একবিংশ শতাব্দীতে মধ্যযুগীয় বর্বরতা! ডাইনি অপবাদে দুই আদিবাসী মহিলাকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠলো গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে। পাশের সেচ নালা থেকে ওই দুই মহিলার দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের ময়ূরেশ্বর থানার হরিসরা গ্রামে। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় ছ'জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মৃত ওই দুই মহিলার নাম লোদগি কিস্কু এবং ডলি সোরেন। অভিযোগ, শুক্রবার রাতে ওই মহিলাদের বাড়ির সামনে জড়ো হন গ্রামবাসীরা। এরপর মহিলাদের বাড়ি থেকে টেনে বের করে বাঁধা হয় খুঁটির সঙ্গে। তার পর গ্রামের সকলে মিলে তাঁদের লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন।
ঘটনার কথা জানাজানি হলে গ্রামে আসে ময়ূরেশ্বর থানার পুলিশ। ওই দুই মহিলার দেহ সংলগ্ন সেচ নালা থেকে উদ্ধার করা হয়। দেহ দু’টি রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই ঘটনার পর গ্রামে আতঙ্ক রয়েছে। টহল দিচ্ছে পুলিশ।
এই ঘটনায় মৃত এক মহিলার কন্যা জবা কিস্কু বলেন, ‘‘আমার মাকে যারা নিয়ে গিয়েছেন, যারা মেরেছেন, আমি তাদের শাস্তি চাই। আমাদের ভয় দেখানো হচ্ছে। বলছে, ‘থানায় যাস না। না হলে পরে বুঝবি।’ আমাদের বিষয়টি চেপে যেতে বলা হচ্ছে। কী করে চেপে যাব? আমার তো মা! ওদের সঙ্গে এমন হলে চেপে যেত? আমরা দুই বোন, দুই ভাই। আমরা ওদের শাস্তি চাই।’’
মৃতার অন্য মেয়ে রানি কিস্কু বলেন, ‘‘আমাদের মাকে যারা এ ভাবে কষ্ট দিয়ে মারল, আমরা তাদের ফাঁসি চাই। বাড়ি থেকে মাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। আমার ভাইরা বাড়িতে ছিল না। এখন ওরা যাতে আমাদের ক্ষতি করতে না পারে, সেই নিরাপত্তা চাইছি।’’
এই ঘটনায় ধৃত লক্ষীরামের স্ত্রী সুরমিলা মাড্ডি বলেন, ‘‘ওরা তুকতাক করত। আমার ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিল। বলছিল, ‘তোর ছেলেকে খাব, তোর স্বামীকে খাব।’ আমার ছেলে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। আমরা গিয়ে দুই চড় মেরেছি। গ্রামের সবাই মিলে মেরেছে।’’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন