Joshimath: যোশীমঠ তলিয়ে যাচ্ছে কেন?

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা গত কয়েক বছর ধরে এই প্রকল্পের পরিবেশগত কুপ্রভাবের কথা বলে যাচ্ছেন। তার সাথে যুক্ত হয়েছে এনটিপিসি’র তপোবন-বিষ্ণুগড় প্রকল্প এবং ধউলিগঙ্গা নদীর উপর আর একটি প্রকল্প।
যোশীমঠে বাড়িতে ফাটল
যোশীমঠে বাড়িতে ফাটল ছবি, অতুল সতীর ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত
Published on

প্রকৃতি প্রতিশোধ নিচ্ছে। হিমালয়ের ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্রের উপর যে অত্যাচার করছে এই সরকার, হিমালয় তার প্রতিবাদ করছে। দু’দিন আগে চামোলি জেলার হেলাং এবং মারওয়ারির মধ্যে সড়ক তৈরির কাজের বিরুদ্ধে বদ্রীনাথ জাতীয় সড়ক অবরোধ করে যোশীমঠের অধিবাসীরা।তাঁরা সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে স্লোগান তোলেন।

১২,০০০ কোটি টাকার চারধাম রোড প্রকল্পের কাজ অত্যন্ত নৃশংসভাবে হিমালয়কে ক্ষতবিক্ষত করছে। ধর্মীয় উসকানি দিয়ে, বিভিন্ন কৌশলে পরিবেশ অভিঘাত ইআইএ এনভায়রনমেন্টাল  ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (Environmental Impact Assessment) সম্পর্কিত কোনো সমীক্ষা না করে, পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ  দেখিয়ে গায়ের জোরে চারধাম অলওয়েদার সড়ক (Chardham All-weather Road) প্রকল্পের কাজ করছে সরকার। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বিগত কয়েক বছর ধরে বার বার এই প্রকল্পের পরিবেশগত কুপ্রভাবের কথা বলে যাচ্ছেন। তার সাথে যুক্ত হয়েছে এনটিপিসি’র তপোবন-বিষ্ণুগড় প্রকল্প এবং ধউলিগঙ্গা নদীর উপর আর একটি প্রকল্প যার নাম বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। 

 গত ৮ই জানুয়ারি এবং ৯ই জানুয়ারি যোশীমঠ ঘুরে এসেছেন বিজয় ভাট।  বিজয় একজন বিজ্ঞানকর্মী এবং এই সমস্ত প্রকল্পের ইআইএ সমীক্ষার জন্য লাগাতার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর সঙ্গে ৯ তারিখ রাত্রে কথা হয়। তিনি বলেন, পরিবেশকর্মী এবং এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ইআইএ এবং উপযুক্ত পরিবেশ রক্ষার পদ্ধতি এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান — (Environmental Management Plan) করার দাবি জানাচ্ছে ।

তিনি বলেন যে, দীর্ঘদিন ধরে একথা সবার জানা যে, যোশীমঠের  অবস্থান সিসমিক জোন-৫-এর উপর। অর্থাৎ এই অঞ্চল ভূমিকম্প প্রবণতার দিকদিয়ে অনেকটাই সংবেদনশীল। তাই এটাই স্বাভাবিক যে, ধস নামার এবং তলিয়ে যাওয়ার (subsidence) প্রবণতা অনেকটা বেশি হবে। যোশীমঠের কাছে হৃষীকেশ-কর্ণপ্রয়াগ রেল যোগাযোগের জন্য একটি টানেল বা সুড়ঙ্গ তৈরি হচ্ছে। এর জন্য পরিবেশ রক্ষার সমস্ত বিধি ভেঙে দিন রাত চলছে বিস্ফোরক দিয়ে পাথর ভাঙার কাজ। ফলে সমস্ত যোশীমঠ এলাকার ক্ষয় প্রবণতা বেড়ে চলেছে।  

৯ তারিখ রাত্রেই কথা হলো আরেকজন সাংবাদিক সত্যম কুমারের সাথে। সত্যম গত ৩ জানুয়ারি থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত যোশীমঠে ছিলেন। সত্যম বলছেন যে, ৩রা জানুয়ারি থেকে যোশীমঠের ১ নম্বর ওয়ার্ডে ফাটল দেখা দেয়। ৮ তারিখ নাগাদ সমস্ত শহর সহ গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এই সর্বগ্রাসী ফাটল। তাঁর আরও বক্তব্য হলো, গত২২শে ডিসেম্বর যোশীমঠে পাহাড়ের নিচে ফাটল হতে শুরু করে। প্রশাসন তাকে অগ্রাহ্য করে সমস্ত প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যায়। শহরের নাগরিকরা বার বার তার প্রতিবাদ করে, মাঝে মাঝে রাস্তা অবরোধও হয়। কোনো সতর্কতা না নিয়ে প্রকল্পগুলির কাজ চলতে থাকে। ৩রা জানুয়ারি  ১ন ওয়ার্ডের ফাটল বোঝানোর জন্য বেশ কিছু মানুষকে ঘর ছাড়তে হয় তখন ৪ঠা জানুয়ারি থেকে কাজ বন্ধ করার উদ্যোগ নেয় সরকার।    

১৯৭৬ সালে গাড়ওয়াল কমিশনার এম সি মিশ্র-কে গাড়ওয়াল অঞ্চলে এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপদ সম্পর্কে একটি রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়। তখন সবে ধর্মীয় কারণে এবং প্রকৃতি উপভোগ করার জন্য যে পর্যটক যান তাদের জন্য হোটেল ও অন্যান্য সুবিধা তৈরির উদ্যোগ শুরু হয়েছে। যোশীমঠের অদূরে আউলিতে তখন ভূস্খলন শুরু হয়েছে।

মিশ্র কমিটির রিপোর্টে বলা হয় যে, আউলিতে যে ভূস্খলন ঘটছে তা এখানকার অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণের কাজের জন্য হয়েছে। এই রিপোর্টে  ১৮৮৬ সালে হিমালয়ান গেজেটিয়ারে প্রকাশিত একই ধরনের তথ্যের কথা উল্লেখ করা হয়। এম সি মিশ্র ১৯৬০ সাল থেকে গারওয়ালের কমিশনার ছিলেন এবং তিনি রিপোর্ট  তৈরির আগে বেশ কয়েকজন ভূবিজ্ঞানী, অরণ্য বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলেন।

পরবর্তীকালে আরও অনেক গবেষণা এবং অধ্যয়ন হয়েছে। কোন গবেষণা-তথ্যই এই অঞ্চলে বিশালাকার নির্মাণের পক্ষে কথা বলেনি বরঞ্চ তার বিরোধিতা করেছে। কিন্তু সরকার এসবের কোনো গুরুত্ব দেয়নি। এখানকার বাসিন্দাদের দাবি অগ্রাহ্য করে হিন্দু ভাবাবেগকে উৎসাহিত করার জন্য বার বার এই অঞ্চলের বাইরের মানুষদের জন্য এই সমস্ত বড়ো প্রকল্পের কথা বড়ো করে প্রচার করেছে।

সত্যম আরও উল্লেখ করেন যে, সরকার যে ৬৮০টি বাড়ি ধসে যাওয়ার কথা বলছে তা অসত্য। তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৬৮০টি বড়ো বাড়ি ছাড়াও উপজাতি এবং বাল্মীকি সম্প্রদায়ের অনেক ছোটো বাড়ি ধসে গেছে। এঁদের পুনর্বাসনের জন্য  সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। যা দেখানো হচ্ছে তা সবকিছু বড়ো বাড়ির কথা। যোশীমঠের নগরপালিকা বিজেপি পরিচালিত। গত ৭ই জানুয়ারি যোশীমঠের পিডব্লিউডি-র দপ্তরে বড়ো ফাটল দেখা দেয়। ফলে সেই বাড়ি খালি করে দিতে হয়। এরপরই ৮ই জানুয়ারি থেকে সংবাদমাধ্যমে খবর আসতে থাকে। খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, এখানকার সেনাবাহিনীর যে ক্যাম্প আছে তার ঘরগুলিতেও ফাটল দেখা দিয়েছে ।   

চারধাম প্রকল্পের যে ডিপিআর ( ডিইটেলড প্রোজেক্ট রিপোর্ট — Detailed Project Report) তৈরি হয় তাতে খুব স্পষ্ট করে এই অঞ্চলের বড়ো নির্মাণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বলা হয়। উল্লেখ করা হয় যে, সড়ক নির্মাণের সময় কোনভাবেই পাহাড়ে ৪৫% এর বেশি গড়ান (slope) করে কাটা যাবে না।

কিন্তু সত্যম বলছেন যে, প্রায়শই ৯০%এর মতো গড়ান করে পাহাড় কাটার দৃশ্য সবার চোখে পড়বে। ফলে পাহাড়ের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দিনে দিনে যোশীমঠের কষ্ট বাড়ছে।

২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পর দেশের সমস্ত পরিবেশরক্ষার আইন, অরণ্যরক্ষার আইন গুলিকে ধাপে ধাপে লঘু করছে এই সরকার। চারধাম সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের যাতে ইআইএ করতে না হয় তার জন্য এই রাস্তাকে ছোটো ছোটো ভাগ করে দেখানো হয়েছে। সড়ক সহ অন্য প্রকল্পগুলির ছাড়পত্রের জন্য যে অরণ্য নষ্ট করা হয়েছে তার ক্ষতিপূরণের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।  সরকারের এই অবিবেচক কাজের ফলে আজ প্রকৃতি প্রতিশোধ নিচ্ছে।

* লেখক বিদ্যাসাগর কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, পরিবেশবিদ এবং বিজ্ঞান আন্দোলনের নেতা 

যোশীমঠে বাড়িতে ফাটল
Joshimath: যোশীমঠের মতো পরিণতি হতে পারে নৈনিতাল, কর্ণপ্রয়াগেরও! আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের
যোশীমঠে বাড়িতে ফাটল
Joshimath: যোশীমঠকে 'ভূমিধস প্রবণ অঞ্চল' হিসাবে ঘোষণা! অস্থায়ী শিবিরে আরও ৬৮ পরিবার

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in