বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসের মধ্যে ‘বিতর্কিত’ ১৩ ডেসিমেল জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদ নোটিশ পাঠালো বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বুধবার, বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতোর স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়েছে, ‘আগামী ৬ মে, অর্থাৎ ১৫ দিনের মধ্যে যদি বিতর্কিত জমি খালি না করা হয়, তাহলে প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করতে বাধ্য হবে কর্তৃপক্ষ।’ এই নোটিশ জারি করা হয়েছে, পাবলিক প্রেমিসেস (উচ্ছেদ ও অননুমোদিত দখলকারী) আইন, ১৯৭১-এর অধীনে।
প্রসঙ্গত, গত মার্চ মাসেই অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদ নোটিশ পাঠিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নোটিশে ১৩ ডেসিমেল জমি খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই নোটিশের আইনি যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরাসরি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে চিঠিও লিখেছিলেন অমর্ত্য সেন। আর তারই জবাবে বিতর্কিত জমি ছাড়তে আবার নোটিশ দিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন অমর্ত্য সেন। তিনি জানান, ‘প্রতীচী’–র জমির আইনশৃঙ্খলা এবং শান্তিরক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক।
বীরভূমের বোলপুরে অমর্ত্য সেনের ‘প্রতীচি’ নামের বাড়িটি যে জমিতে রয়েছে, তা নিয়েই বিতর্ক চলছে। জেলা প্রশাসনের তরফে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, অমর্ত্য সেনের নামে ১.৩৮ একর জমি মিউটেশন করা হয়েছে। যদিও বিশ্বভারতীর অভিযোগ, অমর্ত্য সেন তাদের ১৩ ডেসিমেল জমি দখল করে রেখেছেন। সেই জমিই খালি করার জন্য একাধিকবার নোটিস পাঠানো হয়েছে নোবেলজয়ীকে।
অন্যদিকে, জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে অমর্ত্য সেন দাবি করেছেন যে, আসল ১.২৫ একর জমিটি উপহার দেওয়া হয়েছিল তাঁর ঠাকুরদা প্রয়াত ক্ষিতিমোহন সেনকে, যিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য ছিলেন।
পরে, অমর্ত্য সেনের বাবা প্রয়াত আশুতোষ সেন, যিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন, তিনি বাকি ১৩ ডেসিমেল জমি কিনেছিলেন। আর, এই ১৩ ডেসিমেল জমিই এখন বিবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যেকোন উচ্ছেদের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করতে সম্প্রতি অমর্ত্য সেনের কাছে সম্পূর্ণ ১.৩৮ একর জমির ইজারা অধিকার হস্তান্তর করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
সম্প্রতি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদের 'হুঁশিয়ারি' দিয়ে একটি নোটিশ 'প্রতীচী' বাড়িতে আটকে দিয়েছিল। যাতে বলা হয়েছিল, ১৯ এপ্রিল দখলীকৃত জমি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। সেই মত ১৭ এপ্রিল বিদেশ থেকে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দিয়ে অমর্ত্য সেন জানান, 'ইজারার মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ জমির দাবি করতে পারে না৷ এমন কী, স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের সিদ্ধান্তও উল্লেখ করা হয়েছিল চিঠিতে৷"
যদিও এদিন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ফের একটি নোটিশ জারি করেছে। যে নোটিশে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, 'নোটিশ জারি হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে৷ অর্থাৎ, ৬ মে-এর মধ্যে জমি খালি করতে হবে। না হলে ১৯৭১ সালের কেন্দ্রীয় ভূমি আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ করা হবে৷ প্রয়োজনে বল প্রয়োগ করা হবে।"
এক কথায়, নোবেলজয়ী ভারতরত্ন অমর্ত্য সেনকে ১৫ দিনের মধ্যে উচ্ছেদের চূড়ান্ত নোটিশ দিল বিশ্বভারতীর যুগ্ম কর্মসচিব ও সম্পত্তি আধিকারিক৷ যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন