প্রতি মুহূর্তে ফোনে হুমকি, ধর্ষণ- এই সমাজে এমন নৃশংস হিংস্রতা আর আছে কি? প্রশাসনের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন তুহিনা খাতুনের দুই বোন ঝর্ণা ও কুহেলি বিবি। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন তাঁরা। আমার বোন তখনও ওড়না গলায় জড়িয়ে লাশ হয়ে ঝুলছে ঘরে। আর বাদশার গুন্ডারা আমাদের দুই বোনকে চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে বাইরে বের করে এনে মারধর করছে। তারপর ওই ছবি দেখিয়ে বলেছিল তোদের অবস্থাও ওরকমই হবে।
মৃত তুহিনার পরিবার জানিয়েছে, বাড়ির সামনে যে তিন বোনের ছবি আঁকা হয়েছে, তা দেখিয়ে দুষ্কৃতীরা বলছে, একটা লাশ হয়েছে। আরই দুটো লাশ পড়লে যদি তুহিনার পরিবার ঠান্ডা হয়। ধর্ষণের ভয় দেখিয়ে কাউন্সিলর আমার বোনকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করল। তাই শপথ নিয়েছি মরে গেলেও বাদশার শেষ দেখে ছাড়ব। কুহেলি বিবি বললেন, 'আমাদের দুই বোনকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। ওর শ্লীলতাহানি হয়েছিল। লজ্জায় ঘৃণায় তাই আত্মঘাতী হয়েছে।
সোমবার সকালে দেখা যায়, পশ্চিম পাড়ায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে তৃণমূলে দুষ্কৃতীরা তুহিনা খাতুনের বাড়ির দিকে নজরদারি চালাচ্ছে। মসজিদের পাশের গলি দিয়ে কিছুটা এগোলেই তুহিনার বাড়ি। সেই ছবি এখনই বিদ্যমান। আর বাড়ির ভেতরে দুই বোনের স্পষ্ট কথা, যারা আমাদের বিচার পাইয়ে দেবে তাদের সঙ্গে ইনসাফ পেতে লড়াইয়ে থাকবে।
অভিযুক্তরা অবশ্য ওই তিন বোনের ওপরেই হুমকি দিচ্ছে, তা নয়। তাঁরা জানালেন, পরিবারের এক মেয়ে জেসমিনকে ভয় দেখিয়েছে কাউন্সিলরের লোকজন। অভিযুক্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা কি লুটের ভোটে জিতে আসা ওই কাউন্সিলর কে মেনে নিতে পারব? অভিযুক্ত হুমকি দিয়েছিল, পুরভোটের ফলপ্রকাশের দিনে ওই ছবিকে বাস্তবায়িত করবে তারা। বাস্তবে সেটাই দেখা গেল।
কুহেলি জানালেন, যেদিন ভোটে জিতল বাদশা, সেদিনটা ছিল বিভীষিকাময়। বিজয় মিছিল হল। বাজনা বাজিয়ে গান নাচ হল। আমাদের ঘরে রং ছুড়ল। চুলের মুঠি ধরে ঘর থেকে বের করে মারধর করল। বোনও ওদের হাত থেকে রক্ষা পেল না। ওর শ্লীলতাহানি হল। ঘরে ঢুকে গেল তুহিনা। আর বেরোল না। বেরোলো লাশ হয়ে। তারপর বাদশার লোকজন আমাদের ঘর থেকে বের করে দুই বোনকে মারতে শুরু করল। দুই বোনের অভিযোগ বিধায়কের বিরুদ্ধেও। দুমাস ধরে ঘরবন্দি ছিল তুহিনা।
কিন্তু এত বড় ঘটনার পরও একবারও ঘটনাস্থলে আসেননি বিধায়ক। তাঁর কাছে জবাব চাইছেন ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন