পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য রাজ্যের ক্লাব সংগঠনগুলিকে আর কোনও অনুদান দেওয়া হবে না। এবার এমনই সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে তৃণমূল সরকার। গত কয়েকবছর ধরে সরকারের তরফে রাজ্যের ক্লাবগুলি যে অনুদান পেয়েছে, বেশিরভাগ ক্লাবই সেই টাকার কোনও হিসেব জমা দেয়নি সরকারকে। আর সেই কারণেই এবারে ওই খাতে রাজ্যের ক্লাব সংগঠনগুলিকে অনুদান দেওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।
২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার সিংহাসনে বসার পরের বছরই, অর্থাৎ ২০১২ সালে রাজ্যের ক্লাব সংগঠনগুলিকে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। প্রথম বছর এককালীন ২ লক্ষ টাকা এবং তারপর ৩ বছর ধরে প্রতিবছর ১ লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল সরকার। প্রথম বছর এই খাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল মোট ১৫ কোটি টাকা। ওই বছর অনুদান পেয়েছিল বাছাই করা ৭৮১টি ক্লাব। পরের বছর ক্লাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০০। ফলে বরাদ্দ অর্থের পরিমাণও অতিরিক্ত ৪০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পায়। তবে ২০২০ সালে কোভিডকালে এই অনুদান সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়।
বিরোধীরা অবশ্য প্রথম থেকেই এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে এসেছে। ২০১২ সালে প্রকল্পের জন্মলগ্নে তৎকালীন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এবং ২০১৬ সালের পর বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, সকলেই এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের ক্লাবগুলিকে রাজনীতিকরণের অভিযোগ করেন। এমনকি বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও একইভাবে এই অনুদানের চরম বিরোধিতা করেছেন। তার দাবি, অনুদান পাওয়ার জন্য ক্লাবগুলির নাম তালিকাভুক্ত করার দায়িত্ব বর্তায় স্থানীয় বিধায়কদের উপরে। আর সেখানেই অনুদান দেওয়ার নাম করে রাজ্যের ক্লাবগুলির রাজনৈতিক পরিচিতি গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়।
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার গলাতেও এই সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কটাক্ষের সুর শোনা যায়। এই প্রসঙ্গে তমলুকের এক পুজো কমিটির করা মামলার শুনানিতে বিচারপতি সিনহা জানান, “আমি এমন অনেক মামলা শুনেছি যেখানে মানুষ বেতন পাচ্ছেন না, চাকরি পাচ্ছেন না, পেনশন পাচ্ছেন না। অথচ পুজো কমিটিগুলিকে প্রতিবছর টাকা দেওয়া হচ্ছে।” তবে আদালতের এই বক্তব্য সরকারের অনুদান বন্ধের সিদ্ধান্তের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পর্কিত নয় বলেই জানা গেছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন