এ বার নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদের নোটিশ ধরালেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। রবিবারই অমর্ত্য সেনের শান্তিনিকতনের বাড়ির ঠিকানায় পৌঁছে গিয়েছে সেই চিঠি। চিঠিতে ২৪ মার্চের মধ্যে কেন তিনি বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিমেল জমি দখল করে রেখেছেন তার কারণ জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবং আগামী ২৯ মার্চ অধ্যাপক সেন অথবা তাঁর কোনও প্রতিনিধিকে তাঁর দাবির স্বপক্ষে প্রমাণ নিয়ে বিশ্বভারতীর সেন্ট্রাল অ্যাডমিশন বিল্ডিংয়ের কনফারেন্স হলে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নোটিশে পরিষ্কার বলা হয়েছে, উল্লিখিত তারিখে যদি অধ্যাপক সেন অথবা তাঁর অনুমোদিত প্রতিনিধি উপস্থিত না হন, তাহলে একপক্ষ শুনানি ধরে মামলার পথে যাবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, ১৯৪৩ সালের ২৭ অক্টোবর আশুতোষ সেনকে (অমর্ত্য সেনের বাবা) বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসের অন্তর্গত ১.২৫ একর জমি ইজারা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে অমর্ত্য সেন ১.৩৮ একর জমি দখল করছেন। অর্থাৎ ১৩ ডেসিমেল জমি অতিরিক্ত দখল করছেন সেন। সেনের পাল্টা দাবি, ওই জমির একটা অংশ বিশ্বভারতীর থেকে লিজ় নেওয়া, বাকি জমি তিনি কিনেছেন। এখন মিথ্যে কথা বলছে কর্তৃপক্ষ।
নোটিশে বলা হয়েছে, “১৩ ডেসিমেল জমি ফেরত না দিলে ১৯৭১ সালের উচ্ছেদ আইন অনুযায়ী সেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না কেন?” নোটিশে স্বাক্ষর রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসার এবং জয়েন্ট রেজিস্ট্রার অশোক মাহাতোর।
এই জমি নিয়ে গত দুই মাসে অধ্যাপক সেনকে আরও তিনটি চিঠি পাঠিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রথম চিঠিটি পাঠানো হয়েছিল ২৪ জানুয়ারী। যেখানে অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে জমি জবরদখলের অভিযোগ তুলেছিল বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর ২৭ জানুয়ারী পাঠানো চিঠিতে সেনের কাছ থেকে জমির নথি চাওয়া হয়, অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। এরপরের চিঠিটি পাঠানো হয়েছিল ৯ ফেব্রুয়ারি। যেখানে সেনের দেওয়া সময় মত আইনজীবীর উপস্থিতিতে জমি জরিপে রাজি হওয়ার কথা জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়।
এছাড়াও নানা সময়ে ‘জমি দখল’ নিয়ে নোবেলজয়ীকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করেছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তাঁর নোবেল পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে বাবা আশুতোষ সেনের পরিবর্তে জমির লিজ হোল্ডার হিসাবে নিজের নাম নথিভুক্ত করার জন্য আবেদন করেছিলেন অধ্যাপক সেন। বোলপুর ভূমি ও ভূমিসংস্কার দফতরে তার শুনানি ছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অমর্ত্য সেনের এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীরা। কিন্তু দীর্ঘ সওয়াল জবাবের পরেও তার মীমাংসা হয়নি। এরই মাঝে সেনকে শো-কজ নোটিশ পাঠালো বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও এই মুহূর্তে বিদেশে থাকা সেন এই নোটিশ নিয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন