কোচবিহার। গত ৮ জুন নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বারবার সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছে উত্তরবঙ্গের এই জেলা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামানিকের ঘরের মাঠ হিসেবে পরিচিত এই জেলায়, বিশেষ করে দিনহাটা থেকে শুরু করে আসাম সীমান্তবর্তী রাজবংশী সম্প্রদায় প্রভাবিত এলাকায় বিজেপির ‘ফার্স্টবয়’ হওয়ার কথা ছিল। বিভিন্ন ওপিনিয়ন পোল ও বুথ ফেরত সমীক্ষাও সেই দিকেই ইঙ্গিত করেছিল। কিন্তু সব সম্ভাবনা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে গোটা কোচবিহারে ভোটের ফলাফলে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল।
কোচবিহারের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরেই জয় ছিনিয়ে নিল তৃণমূল। বুধবার গণনার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, কোচবিহারের ১২৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০১টিতেই আধিপত্য বজায় রেখেছে তৃণমূল। বিজেপির দখলে গেছে ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ৫টি পেয়েছে অন্যান্যরা। আবার ১২টি পঞ্চায়েত সমিতির প্রত্যেকটিতেই নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে রাজ্যের শাসকদল। অন্যদিকে, ৩৪টি জেলা পরিষদের মাত্র ২টি গিয়েছে বিজেপির দখলে, বাকি ৩২টিতেই জয় পেয়েছে জোড়াফুল শিবির।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ৩৩টি জেলা পরিষদের মধ্যে ৩২টিতেই জিতেছিল তৃণমূল। বাকি একটিতে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল নির্দলেরা। বিজেপি সেবার একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সেই হিসেব অনেকটাই পাল্টে গিয়েছিল। ’১৯-এর লোকসভায় বিজেপি ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল এবং ’২১-এর বিধানসভায় কোচবিহারের ৯টি আসনের মধ্যে ৭টিতেই জয় লাভ করেছিল পদ্ম শিবির। তাই এবারের পঞ্চায়েতেও স্বাভাবিকভাবেই বিজেপির বেশ ভালো ফলাফলের আশা করেছিল রাজনৈতিক মহল।
অন্যদিকে, নিয়োগ দুর্নীতি ও কামতাপুর আন্দোলন এবারে কোচবিহারের গ্রাম দখলে তৃণমূলের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কথা ছিল। কারণ একদিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন পরেশ অধিকারী। অন্যদিকে কামতাপুর আন্দোলনের অন্যতম প্রধান রাজবংশী নেতা অনন্ত রায় মহারাজের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক বেশ ভালো। এমনকি বাংলা ভাগের ডাক দেওয়া অনন্ত রায়কে মঙ্গলবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের গণনার দিনই রাজ্যসভার প্রার্থী করেছে বিজেপি। যদিও ‘গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন’-এর আরেক রাজবংশী নেতা বংশীবদন বর্মন তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় কোচবিহারে শাসকদলও বেশ কিছুটা শক্তি সঞ্চয় করেছে।
প্রসঙ্গত, কোচবিহার জেলায় রাজবংশী ভোট প্রায় ৩৪ শতাংশ। তাই গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন-এর রাজবংশী নেতাদের সমর্থন পেতে তৃণমূল ও বিজেপি দুই দলই জোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু অনন্ত রায় মহারাজের সমর্থন পেয়েও কোচবিহারে রাজবংশী প্রভাবিত এলাকায় বিশেষ একটা সুবিধা করতে পারল না গেরুয়া শিবির।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন