অবিশ্বাসীর দল
“লাল আগুন ছড়িছে পড়েছে দিগন্ত থেকে দিগন্তে,
কী হবে আর কুকুরের মতো বেঁচে থাকায়?
কতো দিন তুষ্ট থাকবে আর
অপরের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট হাড়ে?”
সুকান্তের লেখা, “পয়লা মে’র কবিতা, ১৯৪৬”র অংশ। পরাধীন ভারতে দাঁড়িয়ে কবি সেই দিনই আমাদের খিদের জ্বালায় “কেঁউ কেঁউ শব্দ” করার আগে ভাবতে বলছেন। এঁটোকাঁটা খেয়ে বেঁচে থাকার অভ্যাস প্রসঙ্গে সতর্ক করেছেন।
সর্বকালেই অবিশ্বাসীর দল প্রশ্ন হানে। শাষিত মানুষের স্বর আহ্বান তোলে – “চূর্ণ কর দাসত্বের দৈন্য আর ভীতি; রুটিই তো স্বাধীনতা, স্বাধীনতা রুটি।”
শোষিতের সেই রণহুংকারে, রণডঙ্কা বাজে কল থেকে কারখানা হয়ে বন্দরে। শ্রম, বিশ্রাম, আনন্দ – সবই তখন নির্দিষ্ট হয় আট ঘন্টা অন্তরে।
খণ্ডপূর্ব-ভারতের শ্রমিক শ্রেণী, শ্রম-সময় কমিয়ে আনার দাবিতে লড়াই, আন্দোলন, ধর্মঘটের পথে হেঁটেছে। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসকের নির্মমতাকে অগ্রাহ্য করেই তারা সেটা করেছেন।
উদ্বেলিত হাওড়া-কলকাতা
তখন সবে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হয়েছে। মন্বন্তরের ঘা তখনও বাংলার বুকে দগদগে। গ্রাম সমাজের বাইরে, খোদ কলকাতায় তখন শ্রমিকের দুর্দশা এবং তাদের ন্যায়সঙ্গত দীর্ঘদিনের দাবিগুলোকে না মেনে নেওয়া সহ শ্রমশোষণ সম্পর্কিত বিভিন্ন আগ্রাসনের কথা, প্রচারের আলোয় একটা আন্তর্জাতিক মাত্রা পেয়েছে। ১৯২০র পর থেকেই সেটা একটা সংগঠিত রূপ অবশ্য পাচ্ছিল। ১৯৪৬ সালের ১লা মে তারিখে কলকাতার ময়দানে বি-পি-টি-ইউসি'র উদ্যোগে ও মৃণালকান্তি বসুর সভাপতিত্বে এক বিশাল শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বক্তব্য রাখেন কমিউনিস্ট নেতা রজনী পাম দত্ত। ঐ দিন মেটিয়াবুরুজেও তিনি একটি স্মরণীয় শ্ৰমিকসভা করেন।
বাংলার মাটিতে এই ঘটনা প্রথম নয়। এর আগেই সেটা ব্যাপকতা লাভ করেছিল। ১৯৪৪ সালে কলকাতা ময়দানে মে দিবসের দিনে শ্রমিক, কর্মচারী, ছাত্র, যুব ও অন্যান্য খেটে-খাওয়া মানুষের এক বিশাল সমাবেশ হয়েছিল। এই অনুষ্ঠান থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে উৎখাত করতে মুক্তি সংগ্রামের ডাক দেওয়া হয়।
আরও দশ বছর পিছিয়ে যাওয়া যেতে পারে। সেই ১৯৩৪ সালেও পুলিশের ধারণাকে এক প্রকার চমকে দিয়ে মেটিয়াবুরুজ, হাওড়া, লিলুয়া, চন্দননগর ও কলকাতা জুড়ে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে মে দিবস পালিত হয়। সেই দিন শুধুমাত্র কলিকাতা ডকেরই ১৪ হাজার শ্রমিক ধর্মঘটে সরাসরি অংশ নেন।
এই ধর্মঘট রেল, পাট, ডক সহ অন্যান্য শিল্পাঞ্চলে এবং কুলি, মুটে, মজদুর, পালকি বেয়ারাদের মধ্যেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। এতে অবশ্য শ্রমিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী মানুষের ওপর রাষ্ট্রীয় মদতে পুলিসী সন্ত্রাস নেমে আসে। ব্রিটিশ প্রশাসন আরও নৃশংস হয় দু’জন পুলিশের মৃত্যু হলে। গ্রেপ্তার ও জেল তখন কমিউনিস্টদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কমিউনিস্ট পার্টি ও বহু গণসংগঠন তারপর বে-আইনী ঘোষিত হয়। কয়েক বছর পর কলিকাতা কমিউনিস্ট ষড়যন্ত্র মামলা পুলিস দায়ের করে। এটিও একটি সাজানো মামলা।
