করোনার রাজনীতি, রাজনীতি কোরোনা

গ্রাফিক্স - সুমিত্রা নন্দন
গ্রাফিক্স - সুমিত্রা নন্দন
Published on

রাজনীতি হল শক্তি সঞ্চয়ের হাতিয়ার। এই শক্তির সঙ্গে ক্ষমতার ধারণা প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। সেই সংযোগে ক্ষমতার রয়েছে একাধিক উৎস। আপনি জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ বলে রাম মন্দিরে কোনো অসুবিধা ছাড়াই ঢুকতে পারবেন। অথচ ব্রাহ্মণ না হয়ে দলিত হলেই সেই অনুমতি না হয়ে যাবে। এই ক্ষমতা আপনি অর্জন করেননি। কুল, গোত্র ও বর্ণের বিন্যাস-ক্রম, আপনার জন্য জন্মের আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। আপনার কাছে বিষয়টা আরোপিত।

ক্ষমতার দ্বিতীয় উৎস হতে পারে আইনি বৈধতা। সংবিধান বৈধতা দিয়েছে বলেই আপনি সংরক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন। সেটা ভুলুন্ঠিত হয়ে যাওয়ার অর্থ আপনাকে ক্ষমতাহীন করে তোলা। এই ক্ষমতা, যোগ্যতা প্রমাণের মধ্য দিয়েই আপনাকে অর্জন করতে হয়। পুলিশের বৈধ উর্দি গায়ে থাকলে তবেই আপনি আপনার ইচ্ছার মাত্রানুসারে আইনকে নিজের হাতে তুলে নিতে পারবেন। আপনার চেয়ারই হল আপনার ক্ষমতা।

আবার আপনি আপনার ব্যক্তিগুণেও মানুষের মাথা খেয়ে ছত্রধরের মতো ক্ষমতাধর হয়ে উঠতে পারেন। এই তৃতীয় উৎসে কাজ করে সন্মোহন। সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সম্পৃক্ত হয়েও আপনি এই ক্ষমতার বৈধতা আদায় করতে পারেন। সেই আকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে আপনি মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত হয়ে যেতে পারেন। এই উৎসে ক্ষমতা ইমেজ বিল্ডিং-এর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। পক্ষে প্রচার এই রাজনীতির প্রাথমিক উপাদান।

সামাজিক পরিসরে ক্ষমতা তার বৈধতায় কর্তৃত্বকে হাজির করে। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবন-রাজনীতিতে সেই বৈধতাকে বুঝে অথবা না বুঝেই স্বীকৃতি দিই, অথবা তাকে কখনও কখনও চ্যালেঞ্জ জানিয়ে থাকি। এই বৈধতা বিচারের সহজ মাপকাঠি হল রাজনীতির সমীকরণ। সেটা আমাদের হাতে থাকে। আমরা আজ সেটার ব্যবহারে পটু হয়েছি। যেমন ধরুন আপনি জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ হয়েও পুরীর মন্দিরে ঢুকতে বাধা পেলেন। আপনার আরোপিত ক্ষমতার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার, বা তাকে ভাঙ্গার শক্তি তখন রাজনীতি থেকে সিঞ্চিত হয়। প্রায় সেই আঙ্গিকেই একজন আমলা রাজনৈতিক কর্তৃত্বের সংলগ্ন হয়ে ‘কাট্মানি’ খান। আইনি বৈধতা তখন ভুলুন্ঠিত হবার সম্ভাবনা নিয়েও ক্ষমতায় কার্যকরী হয়। একইভাবে মিথ্যের ফানুস প্রচারে রাজনীতির ক্ষমতা দখল সহজভাবে করা গেলেও সেই দখলের বৈধতা দীর্ঘস্থায়ী করার কাজটা বেশ কঠিন হতে পারে।

এই সব সম্ভাবনার বার্তা আপনার সহজ মনে হতে পারে, অথবা সেটাকে জটিল মনে হয়। এই মনে হওয়াটা আপেক্ষিক। হয় আপনি এই কথাগুলোর অর্থকে সহজভাবে নিচ্ছেন, অথবা সেটার গূঢ় অর্থ অনুধাবন করতে আপনি সক্ষম হচ্ছেন না, অথবা বক্তব্যে ব্যবহৃত শব্দ অথবা চিহ্নগুলিকে এখনই তাৎপর্যময় করে তুলতে পারছেন – যে অবস্থানেই আপনি থাকুন না কেন, সেটা আপেক্ষিক। এই অনুধাবনের সক্ষমতা আপনার জ্ঞানকাঠামোর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত।

সহজ ভাবনার পরিসরে, অথবা রীতি-চিহ্নকেই কেবলমাত্র বুঝে, অথবা তার সংবেদকে উপলব্ধি না করে, আপনার মাথায় সেই মুহূর্তে খেলে যাওয়া সকল ভাবনার ওপরই আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। জানাতে পারেন আপনার নিজস্ব বক্তব্য বা মতামত। সেই বক্তব্যও একটা বার্তা বহন করে। মন্তব্য প্রকাশী বাক্যে ব্যবহৃত শব্দ তার অর্থবোধে সেই বার্তাকেও সচল করে। কিন্তু আপনি যদি চিহ্নের গূঢ়ার্থ উপলব্ধিতে জ্ঞানের বহর বাড়ান, তবে সেই জটিলও সহজ হয়ে ওঠে চিহ্ন-সূত্রের রাজনৈতিক সমীকরণে। করোনা কালের রাজনীতি সেই গূঢ়চিহ্নের সাক্ষ্য রাখে।

যাইহোক, ব্যবহৃত চিহ্নের বা শব্দের ধারণাগত প্রচলিত অর্থের তুলনায় তাই শব্দের উচ্চারণ রীতির বহুত্ব অনুসন্ধান সমাজতত্ত্বে অনেক বেশী কাঙ্ক্ষিত। শব্দের ছন্দময়তায় কোন মন্তব্য ক্ষমতাকে ভর করে বয়ান হয়ে উঠে। এখানে রাজনীতি প্রচলিত অনুঘটন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে এবং করতে পারে। আপনি দেখতে থাকেন একজন উচ্চজাতের ঠাকুর সম্প্রদায়ের লোক কীভাবে ধর্ষিতা-বাল্মীকি-পরিবারকে হুমকি দেয়। এদিকে আবার একজন নির্ভরযোগ্য নেতা মৃত্যু সংবাদের গুজব ছড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মনে রাখতে হবে সাধারণ ব্যাখ্যা আপাত জ্ঞাননির্ভর হয়। নানা আখ্যানে, হরেক ব্যাখ্যায় এইভাবেই নতুন জ্ঞানাণুর জন্ম হয় এবং সেগুলো সামাজিক পরিসরগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। সেগুলো সবক্ষেত্রে বাস্তব নাও হতে পারে। কিন্তু সেগুলো সবই বাস্তবের পারে-আখ্যান।

জ্ঞানের সীমা থাকলেও জ্ঞান কোনো সীমায়িত ধারণা নয়। জ্ঞানাণুর ঝাঁকুনি যত বাড়ে, জ্ঞানও তার প্রচলিত সীমা তত বেশী করে ভাঙে। গতকাল পর্যন্ত আপনি যা জানতেন, আজ হয়তো তার থেকে আলাদা কিছু জানছেন। কিছু জানা আবার আগের জানার পুরোপুরি উল্টো। সেই উল্টো জানার অংশে কিছু জানাকে আপনি সহজে মেনে নিলেও কিছু জ্ঞানের কথা আপনি জানতে ও মানতে বাধ্য হচ্ছেন। এটা চাপ এবং আপনার অনুভুতিতে তা হতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ।

তবুও জ্ঞানের পরিব্যাপ্তি, শব্দের হেঁটে চলা, শব্দার্থের বয়াননির্ভরতা – এই সবই তার ব্যবহারিক দিক থেকে সফলতা পায়। শব্দের ব্যবহার শুধুমাত্র জ্ঞানের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংযুক্তই নয়, প্রচলনের বহতায় আজ সেটা অনেক বেশী গণমাধ্যমনির্ভর। এখানেও ঝুঁকি। ‘গুছিয়ে মাথা খাওয়া’ বা যাকে আপনি একটু ভালোভাষায় ‘মস্তিষ্ক-প্রক্ষালন’ বলতে পারেন, সেই প্রক্রিয়ায় আপনি যে বহুদিন আগে থেকেই অংশ নিয়ে বসে আছেন তা আপনি জানতেও চান না। আবার মানতেও চান না। অতিমারির প্রলয় সংক্রান্ত ভয় যখন রসদে টান দিল, তখন ভুল আরও বেড়ে গেল।

আপনি ভেবে দেখলেন না যে শিল্প বিপ্লবের পর থেকেই শ্রেণীনির্ভর সামাজিক স্তরের বহুমাত্রিকতা লক্ষ্যণীয় হয়েছিল। মুখ্য-গৌণ শ্রেণীর ধারণা ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে। মালিকের প্রত্যক্ষ হাজিরা কখন মেঘের আড়ালে চলে যায়। শ্রমিকের বহুমাত্রিক দায়িত্ব, কর্ম পদ্ধতিতে নতুন নতুন স্তর, তার কাজের ধরনের নানান সংযোগী মাত্রা, এবং পেশাগত প্রকারভেদ, সমাজকে অর্থনৈতিক দিক থেকে, মর্যদানির্ভর স্বীকৃতে এবং ক্ষমতার বিচারে নানা স্তরে ভাগ করেছে। কিছুভাগের সঙ্গে সাবেকী ধারায় চলে আসা বিভাজন মিশে যায়। আধুনিকতা সেখানে ঐতিহ্যের সঙ্গে হাত মেলায়। আবার উল্টোটাও ঘটে না যে তা নয়। তবে এরই মাঝে, ঐতিহ্য-আধুনিকতার দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে, কারা যেন সামাজিক পরিসরে মেয়েটার পোশাকের বিচার সভা বসায়, যেখানে আদতে পুরুষতন্ত্রেরই লালন চলে, কিন্তু আপনি তা ধরতেই পারেন না। এটাই হল উত্তর-সত্যের পরাবাস্তবতা।

এই না ধরতে পারার জন্য আপনার চেতনার খামতি আছে, এমনটি নয়। বরং আপনি দৈনন্দিন রাজনৈতিক পরিসরে কোন্ রূপকগুলিতে আসক্ত তা আপনি নিজেই জানেন না। বিকল্প না থাকাটাও সেই খামতির একটা কারণ। আবার বিকল্প নির্মাণের সক্ষমতার সামাজিক দুর্বলতা অঞ্চলনির্ভর। তাই আঞ্চলিক জ্ঞান অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্বজ্ঞানের বিকল্প সন্ধানী হয়ে থাকে। যেমন অঞ্চলে আবিষ্কৃত প্রতিরোধী ভ্যাকসিন বিশ্ববাজার দখল করে। আবার বিশ্ববাজারে ব্যবহৃত ‘সামাজিক দূরত্ব’র ধারণাটা বাংলায় এসে ‘দৈহিক নৈকট্য’কে আপাতভাবে এড়িয়ে চলা হয়ে যায়। সবক্ষেত্রেই এমনটি ঘটবে তাও ঠিক নয়।

তবু ঘটে। জ্ঞানের পরিব্যাপ্তি রাজনৈতিক বয়াননির্ভর হলে সহজেই তা ভুলভাবে প্রচলিত হয়ে যায়। এই ভুলের আপাত কোনো পরিণাম নেই। এতে এখুনি কোনো ফল ভোগ হয়তো করতে হবে না। কিন্তু এই পথ কানাগলিতেই যে মেশে, তার প্রমাণ ইতিহাসসিদ্ধ। অর্থগৃধ্নু গণমাধ্যম মানুষকে যে সেই অন্ধকার গলিপথেই চালনা করে, সে সত্যও আমরা অনেকেই দৈনন্দিন জীবন অভিজ্ঞতায় দেখে থাকি। মাধ্যমই হল বার্তা – এই ধ্রুবকে সে আমাদের শব্দভান্ডারে মুখরোচক শব্দ জুগিয়ে, ধারণা জুগিয়ে, মানুষের ক্ষমতায়নকে নিশ্চিত করতে চায়। এই ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়ার অনেকগুলো পরিকল্পনা বাস্তব জীবনে আমাদের ক্ষমতাহীন করে তোলে। যেভাবে একজন উপজাতি মহিলা আজ আর বনজ সম্পদের গুণাগুণ সম্পর্কে তার জানার আগ্রহ বংশপরম্পরায় জারি রাখেন না, কিন্তু ক্যালপলের নাম মুখস্ত রাখতে চান। এটাই ‘কোভিড রিয়্যালিটি’।

২০২০র শুরুতেই প্যানডেমিকের কথা আমরা শুনলাম। করোনা ভাইরাসের আত্মীয় স্বজনেরা সার্সের চেয়েও মারাত্মক ছোঁয়াচে হয়ে মানব সমাজকে একেবারে ছারখার করে দেবে, সে কথা জানলাম। রাজনৈতিক বয়ানের ‘চিনা-ভাইরাস’কে আমরা কোভিড-১৯ হিসেবে চিনলাম। স্যানিটাইজ, ইমিউনিটি, পিপিই, মাস্ক, কোয়ারেনন্টাইন, আইসোলেশন, লকডাউন, কিংবা আনলক -এক, -দুই, -তিন, -চার, ইত্যাদি শব্দ আমাদের বলা কথার মধ্যে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়লো। তাতে আমাদের শব্দ ভান্ডার হতচকিত হয়েছিল।

ঠিক যেভাবে হতচকিত হলো দেশের অর্থনীতি। ভুল পথে পরিচালিত অর্থনীতিকে অতিমারির আতঙ্ক শুধু ধ্বসিয়ে দিল তাই নয়, মানুষের অনুভবে জীবনযন্ত্রণাকে বেশী মাত্রায় বসিয়ে দিল। রাষ্ট্রের কল্যাণকামী ভূমিকা ভুলুন্ঠিত হল। আমরাও শ্রমিককে আর এক পথে ভাগ করার কাজে নেমে গেলাম। পরিযায়ী বলে শ্রমিককে চিহ্নিত করলাম, অথচ এই অসংগঠিত অংশের হয়ে লড়াই আন্দোলনের ইতিহাস আমরাই রচনা করেছিলাম। ভুলে গেলাম শিল্পায়ন প্রক্রিয়াই শ্রমিককে প্রব্রজনে বাধ্য করেছিল। সামন্ততন্ত্রের জোয়াল ভেঙ্গে কৃষিনির্ভর স্থায়ীবাসিন্দার ভূমিদাস একদিন কলের মজুর হয়েছিল। নিজের শ্রম বিক্রিতে সে হয়েছিল স্বাধীন। কিন্তু তার শোষণনির্ভর জীবনের মুক্তি ঘটেনি।

পরিযায়ী হওয়াটা যে প্রাণীকুলের মৌলিক বৈশিষ্ট্য তা আমরা সকলেই মানি। তবু কোথাও প্রাণী হয়েও মানুষ অনন্য। এই অনন্যসাধারণ হওয়ার কারণ হল তার সংস্কৃতি। সেই উপাদানে আধুনিক মানুষ সহজে পরিযায়ী হতে চায় না। কোনো কারণে অন্য অঞ্চলে যাওয়ার বাসনা, অথবা কোনো বাধ্যবাধকতায় অঞ্চল ত্যাগের আপাত ইচ্ছা, মানুষকে পরিযায়ী করে তোলে। সেই পরিযায়ী শব্দটাও আজ এমনভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে যাতে তার প্রকৃতার্থ অনুধাবনে অস্বাভাবিকতাই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। অন্য রাজ্যে পেটের দায়ে খেটে খাওয়া শ্রমিক পরিবারের এক মা-কে কল্পনা করে কৃষ্ণনগরের এক শিল্পী দুর্গার মূর্তি গড়লে, গণমাধ্যমে হেডলাইন হয়ঃ “দুর্গার মধ্যেই পরিযায়ী-মা-কে পেলেন শিল্পী পল্লব ভৌমিক।” ‘পরিযায়ী-মা’ হল নয়া-স্বাভাবিক সমাজের ধারণা।

আমাদের অভিজ্ঞতায় তিরিশ বছর আগে থেকেই পুঁজিকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা তার উৎসমুখগুলোকে নতুন বিন্যাসে সাজাতে শুরু করে। সেটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিন্যাসের থেকে প্রায় সম্পূর্ণভাবেই আলাদা। এই নতুন সংযোগের ধারা আর্থিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং সাবেকী অভ্যাসগুলোর ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তন ঘটায় এবং জীবনের ক্ষণগুলিকে অনিশ্চয়তায় পূর্ণ করে। আর্থিক দিক থেকে সমাজের সবচেয়ে নীচের স্তরের মানুষের ভেসে চলার ধারায় গতি পায়। সেই কারণেই ধরে নেওয়া হয় যে একবিংশ শতাব্দীর নতুন কর্মপরিসরের ‘টাস্ক বেসড্ ম্যানেজমেন্ট’ ব্যবস্থা, নতুন শ্রেণীর জন্ম দেওয়ার পরিবর্তে অনেকবেশী ঝুঁকিবর্গের জন্ম দিচ্ছে। পুঁজি এখন সর্বগ্রাসী।

উদারবাদী রাজনৈতিক পরিসরকে কাজে ব্যবহার করে ভয় উৎপাদন হল আজকের সর্বাধিক সহজ পন্থা। এই কৌশল সমাজের সকল স্তরেই আর্থিক সচলতাকে শক্তি যোগায় বলে ধরে নেওয়া হয়। সেই কাজে প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি বৃহৎ-উপাত্ত সংগ্রহে এবং সংশ্লেষে কর্পোরেটদের সাহায্য করে। সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হওয়ার ছদ্ম পরিচয়ের নেপথ্যে গোপন বেড়াজাল বজায় রাখার প্রয়োজন হয় পড়ে। কোভিড-১৯ ভাইরাস আতঙ্ক তাই ঝুঁকি উৎপাদনের আখ্যান হয়ে যায়। ঝুঁকি রুখতে ঝুঁকি উৎপাদন আজকের বিশ্বব্যবস্থায় বাজারের এক প্রয়োজনীয় রূপবৈশিষ্ট্য। এখানে ঝুঁকি প্রতিরোধী ঝুঁকি ক্রয় করতে হয়। সেই ক্রয়-বিক্রয়ে সকলেই তার রাজনৈতিক সমীকরণ মেনেই হাজির থাকেন এবং সেখানে শেষ লক্ষ্য হয় মুনাফা আদায়। এককথায়, ফায়দা। সেই লাভের প্রতিযোগিতায় দুর্বল রাষ্ট্রগুলি প্রতিনিয়ত অনেক বেশী ঝুঁকি সস্তায় কিনছেন। আমরাও কিনছি। আর তাতেই আমরা খুব সহজেই নিজেদেরকে নজরদারির অংশীদার করে তুলছি।

রাষ্ট্রপরিচালকগণ তাদের অজ্ঞতায় এবং অক্ষমতায় দুর্বল করে তুলছেন জনসাধারণের বেশী ভাগ অংশকে। কিন্তু রাষ্ট্রের মোড়কপূর্ণ পরিবেশনায় নাগরিকের সেই বেশী অংশ কিছু-না-কিছু পাওয়ার আনন্দেই শান্তির ছিবড়ে চুষছেন। কেউ হিন্দু বোধে, অথবা কেউ জয়-বাংলা বলার আনন্দে বাঁচছেন। অথচ এই সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশকে যে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে তা দায়িত্বপ্রাপ্ত অংশ দেখছেন না। দেখলেও কিছু পাওয়ার আশায় নীরব থাকছেন। চরম ব্যক্তিতাবাদী এই প্রকাশে করোনার রাজনীতি হাওয়া দিতে সফল হচ্ছে। রাজনীতির ক্ষুদ্র স্বার্থ এবং সরকার পরিচালনায় অক্ষমতা ঢাকা দেওয়ার জন্য প্রচারসর্বস্ব জনমোহিনী আকর্ষণের শক্তিকে এই করোনাকালে কাজে লাগানো হচ্ছে। করোনা রাজনীতির এই উপায়হীন অনিবার্যতার ফলাফল অনিশ্চয়তায় ভরা।

নয়া-উদারবাদের শেষকথা উত্তর-শিল্পায়িত সমাজের ব্যাখ্যাতেই শুরু হয়েছিল। সেই সমাজে শ্রমিকের সংগঠন কি হবে তা কেউ তাত্ত্বিক দিক থেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। কিন্তু উত্তর-সত্যের বয়ানে নানা আখ্যান রচনা করা হয়েছে। বহু বক্তব্য সেখানে উঠে এসেছে। তবু রীতি-নীতি, মূল্যবোধ, কল্যাণকামী ধারণা, নাগরিক অনুভবে ছিল। কিন্তু যেদিন থেকে স্বাভাবিকতার ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানানো হল, কার্যকারণ বিচারের ধারা বিনির্মিত রূপকেই আসল বলে বৈধতা দিতে শুরু করলো, সেদিন থেকেই উত্তরাধুনিক সংস্কৃতিতে অস্বাভাবিকের অনুভূতি স্বাভাবিকের সুপলব্ধিতে জাগরিত হল।

এখন বেঁচে থাকাটাই অস্বাভাবিক। তাই আগে চিন্তা করার কিছু নেই। অতো গভীরে ভাবার প্রয়োজনও নেই। রিল্যাক্স। এনজয় লাইফ। ভোগ করো। ভোক্তা হও। তোমার শ্রমমূল্য কর্পোরেটের হাতে বাঁধা। তুমি তার কাছে ব্যবহারিক মূল্য বাড়ানোর কারক হও। তুমি বাড়িতে বসেই কাজ সারো। সংগঠিত হওয়ার প্রতিরোধী রূপে তুমি আর ঝুঁকিপূর্ণ নও। অফিস চালানোর ঝুঁকি এড়িয়ে চলা এখনই প্রথম সম্ভব হচ্ছে। ব্যয় কমছে। এই অস্বাভাবিকতাকেই তুমি নয়া-স্বাভাবিকতা বলে ধরে নিও।

তোমার ঘরে খাদ্য থাকাটাই অস্বাভাবিক। কারণ রাষ্ট্র তোমার খাদ্যের তালিকাকে ছোট করা শুরু করেছে অনেক আগেই। এখন সামাজিক-দায়ের খাতা থেকে নামটা ছেঁটে ফেলা, শুধু সময়ের অপেক্ষা। সেই কাজে রাষ্ট্র তোমাকে পরিশীলিত নজরদারিতে চালনা করছে এবং আগামীতেও করবে। তুমি ক্রমশ গভীর থেকে গভীরতর পর্যবেক্ষণের অধীনে আসছ। এই নজরদারি করা ছাড়া সরকারের আর কোন দায় আগামীতে নেই। তাই রাষ্ট্ররূপী কারাগার অনুভূতির জনরোষে আগুন জ্বলার সম্ভাবনাও এখানে থাকছে। সব ধরনের নজরদারি ক্রমশ তাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। রাষ্ট্রায়ত্ব নজরদারির জিমেদার যে কোম্পানীর হাতে থাকছে, সেই কেবলমাত্র তখন কিছুটা নিশ্চিত সম্পদের মালিক। এই পরিস্থিতিতে সেই নিশ্চয়তাই সবচেয়ে বড়ো অস্বাভাবিকতা।

এই তাত্ত্বিক বিতর্কে অংশ নিয়ে, পাঠ্য জ্ঞানভান্ডারের সমৃদ্ধিতে, আমরা নয়া-স্বাভাবিকতাকে মেনে নিচ্ছি। সেটাতে অভ্যস্ত হচ্ছি। আজ আর দেখতে চাই না যে কে অভুক্ত থাকলো। এখন দৈনন্দিন জীবনের যে রাজনৈতিক-অর্থনীতি আমাকে চালনা করছে, তাতে কার ঘরে এমন খাবার কেন আছে, সেটাই আমি জানতে চাই। এই আমি, এবং সমভাবনার আমরা, অস্বাভাবিকতাকে স্বাভাবিকতায় বুঝে ফেলেছি। জেনে গ্যাছি যে সরকারের সীমা কল্যাণমূলক কাজের ক্ষেত্রেই কেবলমাত্র থাকবে, কিন্তু অন্যথায় সেটা নাও থাকতে পারে। সেটাকেই আত্মনির্ভরতার পথ বলে ধরে নিচ্ছি। এটাই নতুন-স্বাভাবিক।

দেশের, অথবা রাজ্যের প্রতিটি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় মাথা গোঁজার ঠাঁই, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি সহ সকল মৌলিক প্রয়োজনগুলোর ব্যবস্থানির্মাণে আত্মনির্ভর না হয়ে, বিক্রি করে দিয়ে দায়মুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় আমরা আত্মনির্ভর হচ্ছি। এটাই কি তবে নতুন-স্বাভাবিকতা? প্রকৃত গরিবের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেওয়া একজন সমাজকর্মীর রাজনৈতিক কাজ এখন কি তবে কাটমানি খেয়ে পরজীবীর মতো সুখানুভতিতে মত্ত হওয়া? এই প্রাপ্তিযোগের রাজনীতিকরণেই কি সচল থাকবে নতুন-স্বাভাবিকতা?

এই অবস্থায় সব কিছুই নতুন হওয়াটা বাঞ্ছনীয়। তা সে যত পুরনোরই মোড়কজাত প্রকাশ হোক। তবুও যেন সেই প্রকাশে নতুনত্ব থাকে। তাই আজ ঠান্ডা লড়াই একটা ক্লিসে হয়ে যাওয়া ধারণায় পরিণত হয়। পুঁজিবাদের এই সর্বোচ্চ রূপের অভ্যন্তরে আগ্রাসী রাষ্ট্র যে তার প্রয়োজনীয় খোচরকে আগেই তৈরী করে রেখেছে, সেটা ভুললে চলে না। তার কাছে এখন মতবাদের থেকে বাজার দখলের লড়াইয়ে থাকা প্রত্যক্ষ প্রতিযোগী হলেন অনেক বেশী ঝুঁকির কারণ। মতবাদের লড়াইকে সে ‘ফেক-নিউজ’ চালনার, ‘ভুল টিআরপি’ গণনার, ‘নতুন-সাংস্কৃতিক রেণু’ জোগানের, অথবা ‘ভোক্তানির্মাণে’র জাদু মতাদর্শে বুঝে নিতে পারবে। কিন্তু বাজার হাতছাড়া হলে চলে না। শুধু সামরিক অস্ত্রের বাজার নয়, সকল ধরনের চাহিদা তৈরীর বাজার তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এই নিয়ন্ত্রণ করতে পারাটাই তার সক্ষমতা বিচারের মাপকাঠি। এখানে ভোক্তা আনন্দের সঙ্গে শুধু ঝুঁকি কেনেন না, ঝুঁকি ছড়ানও বটে। তিনি হলেন ঝুঁকির আত্মনির্ভর প্রচারক। তিনি হলেন তৈরী করে দেওয়া চাহিদাকাঠামোর মধ্যে থাকা একজন ক্রিয়ক। প্রচলিত সংযোগ মাধ্যমে কারক হিসেবে তার ক্রিয়াপদ্ধতি আজ বেশ সক্রিয়।

এই সক্রিয়তাই যেকোনো পরিবেশনায় মোড়কের কাজ করে। সেই মোড়কে, সার্স-কোভ-২ বা কোভিড-১৯, করোনা রূপে, ‘চীনা ভাইরাস’ পরিচয়ে, এবং কমিউনিস্ট রাজনীতির রূপক হয়ে সহজেই বিশ্বজোড়া আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে। যেখানে সেখানে মানুষ মরে পড়ে আছেন, এমন ছবিতে ‘প্রায় নিষিদ্ধ’ একটা রাষ্ট্রের ভিতরের ছবি বাইরে আনার কৃতিত্বকে আনন্দের সঙ্গে প্রচার করা হয়। গণমাধ্যমের বৃহৎ বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি বিশ্বরাজনীতির সেই থ্রিলারকে পরিচালনা করে। এই ছবিতে প্যান্ডেমিক হয়ে ওঠে অতিমারি। মড়ক লাগানো হয় মানুষের মনে। বেঁচে থাকার ঝুঁকি চিন্তায় টইটুম্বুর হয়ে ওঠে আতঙ্কের পরিবেশ। সামাজিক প্রতিবেশে বিচ্ছিন্নতা স্বাভাবিক হয়ে যায়।

বিশ্ববাজারকে নয়া-অভিমুখে, নয়া-বিন্যাসে সাজানোর এটা একটা কৌশল। ভাইরাসের আতঙ্ক সেই নয়া-স্বাভাবিকের এক মোড়কযুক্ত ভনিতা। এই ভান না ধরতে পারলে উন্নয়নের ঋণাত্মক মাপকাঠিতেই বারে বারে যে আমাদের চলা শুরু করতে হচ্ছে তা জনগণ সহজেই বুঝে ফেলতে পারবেন। সেটা ঢাকা দরকার। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে সেই চলাটার শুভারম্ভ ছিল একুশ শতাংশ পিছিয়ে থেকে, আর আজ আর এক মাপকাঠিতে আরও দুই ঘর পিছিয়ে সেটা হয়েছে এখন তেইশ শতাংশ! ঘরের বাইরে তাই তো আজ দেখা যায় মাস্ক পরে দাঁড়িয়ে থাকা ফ্যাসিস্ত মুখ। মাস্কের মোড়কেও সে ধর্ষক গুরুর হয়ে প্রচার করে। ভক্ষক শাসকের হয়ে হাতে অস্ত্র তুলে নেয়। ন্যায়কে সে আজ অস্বাভাবিক মানে। ন্যায়ালয় এখন রাজনীতির দলদাস। মূল্যবোধকে তাই সে মধ্যবিত্তের ভ্রান্তি বলে চালিয়ে দেয়। বিশ্বাস হয়ে ওঠে বিচারের রায় দানের প্রধান হাতিয়ার। এটাই তার মতো আমাদের সকলের কাছে নতুন-স্বাভাবিক!

নয়া-স্বাভাবিকের এই সমাজ আজ করোনাক্রান্ত রাজনৈতিক সমাজ। এখানের সহনাগরিক আপন ভালো বুঝে গ্যাছেন। সেই বোঝাটা রাজনীতির মোড়কে আবৃত। বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণে তার বিশ্লেষণ সম্ভবপর না হলে, নয়া-স্বাভাবিকের বিচ্ছিন্নতাধর্মী প্রাণঘাতী চেহারাটা সাধারণের চোখে ধরা পড়া সম্ভব নয়। ঠিক যেমনটি শ্রমদাতা সেদিন বোঝেননি যে করোনার নামেও তার পারিশ্রমিকের একটা অংশ কেটে নেওয়া হতে পারে। প্রয়োজনীয় শ্রমসময় এক থাকলেও, শ্রমসময়ের মূল্য কমে যেতে পারে। এক ঘোষণায় কয়েক কোটির হাত কর্মহীন হতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তির কোনো কর্পোরেট সংস্থা তার কর্মীর আবাসস্থলের অভ্যন্তরেই একটা অফিস বিনাব্যয়ে দখল করতে পারেন। আর সেখানে সবচেয়ে কাছে থাকা পরিবারের সদস্যরাও হয়ে যান অচ্ছুত। কল্পিত প্রাচীরের অভ্যন্তরে এখন তার প্রবেশাধিকার নিষদ্ধ। চরম নৈকট্যেও বিচ্ছিন্নতার ‘হ্যাবিটাস’ তৈরির কাজে সেই মানুষ আজ সফল। এটাই নয়া-স্বাভাবিকতা। এই রাজনীতি কি সত্যিই কাঙ্ক্ষিত?

বিকল্পহীনতার দোহাই এই অস্বাভাবিকতাকে নয়া-স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে বাধ্য করছে। আমরাও তা মেনে নিচ্ছি। গত শতাব্দীর সেই নব্বয়ের দশকের শুরু থেকে দ্রুতহারে টেলি যোগাযোগ, মোবাইল, ইন্টারনেট সংযোগ যেমন দূরকে নিকটে নিয়ে এসেছিল, সেই ফাঁকেই আজ যে কখন ‘নৈকট্য’ সংজ্ঞাহারা হয়ে যৌথজীবন থেকে হারিয়ে গেল, আমরা ধরতেই পারলাম না। সেই না ধরতে পারার মাঝে, একা থাকার অভ্যাসে, দশমাসের ট্রেনিং আজ প্রায় সম্পূর্ণ হতে চলেছে।

এই নয়া-স্বাভাবিকতায় দারিদ্র স্বাভাবিক। অপুষ্টি সেই যুক্তিতেই স্বাভাবিক। সংখ্যাগুরুর আধিপত্যও এখানে স্বাভাবিক। সহজ, সরল এবং সাধারণ উপস্থিতিতেই এই ব্যবস্থায় বৈষম্য, অস্পৃশ্যতা, ঘৃণা এবং হানাহানি টিকে থাকে। অস্বাভাবিক হয় ভাতৃত্ব, যূথবদ্ধতা, স্বাধীনতা, বেঁচে থাকার স্বয়ম্ভরতায় থাকা নিশ্চয়তা। নয়া-স্বাভাবিকে তাই বিরোধ না বাঁধালে ভারতীয় সমাজ-সংস্কৃতির ঐতিহ্যে থাকা বিরুদ্ধতার স্বাভাবিকতা হারিয়ে যায়। বেঁচে থাকে কেবল কল্পগাথার ভণিতায় ভরা ভয়ের নয়া-স্বাভাবিকতা। এখানে রাজনীতি করোনাক্রান্ত। করোনার রাজনীতিই সেই বেপথু হওয়ার প্রথম ও প্রধান শক্তি-উৎস। জনস্বাস্থ্যের ব্যবস্থাহীন জনগণ এখানে ‘রাজনীতি কোরানা’ ভাষ্যে সুযোগের লাইনে আনন্দের সঙ্গে খাড়া হয়। জায়েন্ট স্ক্রীনে জনহীন উৎসবের ফিতে কাটা হয়। বিচ্ছিন্নতার করতালি একা থেকে একা করে তোলার স্বাভাবিকতাকে সমর্থন জানায়। নয়া-স্বাভাবিক মানব জীবনে ভবিতব্য হয়ে গেড়ে বসে।

এই নতুন-স্বাভাবিক ধারণার কোনো বস্তুবাদী ভিত্তি নেই। সামাজিক-মানসিক চাপের মধ্যে নিরন্তর সংগ্রামী বেঁচে থাকাটাকেই ভাববাদী দৃষ্টিকোণ থেকে নতুন-স্বাভাবিক বলে চালানো হচ্ছে। সেটা চালানো হলেও বাস্তবে আমারা কোনটা চাইবো? উৎসবের নামে স্বেচ্ছাচার, নাকি প্রযুক্তি, পরিষেবা ও অর্থের সুষম বন্টনে নিশ্চিত হওয়া ধারণশীল উন্নয়ন-পরিধির প্রসার? কোনটা?

এই প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রযন্ত্র থাকে উত্তরহীন। নিজের পরিচালনের অক্ষমতা ঢাকতে তাই সে সহজ রূপককে আশ্রয় করে, কোভিড-১৯কে রাজনীতির হাতিয়ার করে, শক্তি সংগ্রহের কর্তৃত্ববাদী পন্থাকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়, তবুও সেই অস্বাভাবিকতাকে আপাতভাবে নতুন-স্বাভাবিক বলে মেনে নিলেও সেটা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। ইতিহাস সেই কথাই বলে।

তখনই দেখি সন্ধ্যাকাশে আশার আলো ওঠে জ্বলে।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in