নির্বাচনের সন্ত্রাসে ভোট শুরুর প্রথম ৭ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্যে প্রাণ হারালেন ১২ জন। আর সংখ্যাটা একেবারেই স্থায়ী নয়। প্রতি মুহূর্তে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর পরিসংখ্যান। বর্ধমান, কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা-সহ রাজ্যের একাধিক জেলায় মুড়ি-মুড়কির মতো পড়ছে ‘লাশ’।
শনিবার ভোর থেকে এই খবর লেখা পর্যন্ত ১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নদীয়ার চাপড়ায় কংগ্রেসের সঙ্গে সংঘর্ষে খুন হয়েছেন এক তৃণমূল কর্মী। আবার মুর্শিদাবাদের নওদায় উদ্ধার হয়েছে কংগ্রেস কর্মীর দেহ। এই মুর্শিদাবাদেরই লালগোলায় বাম কর্মীকে খুন করা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাসন্তীতে তৃণমূল কর্মী নিহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। অন্যদিকে, কোচবিহারের ১ নং ব্লকের ফলিমারিতে বিজেপি-এর পোলিং এজেন্টকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। দিনহাটায় এক বিজেপি কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এক্ষেত্রেও অভিযোগ শাসকদলের বিরুদ্ধে। কোচবিহারের গীতালদহ অঞ্চলে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় চিরঞ্জিত কারজি নামে এক যুবকের। কাটোয়ায় এক তৃণমূল কর্মীকে বুথের বাইরে পিটিয়ে মারা হয়েছে। এক্ষেত্রে অভিযোগ সিপিআইএমের বিরুদ্ধে। আউশগ্রামে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এক CPIM কর্মীকে পিটিয়ে মেরেছে। এছাড়াও শুক্রবার রাতে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গায় আরও তিনজনের খুন হয়েছে, এরা প্রত্যেকেই শাসকদলের কর্মী।
বারাসতের কদম্বগাছিতে ৪১ ও ৪২ নং বুথের নির্দল প্রার্থীর সমর্থক আব্দুল্লাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুনেরও অভিযোগ উঠেছে যদিও জেলার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, আব্দুল্লা এখনও জীবিত আছেন এবং বারাসত হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। আরও একাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
এদিন সকাল থেকেই বেলাগাম সন্ত্রাস ছড়িয়েছে কোচবিহার, বীরভূম, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বর্ধমান-সহ প্রায় সব জেলাতেই। অবাধে চলছে ভোট লুঠ ও ছাপ্পা ভোট। পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, পোলিং অফিসার-সহ ভোটকর্মীদের মারধর চলছে, পড়ছে দেদার বোমা, চলছে গুলি। নিরাপত্তা শিকেয় তুলে কার্যত দর্শক হয়েই দাঁড়িয়ে হাতে গোনা কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ।
ভোট ঘোষণার পর থেকে গত একমাসে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে নির্বাচনী সন্ত্রাসে প্রাণ হারিয়েছেন মোট ৩১ জন। কিন্তু সংখ্যাটা কি এখানেই থামবে? ভোটের দিন সকাল থেকে রাজ্য জুড়ে যে বেলাগাম রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ছবি উঠে আসছে, তাতে এই মৃত্যু-মিছিল কোথায় থামবে সেই প্রশ্নের উত্তর কেউই দিতে পারছেন না। রাজ্যের বিরোধী দলগুলি ইতিমধ্যেই শাসকদলের বিরুদ্ধে বেনজির আক্রমণ শানিয়েছে। অন্যদিকে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে ‘বিক্ষিপ্ত ছোট-খাটো ঘটনা’ বলে সাফাই দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, “ভোট নয়, মৃত্যুর খেলা চলছে। গোটা রাজ্যে হিংসার আগুন জলে উঠেছে।” অন্যদিকে, শাসকদলের তরফে তৃণমূল মুখপাত্র জানিয়েছেন, “সারা রাজ্যে উৎসবের মেজাজে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। বিক্ষিপ্ত কিছু ছোট-খাটো ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু সেগুলি বাদে বাকি ভোট যথেষ্ট শান্তিপূর্ণভাবেই চলছে।” কিন্তু এই নজিরবিহীন মৃত্যুমিছিলের পরেও শাসকদল রাজ্যের ঠিক কোন জায়গায় শান্তির ছবি দেখতে পাচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিরোধী মহলে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন