HP: ৪-০ তে বিজেপির হার, ১ কেন্দ্রে জামানত জব্দের ধাক্কা সামলাতে এবার কী হিমাচলেও মুখ্যমন্ত্রী বদল?

রাজ্যের ৩ বিধানসভা কেন্দ্র, ১ লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কংগ্রেসের কাছে পর্যুদস্ত BJP। যেখানে হাতছাড়া হয়েছে ১ লোকসভা আসন এবং ১ বিধানসভা আসন। এমনকি জুব্বল কোঠখাই কেন্দ্রে বিজেপির জামানত জব্দ হয়েছে।
হিমাচল প্রদেশে জয়ের পর প্রার্থীর সঙ্গে কংগ্রেস কর্মীরা
হিমাচল প্রদেশে জয়ের পর প্রার্থীর সঙ্গে কংগ্রেস কর্মীরাছবি হিমাচল কংগ্রেস ট্যুইটার হ্যান্ডেলের সৌজন্যে
Published on

সম্ভবত কংগ্রেসও প্রত্যাশা করেনি হিমাচল প্রদেশে এরকম ফলাফল হতে পারে। ‘ক্লিন সুইপ’ বলতে যা বোঝায় এ বোধহয় তার থেকেও কিছু বেশি। রাজ্যের তিন বিধানসভা এবং এক লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কংগ্রেসের কাছে কার্যত পর্যুদস্ত বিজেপি। যেখানে হাতছাড়া হয়েছে একটি লোকসভা আসন এবং একটি বিধানসভা আসন। এমনকি জুব্বল কোঠখাই কেন্দ্রে বিজেপির জামানত জব্দ হয়েছে। রাজ্যের বিজেপি সরকারের জনপ্রিয়তা যে তলানিতে এবং প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া হিমাচল প্রদেশে বেশ ভালোরকম কাজ করেছে তা এই ফলাফল থেকেই স্পষ্ট।

সাধারণত যে রাজ্যে যে ক্ষমতায় থাকে সে রাজ্যের উপনির্বাচনে সেই দলই জয়ী হয়। যদিও হিমাচল প্রদেশে ২০১৭ তে ক্ষমতাচ্যুত কংগ্রেস বিজেপির ঘরে রীতিমত থাবা বসিয়েছে। আগামী বছরের শেষের দিকে হিমাচল প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনের প্রস্তুতি দুই দলই এখন থেকেই শুরু করে দিয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগের বছর কংগ্রেসের এই জয় ইতিমধ্যেই বিজেপির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজনৈতিক মহলে।

২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হয়েছিলো ৪৪ আসনে। মোট প্রাপ্ত ভোট ৪৮.৮ শতাংশ। ২১ আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলো কংগ্রেস। প্রাপ্ত ভোটের হার ৪১.৭ শতাংশ। এই রাজ্যে একটি আসনে জয়ী হয়েছিলো সিপিআইএম। প্রাপ্ত ভোটের হার ১.৫ শতাংশ। নির্দল প্রার্থীরা ৬.৩% ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলো ২টি আসনে।

২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হয়েছিলো ৪৪ আসনে। মোট প্রাপ্ত ভোট ৪৮.৮ শতাংশ। ২১ আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলো কংগ্রেস। প্রাপ্ত ভোটের হার ৪১.৭ শতাংশ।

২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জব্বল কোঠখাই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী নরেন্দ্র ব্রাগতা। তিনি পেয়েছিলেন ২৭,৪৬৬ ভোট। পরাজিত কংগ্রেস প্রার্থী রোহিত ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর ভোটের ব্যবধান ছিলো ১,০৬২। কংগ্রেস প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ২৬,৪০৪। নরেন্দ্র ব্রাগতার মৃত্যুতে শূন্য হয় এই আসন। যেখানে প্রয়াত বিধায়ক নরেন্দ্র ব্রাগতার ছেলে চেতন সিং ব্রাগতার বদলে বিজেপি দাঁড় করায় নীলম সারায়েককে। যা বিজেপির গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের দিকেই ইঙ্গিত দেয়।

ফলস্বরূপ এই কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান প্রয়াত বিধায়কের ছেলে চেতন সিং ব্রাগতা। উপনির্বাচনে এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী রোহিত কুমার পেয়েছেন ২৯,৪৪৭ ভোট। বিজেপি প্রার্থী পেয়েছে ২,৫৮৪ ভোট এবং নির্দল প্রার্থী চেতন সিং ব্রাগতা পেয়েছেন ২৩,৩৪৪ ভোট। কংগ্রেস প্রার্থীর জয়ের ব্যবধান ৬,১০৩। অর্থাৎ ভোট অনেকটাই বেড়েছে কংগ্রেসের। অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী এবং নির্দল প্রার্থীর ভোট যোগ করলেও প্রয়াত বিজেপি বিধায়ক নরেন্দ্র সিং ব্রাগতার প্রাপ্ত ভোটের থেকে তা কম।

অন্যদিকে মান্ডি লোকসভা আসনে কংগ্রেস প্রার্থী প্রতিভা সিং পেয়েছেন ৩,৬৯,৫৬৫ ভোট এবং বিজেপি প্রার্থী ব্রিগেডিয়ার কুশল চাঁদ ঠাকুর পেয়েছেন ৩,৬২,০৭৫ ভোট। ব্যবধান ৭,৪৯০। উল্লেখ্য ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে মান্ডি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির জয়ের ব্যবধান ছিলো ৪ লক্ষের কিছু বেশি। সেবার বিজেপির রামস্বরূপ শর্মা পেয়েছিলেন ৬,৪৭,১৮৯ ভোট। কংগ্রেসের আশ্রয় শর্মা পেয়েছিলেন ২,৪১,৭৩০ ভোট।

২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে মান্ডি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির জয়ের ব্যবধান ছিলো ৪ লক্ষের কিছু বেশি। সেবার বিজেপির রামস্বরূপ শর্মা পেয়েছিলেন ৬,৪৭,১৮৯ ভোট। কংগ্রেসের আশ্রয় শর্মা পেয়েছিলেন ২,৪১,৭৩০ ভোট।

উল্লেখ্য, মান্ডি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ১৭টি বিধানসভা আসন। যার মধ্যে আছে বারমৌর, লাহুল ও স্পিতি, মানালি, কুলু, বাঞ্জার, আন্নি, কারসোগ, সুন্দরনগর, নাচন, সেরাজ, দারং, জোগিন্দর নগর, মান্ডি, বাইহ, সরকাঘাট, রামপুর এবং কিন্নোউর। ২০১৭-র নির্বাচনে এই ১৭ বিধানসভা কেন্দ্রের ১৩ কেন্দ্রে খুব ভালো ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলো বিজেপি। ৩ কেন্দ্রে কংগ্রেস এবং ১টি কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী। লোকসভা উপনির্বাচনের কেন্দ্র ভিত্তিক বিস্তারিত ফলাফল এখনও না পাওয়া গেলেও এটা স্পষ্ট যে এই ১৭ কেন্দ্রেও এই মুহূর্তে দলগত অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে।

নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশের পরেই পরাজয়ের দায় স্বীকার করে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর। এর পাশাপাশি তিনি প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন অনেক জায়গাতেই দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছে বিজেপির কিছু কর্মী। যা স্পষ্টতই ইঙ্গিত দেয় বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের দিকে। ইতিমধ্যেই নির্বাচনী ফল ঘোষণার পর মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন রাজ্য কংগ্রেস প্রধান কুলদীপ সিং রাঠোর। হয়তো এই ফলাফলের পর কর্ণাটক, গুজরাট, উত্তরাখন্ডের মত এবার হিমাচল প্রদেশেও মুখ্যমন্ত্রী বদলের পথে হাঁটবে বিজেপি।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in