রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আর মাত্র বাকি এক সপ্তাহ। এরই মাঝে বেসরকারি সংস্থা এবিপি-সিভোটারের সদ্য প্রকাশিত জনমত সমীক্ষা বলছে, এবারের গ্রাম বাংলা দখল খুব একটা সহজ হবে না শাসকদল তৃণমূলের কাছে।
প্রধানত, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে প্রধান এক্স-ফ্যাক্টর হিসেবে বারবার উঠে এসেছে বেকারত্বের সমস্যা। কিন্তু এবারে রাজ্যের শাসকদলের একচেটিয়া জয়ের মধ্যে পথের কাঁটা হয়ে উঠে আসতে পারে আরও বেশ কয়েকটি ইস্যু, যার মধ্যে প্রধান হল নিয়োগ দুর্নীতি। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্যই উঠে এসেছে সি-ভোটারের সমীক্ষায়। যেখানে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ মনে করছেন নির্বাচনে প্রধান ইস্যু হতে পারে সাম্প্রতিককালের নিয়োগ দুর্নীতি। আবার ২১ শতাংশ মানুষের ধারণা দুর্নীতি নয়, এবারেও অন্যতম প্রধান ইস্যু হবে রাজ্যে বেকারত্ব বৃদ্ধি। পাশাপাশি, ৪০ শতাংশ মানুষ মনে করছে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা, সাধারণ নাগরিকদের রোজকার সমস্যা ও অন্যান্য ইস্যু এবারের গ্রাম বাংলার ভোটের ছবি বদলে দিতে পারে। এমনকি, মনোনয়ন পর্বে রাজ্যের হিংসার পরিস্থিতিও নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে।
আবার জনমত সমীক্ষায় রাজ্যের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তর জেলা পরিষদের কাজ নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে। সমীক্ষায় প্রায় ৪৯ শতাংশ মানুষ জেলা পরিষদের কাজ নিয়ে অখুশি এবং তারা অবিলম্বে সেখানে ক্ষমতার বদল চান বলে জানিয়েছেন। আবার, ২৮ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন যে জেলা পরিষদের কাজ নিয়ে অখুশি হলেও এখুনি সেখানে কোনওরকম বদল দেখতে চান না। পাশাপাশি, ১৬ শতাংশ মানুষ বাংলার জেলা পরিষদের কাজ নিয়ে যথেষ্ট আনন্দিত এবং মাত্র ৭ শতাংশ মানুষ এই নিয়ে কোনওরকম মন্তব্য করতে চাননি।
অন্যদিকে, এবারের গ্রাম বাংলা দখলের লড়াইয়ে তৃণমূলের জন্য সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কও ফারাক গড়তে পারে বলে মত মানুষের। সমীক্ষা অনুযায়ী, ৫৯ শতাংশ মানুষের মতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসকদল তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে নামতে পারে মারাত্মক ধস। যদিও ২৮ শতাংশ মানুষ এই সম্ভাবনাকে ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন। আবার তৃণমূল সরকারের কাজে মানুষ কতটা সন্তুষ্ট, সেই নিয়েও সমীক্ষায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ বিগত ১০ বছরে তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন পঞ্চায়েতের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি, ৩৫ শতাংশ মানুষ শাসকদলের কাজে যথেষ্ট খুশি এবং ১৬ শতাংশ মানুষ তৃণমূল আমলকে সাধারণ বলেই জানিয়েছেন।
সব মিলিয়ে সি-ভোটারের জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী, নিয়োগ দুর্নীতি ও অন্যান্য ইস্যুর জেরে এবারের ভোটে শাসকদল তৃণমূলকে ‘সহজ জয়’ পেতে বেশ বেগ পেতে হতে পারে। অন্যদিকে, বিজেপি ও বাম-কং জোট গ্রাম বাংলার পরীক্ষায় বেশ ভালো ফলাফল করতে পারে বলেই সমীক্ষায় জানা গিয়েছে। তবে জনমত সমীক্ষা ও সত্যিকারের ব্যালট বাক্সের লড়াইয়ে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। জনমত সমীক্ষাই নির্বাচনের শেষ কথা নয়। বাংলার মানুষ ব্যালট বাক্সে যে দলকে সমর্থন দেবেন তাঁরাই গ্রাম বাংলার দখল নেবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন