জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে বাড়ছে রাজনৈতিক সহিংসতা। এর ফলে দেশটিতে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে গত ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ৩৮৭টি রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনায় ৫৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৫ হাজার ৪০০ জনের মতো।
স্থানীয় নির্বাচনসহ রাজনৈতিক নানা কারণে ৬৪ জেলার প্রায় সব ক'টিতে এ সময় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু, জোরপূর্বক অপহরণ ও রহস্যজনক নিখোঁজ, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে হয়রানি, সীমান্তে নির্যাতন, হত্যাসহ নানাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে।
গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক সহিংসতার তথ্য বিশ্লেষণ করে আসক তাদের প্রতিবেদনে জানায়, গত ৯ মাসে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লা জেলায়, এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা। কুমিল্লায় মোট ২৫টি সহিংসতার ঘটনায় ২ জন নিহত ও ২৫৬ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে চট্টগ্রামে ২৩টি সহিংসতার ঘটনায় ৬ জন নিহত ও ৩০২ জন আহত হয়েছে।
অন্য আরেকটি মানবাধিকার সংগঠন 'মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন' (এমএসএফ) তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শুধু সেপ্টেম্বরেই ৫০টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন–পরবর্তী একটি সহিংসতার ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৯০১ জন। তাঁদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ২৮ জন। পুলিশ ২৯ জনকে আটক করেছে।
এমএসএফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৮০৫ জন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মী ও সাধারণ মানুষ, ৬ জন সাংবাদিক। এদিকে পুলিশের ভাষ্যমতে, এ সময়ে সহিংসতার ঘটনায় তাদের ৭৬ জন সদস্য আহত হয়েছেন।
আসকের প্রতিবেদন বলা হয়, গত ৯ মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু, জোরপূর্বক অপহরণ ও রহস্যজনক নিখোঁজ, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে হয়রানি, সীমান্তে নির্যাতন, হত্যাসহ নানাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে।
তবে এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে ক্রসফায়ার বা বন্দুক যুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনা পূর্বের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাব এবং এই বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সাত শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল উল্লেখ করে আসক বলেছে, গত এপ্রিলে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আবার নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
গত ৯ মাসে বিচারবহির্ভূতভাবে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ১৫ জনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে এমএসএফের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বরে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা বিচারবহির্ভূত তিনটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
ভুক্তভোগীদের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ অনুযায়ী, এই সময়ে সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে চারজনকে অপহরণ করা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন ফেরত এসেছেন এবং একজনকে পরে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। দু'জন এখনো নিখোঁজ। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বরাবরের মতো এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এমএসএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে পাঁচজনকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
আসকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একই সময়ে কারা হেফাজতে ৫৪ জন মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েদি ২০ জন ও হাজতি ৩৪ জন।
এছাড়া এই সময়ের মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক নিপীড়নের ঘটনাও ঘটেছে। গত ৯ মাসে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন ৬৬ জন সাংবাদিক। আসকের তথ্যমতে, আরও ১৭৯ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি, মামলা ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। আর দুর্বৃত্তদের গুলিতে কুমিল্লায় একজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন