দোরগোড়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচন। ইতিমধ্যেই জোরকদমে নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছে তৃণমূল, বিজেপি, বাম-কং ও আইএসএফ। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও জেলায় জেলায় সভা-সমাবেশে মনোনিবেশ করেছেন। কিন্তু মনোনয়ন পর্বে রাজ্য জুড়ে হিংসা ও অশান্তির আবহ নিয়ে এই মুহূর্তে খানিক ব্যাকফুটেই রয়েছে রাজ্যের শাসকদল। এমনকি কোচবিহার, মুর্শিদাবাদের মতো কয়েকটি জেলায় দাপট বজায় রাখতে তৃণমূলকে এবার বেশ বেগ পেতে হবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সদ্য প্রকাশিত বেসরকারী নির্বাচনী সংস্থা সি-ভোটারের জনমত সমীক্ষাতেও সেই সম্ভাবনার কথা আরও বেশি করে স্পষ্ট হয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী জেলায় জেলায় এবার কার পাল্লা ভারী থাকবে?
পশ্চিমবঙ্গের চিরাচরিত বেকারত্ব নয়, জনমত সমীক্ষা বলছে এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে নিয়োগ দুর্নীতি। ২০টি জেলার মানুষের মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষের অন্তত তাই মত। কিন্তু এই সমস্যা প্রতিটি জেলার ভোটবাক্সকে কীভাবে প্রভাবিত করবে?
সবার আগে আসা যাক বীরভূমের কথায়। তৃণমূলের বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবার গরুপাচার মামলায় তিহার জেলে বন্দী। ব্যালটবাক্সে এর কতটা প্রভাব পড়তে পারে? সি-ভোটারের সমীক্ষা বলছে, বীরভূম জেলা পরিষদের ৫২টি আসনের মধ্যে ৩৩ থেকে ৪৩টি আসন নিজেদের দখলে রাখতে পারবে ঘাসফুল শিবির। বিজেপির ঝুলিতে থাকবে ৮ থেকে ১৪টি আসন। অন্যদিকে, বাম-কং জোট পেতে পারে মাত্র ৪টি আসন। এর আগে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেখানে অনুব্রত মণ্ডলের জাদুবলে ৫২টি আসনের সবকটিই নিজেদের দখলে রেখেছিল তৃণমূল।
অন্যদিকে, বীরভূমে সেভাবে সুবিধা করতে না পারলেও তার পার্শ্ববর্তী জেলা মুর্শিদাবাদে খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে বাম-কং জোট। একসময়ের কংগ্রেস গড়ের ৭৮টি আসনের মধ্যে ৩৩ থেকে ৪৩টি আসন জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী বাম-কং জোটের পকেটে যেতে পারে। যদিও তৃণমূলও খুব একটা পিছিয়ে থাকবে না। ৩০ থেকে ৪০টি আসনে জয় পেতে পারেন জোড়াফুলের প্রার্থীরা। তবে মাত্র ২ থেকে ৬টি আসন পেয়ে আত্মতুষ্টি করতে হতে পারে বিজেপির।
অন্যদিকে, আসন্ন গ্রাম বাংলা দখলের লড়াইয়ে রাজ্যের শাসকদলের জন্য মুখ্য ভূমিকা নিতে পারে দক্ষিণ ২৪ পরগণা। মনোনয়ন পর্বের অশান্তিতে বারবার সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছে দক্ষিণ ২৪ পরগণার ভাঙ্গর, ক্যানিং-সহ বহু এলাকা। তাছাড়া নির্বাচনের আগে এই একটি জেলার একটিমাত্র ব্লক থেকে ইতিমধ্যেই ২৭৪টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা। এইসব কিছু পেরিয়ে জনমত সমীক্ষার হিসেবে কী হতে পারে দক্ষিণ ২৪ পরগণার ফলাফল? জেলা পরিষদের ৮৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের ঝুলিতে যেতে পারে ৫৭ থেকে ৬৭টি আসন। এরপর দ্বিতীয় স্থানেই ভারতীয় জনতা পার্টির থাকার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। সমীক্ষার হিসেবে পদ্মের ঝুলিতে যেতে পারে ১৪ থেকে ২০টি আসন। ৩ থেকে ৭টি আসন নিয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বাম-কং-আইএসএফ জোট। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের হিসেবে আসনের এই ভাগাভাগি তৃণমূলের জন্য খুব একটা সুখকর হবে না। কারণ, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েতে দক্ষিণ ২৪ পরগণার ৮১টি আসনের সবকটি আসনই তৃণমূলের দখলে ছিল।
দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক উত্তরবঙ্গের ছবিটাও। যেখানে সবচেয়ে বড় বদল আসতে পারে কোচবিহার জেলায়। ২০১৮ সালে কোচবিহারের ৩৩টি আসনের মধ্যে ৩২টিতেই জয় পেলেও গত পাঁচ বছরে তৃণমূলকে পিছনে ফেলে দিয়ে কোচবিহারে তরতরিয়ে বেড়েছে বিজেপির দৌরাত্ম্য। জনমত সমীক্ষাতেও সেই প্রভাব স্পষ্ট। এবারে কোচবিহার জেলা পরিষদের ৩৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জিততে পারে ১৩ থেকে ১৯টি আসন। ১৫ থেকে ১৯টিতে জিতে কান ঘেঁষে বেড়িয়ে যেতে পারে পদ্মশিবির। বাম-কং জোট পেতে পারে একটিমাত্র আসনের সান্ত্বনা পুরস্কার।
পাশাপাশি, দক্ষিণ দিনাজপুরও মনোনয়ন পর্বের সন্ত্রাসের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়েছিল। যদিও ভোটবাক্সে তার প্রভাব পড়বে না বলেই সমীক্ষায় উঠে এসেছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের ২১টি আসনের মধ্যে শাসকদলের দখলে যেতে পারে ১১ থেকে ১৫টি আসন। বিঝেপির ঝুলিতে যেতে পারে ৫ থেকে ৯টি আসন। ২টি আসন পেতে পারে বাম-কং।
এছাড়াও পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলী, জলপাইগুড়িতেও সি-ভোটারের সমীক্ষার ছবিটা অনেকটা একইরকম। প্রত্যেকটি জেলাতেই তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও ফারাকটা খুবই অল্প। বিজেপির সঙ্গে শাসকদলের লড়াইটা এবারের পঞ্চায়েতে আরও জোরদার হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। আর তার সৌজন্যে তৃণমূল সরকারের নিয়োগ দুর্নীতি ও অন্যান্য একাধিক জলন্ত ইস্যু। তবে জনমত সমীক্ষার সঙ্গে ভোটবাক্সের ফলাফলের আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। বাংলার মানুষ ব্যালট বাক্সে যে দলকে সমর্থন দেবেন তাঁরাই গ্রাম বাংলার দখল নেবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন