শেখ শাহজাহান, শিবপ্রসাদ হাজরা এবং উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে যখন সন্দেশখালি ফুঁসছে, তখন ওই অভিযোগকারী মহিলাদের গায়ের রং নিয়েই প্রশ্ন তুললেন উত্তর ২৪ পরগণার জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী। বললেন, “যারা অভিযোগ করতে এসেছিল তারা ফর্সা, তারা আদিবাসী নন।“ নারায়ণের এই মন্তব্যের পর বিরোধী শিবিরে তাঁকে নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
উল্লেখ্য, সন্দেশখালি এলাকাটি বেশিরভাগ আদিবাসী ও তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত। বৃহস্পতিবার তফসিলি কমিটির চেয়্যারম্যান অরুণ হালদারের নেতৃত্বে সন্দেশখালি যাবেন। খতিয়ে দেখবেন সন্দেশখালির পরিস্থিতি। এমত অবস্থায় বুধবার সন্দেশখালির অভিযোগকারী মহিলাদের নিয়ে বেলাগাম মন্তব্য করলেন বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী।
বুধবার তিনি বলেন, ‘‘একটা তফসিলি-আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষকে তাঁদের দৈহিক গঠন এবং দেহের রং দিয়ে বোঝা যায়। ... ক্যামেরার সামনে যে সব মহিলা এসেছেন, তাঁরা সব ধবধবে ফর্সা। তাহলে কি তাঁরা তফসিলি জনজাতি? আদিবাসী জনগোষ্ঠী?’’
নারায়ণের দাবি, ‘‘আমরা এটা দলগত ভাবে খোঁজখবর করছি। দরকার হলে পুলিশকেও দেব। যে মুখগুলি সামনে এসেছে, তাঁরা সিপিএমের মহিলা সংগঠনের সদস্য, আশাকর্মী, আইসিডিএস কর্মী। তাঁদের সামনে এনে একটা নাটক তৈরি করা হচ্ছে। যে বাচ্চাটাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখাচ্ছে, তাকে স্ক্রিপ্ট পড়িয়ে আনা হয়েছে। ওখানে জনসভা করার সুযোগ পেলে মানুষের সামনে এগুলি তুলে ধরব।’’
সন্দেশখালিতে মহিলাদের করা অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে বিধায়কের দাবি, ‘‘ঘটনা ঘটেনি, সে কথা একবারও বলছি না। কিন্তু যা ঘটেছে, তাকে আরও বড় করে কিছু চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যের মাধ্যমে সারা বাংলায় কৃত্রিম অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করতে চাইছে।’’
পরে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নারায়ণ বলেন, ‘‘আমি বলতে চেয়েছি, সন্দেশখালিতে এক মহিলাকে রাজ্যপালের সঙ্গে হিন্দিতে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল। তাঁকেই আবার সুকান্ত মজুমদারের ধর্না মঞ্চের কাছে দেখা গিয়েছে। তিনি বোরখা পরেছিলেন। আর এক মহিলা টিভিতে বসেছিলেন। ওই দুই মহিলাকে এলাকার মানুষ শনাক্ত করতে পারছেন না। সন্দেশখালির মহিলারা তো দূরের কথা, পুরুষেরাও হিন্দিতে কথা বলতে পারেন না। তা হলে ওই দুই মহিলা কি আদৌ সন্দেশখালির?’’
আর নারায়ণের এই মন্তব্যের পর তাঁকে নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে বিরোধী শিবিরে। এই প্রসঙ্গে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মতে, ‘‘আদিবাসী বা মুসলিমদের এঁরা কি পোশাক দিয়ে চেনেন! আসলে বিজেপি আর তৃণমূল একই পাঠশালায় পড়েছে।’’
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘জাতীয় তফসিলি জাতি ও জনজাতি কমিশনের কাছে আবেদন জানাব, এই ধরনের মন্তব্যের জন্য ওঁকে গ্রেফতার করা উচিত। সন্দেশখালিতে কুকর্ম ধরা পড়ে গিয়েছে। তারপরে রুচিহীন কথা বলছেন।’’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন