মদ রাহাত আনসারি ও মানিকচক ব্লকের টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট চৈতালি মণ্ডলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে জেলা প্রশাসন। তদন্তে নামেন অতিরিক্ত জেলা শাসক (সাধারণ) বৈভব চৌধুরী। সেই তদন্তে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এরপরই মালদা জেলাশাসক ওই তিনজনকে বরখাস্ত করেন।
এরই পাশাপাশি কাহালা এবং বাহারাল গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক সেক্রেটারি এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট-এর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এই কর্মীদের সাসপেন্ড করে আরও উচ্চতর পর্যায়ে তদন্ত করবে জেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা।
এপ্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী বারবার দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের কথা বলছেন। কিন্তু তারপরও প্রশাসনের একাংশ সরকারি কাজকে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করছে। প্রশাসন যে অ্যাকশন নিয়েছে, তা ভালো। আরও অ্যাকশন নেওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। দীর্ঘদিন ধরে থেকে থেকে এদের আভিজাত্যটা এমন বেড়ে গেছে যে, সহ্যের বাইরে চলে গেছে। তার ফল পাচ্ছে। আর দলের কেউ জড়িত থাকলে, তারও শাস্তি হবে।’
অন্যদিকে, জেলা জুড়ে ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির জন্য তৃণমূল সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন মালদা সিপিআইএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র। পিপলস্ রিপোর্টারের প্রতিনিধিকে তিনি জানিয়েছেন, ‘প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতেই যদি দেখা যায় তাহলে ১০০ দিনের কাজে বিপুল পরিমাণ দুর্নীতি ধরা পড়বে। তৃণমূলের তলা থেকে উপর পর্যন্ত যুক্ত রয়েছে এতে। একটা প্রধান বা উপপ্রধান বা একটা সভাপতি যুক্ত আছে, তা নয়। পুরো দল যুক্ত আছে। যে কারণে একটা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বোর্ড লাগিয়ে সব দামি দামি গাড়ি চড়তে দেখা যাচ্ছে। কোথা থেকে আসছে এতো টাকা?’
তবে শুধু তৃণমূল নয়, ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতিতে বিজেপিরও যুক্ত থাকার অভিযোগ এনেছেন সিপিআইএমের মালদা জেলা সম্পাদক। তিনি জানিয়েছেন, ‘জেলা জুড়ে বেশিরভাগ জায়গায় বিরোধী দল হিসাবে বিজেপি আছে। তারাও এসব দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে।’ সেইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে। জেলা শাসকের কাছে এনিয়ে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। হরিশচন্দ্রপুরে ২০১৭ সালের বন্যার টাকা ব্যাপকভাবে নয়ছয় করা হয়েছে। এ নিয়ে আরটিআই করা হয়েছে, কিন্তু জেলা প্রশাসন কোনও উত্তর দিচ্ছে না।’
উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মূর বক্তব্য, ‘গত ১২ বছর ধরেই তৃণমূল ১০০ দিনের কাজকে পার্টি ফান্ড হিসেবে ব্যবহার করছে। তৃণমূলের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এই চুরির ভাগ পাচ্ছেন। প্রশাসনের একাংশের মদত ছাড়া এভাবে চুরি করা যায় না। প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশও এর সঙ্গে জড়িত। এর সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত।’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন