'মমতার সরকার, আদিবাসীদের আর নেই দরকার' - দেউচা পাঁচামী খনি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ

রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে টেরেসা সোরেন বলেন, "আজ আদিবাসীদের জন্য দরদ উথলে পড়ছে সরকারের! আমরা আদিবাসী, এই জমি আমাদের, এই জঙ্গলও আমাদের। কোনো পরিস্থিতিতেই এই জমি-জঙ্গল ছেড়ে দেব না আমরা।"
দেউচা পাঁচামী খনি বাতিলের দাবিতে আদিবাসীদের বিক্ষোভ
দেউচা পাঁচামী খনি বাতিলের দাবিতে আদিবাসীদের বিক্ষোভ
Published on

‘আমার জঙ্গল, আমার ক্ষেত ছাড়বো না। কয়লা খনি হতে দেব না।' এই স্লোগান তুলে সোমবার সিউড়ির রাজপথ কাঁপালেন কয়েকশ আদিবাসী নারী-পুরুষ। দেউচা-পাঁচামীতে রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত কয়লা খনি প্রকল্প বাতিলের দাবিতে জেলা শাসকের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন তাঁরা।

দেউচা-পাঁচামী কয়লা খনি বাতিলের দাবিতে গত আট মাস ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন স্থানীয় ৩৬ টি গ্রামের আদিবাসীরা। গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে বারোমেসিয়ার ডাঙালে রিলে অনশন করছেন আন্দোলনকারীরা। এবার শহরে এসে বিক্ষোভ দেখিয়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য জেলা শাসকের দপ্তর কার্যত স্তব্ধ করে দিলেন আদিবাসীরা।

সোমবার দুপুরে যখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো, মানুষ ছুটছেন এক চিলতে ছাউনির খোঁজে, প্রায় ২০ কিলোমিটার হেঁটে আসা হাজারো আদিবাসী মহিলা, পুরুষ, কিশোর তখন জেলা শাসকের দপ্তরের সামনে আওয়াজ তুলছেন। তাঁদের বিক্ষোভ থেকে স্লোগান উঠছে, 'মমতা দূর হঠো', 'মমতার সরকার, আদিবাসীদের আর নেই দরকার'।

আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় আদিবাসী নেতা টেরেসা সোরেন। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, "আজ আদিবাসীদের কথা খুব মনে পড়ছে সরকারের! আজ আদিবাসীদের জন্য দরদ উথলে পড়ছে! আমরা আদিবাসী, এই জমি আমাদের, এই জঙ্গলও আমাদের। কোনো পরিস্থিতিতেই এই জমি-জঙ্গল ছেড়ে দেব না আমরা।"

এক আন্দোলনকারী মহিলা বলেন, "পাহাড়ের কেউ কয়লা খনি চায় না। প্রতিবাদ করায় পুলিশ দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে আমাদের। আমরা এই লড়াইয়ের শেষ দেখে ছাড়বো।"

আন্দোলনকারীরা জানিয়ে দিয়েছেন যতদিন না এই প্রকল্প বাতিল করা হচ্ছে ততদিন গণঅনশন চালিয়ে যাবে তাঁরা। জেলাশাসকের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে স্মারকলিপি জমা দিয়ে আন্দোলনের অপর এক নেতা গণেশ কিস্কু বলেছেন, "আমাদের মূল দাবি অবিলম্বে এই খোলা মুখ কয়লা খনি প্রকল্প বাতিল করতে হবে। ২১ জুলাই তৃণমূলের অনুষ্ঠান থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, দেউচা পাঁচামীতে কয়লা খনি শুরু হয়ে গেছে। অথচ এলাকার ৭০-৭৫ শতাংশ মানুষ খনি চান না। কাদের অনুমতি নিয়ে এই খনির কাজ শুরু হলো তাহলে?"

আদিবাসীদের মিছিল
আদিবাসীদের মিছিল

আদিবাসীদের এই বিক্ষোভ প্রসঙ্গে বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় জানিয়েছেন, "আদিবাসীদের দাবি-দাওয়া যথাযোগ্য জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হবে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলেই খনির কাজ শুরু হয়েছে।"

এদিকে, দেউচা-পাঁচামীর প্রস্তাবিত কয়লা খনি প্রকল্পের সমীক্ষার কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ। সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, 'আটটি পর্যায়ের সমীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। তৃতীয় পর্যায়ের সমীক্ষা হয়েছে মাত্র। এভাবে প্রাথমিক কিছু সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে মানুষকে অন্ধকারে রেখে অবৈজ্ঞানিক ভাবে এক বিশাল লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রশাসনিক কাজ শুরু হয়েছে, চলছে সরকারী নানা ঘোষণা। এতে শুধু বিভ্রান্তি তৈরী হচ্ছে তা নয়, এটি বিজ্ঞান বিরোধী এক চরম নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী পদক্ষেপ। এই চরম অবৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ বন্ধ হোক।'

পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের এক প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, 'এখনও পর্যন্ত ভূ-বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষণ থেকে যা জানা গেছে, তা থেকে এটা সুস্পষ্ট যে ব্রাক্ষণী-বীরভূম অঞ্চলে অনেকগুলি আপাত নিষ্কিয় চ্যুতি (Fault) বা ফাটল রয়েছে, যা ভূপৃষ্ঠের নিচে বিভিন্ন গভীরতা পর্যন্ত বিস্তৃত। খনন কাজের প্রয়োজনে বিস্ফোরক ব্যবহারের ফলে ঐ চ্যুতিগুলি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে এবং ঐ এলাকা ভূকম্পন প্রবণ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in