১৯৩৩-র পর থেকে বাংলায় মে দিবস পালনে আট ঘন্টা কাজের দাবি একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে। ১৯২০-র সময় থেকেই কাজী নজরুল ইসলাম, মুজফফর আহমদের মতো কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা আন্তর্জাতিক পরিসর সম্পর্কে যতটা গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন, যা তাঁদের লাঙল, গণবাণী কিম্বা নবযুগে প্রতিফলিত, তাতে তাঁরা মে দিবস কর্মসূচীটিকে অবজ্ঞা করেছেন, সেটা মেনে নেওয়া কঠিন। ১৯২৭ সালে নজরুল ইন্টারন্যশানাল বাংলায় গান। “রক্ত-পতাকার গান” প্রকাশিত হয়। ১৯২০ থেকে ১৯২৭ –এই সাত বছর সময়কালে বাংলায় মে দিবস যে পালন হয়নি সেটা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। অবনী মুখার্জি থেকে মানবেন্দ্র রায়, সকলেই মে দিবসের ঘটনার কথা যে ভালোভাবে জানতেন, সে কথা মেনে নিতে কারুরই কষ্ট হয় না। বিশেষ করে লেনিনের সহযোগিতায় কমিউনিস্টদের আন্তর্জাতিক সংযোগ বেশ নিবিড় হওয়ার কারণে তখন এই ঘটনা বিষয় পাঠ্য ছিল। ইশতেহারেও সেটা অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৯৬ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ১৯০৪-০৫ সাল পর্যন্ত লেনিন নিজেও মে দিবসের ইশতেহার লিখেছেন, যা সমকালীন রুশ সমাজের বিপ্লবী ধারাকে প্রকাশ করে। মার্কসীয় দর্শনের প্রায়োগিক দিককে নির্দেশ করে। ১৯১৭য় স্তালিন “প্রাভদা” পত্রিকায় মে দিবস সম্পর্কে লেখেন।
যাইহোক, ১৯২৭এর পর আট ঘন্টার দাবিটিকে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে তাদের রাজনৈতিক ভাষ্যে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে শুরু করলেও শ্রম-সময়কে মানবিক করার দাবিটি মানুষ কর্তৃক মানুষের শ্রম শোষণের মতোই ইতিহাস প্রাচীন। কাজের সময় ও পরিবেশকে মানবিক দিক থেকে বিচার করার দাবি সেই আঠারো শতকের শেষ সময় থেকেই শ্রমিক অসন্তোষের বিশ্বজোড়া কারণগুলির অন্যতম হয়ে উঠেছিল। যেমন, ব্রিটিশ পুঁজির উদ্যোগে ১৮১৮ সালে এই কলকাতায় গড়ে ওঠা ভারতের প্রথম সুতোকল – ফোর্ট গ্লস্টার মিল, যাকে আমরা পরে বাউরিয়া কটন মিল নামে চিনেছি, সেখানেও ব্যাপক শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয় ১৮৫৪ সালে। এই ১৮৫৪ সালেই রেলপথে যাত্রা করার প্রথম সুযোগ বাংলায় হয়। সেই শুরুর আট বছরের মাথায়, ১৮৬২ সালে হাওড়ার রেল শ্রমিকেরা জোটবদ্ধ হয়ে এক বিস্ময়কর ইতিহাস সৃষ্টি করেন যা ১৮৮৬র শিকাগো শহরের হে মার্কেটের ঘটনার থেকে কিছু কম নয়।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে ১৮৮৬র ১ মে শিকাগো শহরের হে মার্কেটের ঘটনাটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। বসন্তের আমেজ কাটিয়েও শিকাগোর শিল্পাঞ্চলে সেদিন ছিল ছুটির আমেজ। কারখানার চিমনি সেদিন ধোঁয়া ছাড়েনি। যন্ত্রের রূঢ়তা সেদিন সাইরেনে মেশেনি। তবুও কোথাও শ্রমজীবী মানুষের দাবি আন্দোলনের আওয়াজে অঞ্চল মুখরিত ছিল। কাজের সময় আট ঘণ্টা করার আন্দোলনের প্রস্তাব ছিল সেই ধ্বনির অন্যতম স্বর, যা ১৮৬৬ সালেই আলোচনা করে নেওয়া হয়েছিল। তবুও সেই দাবিতে মালিক পক্ষের আপত্তি থাকে। বিপত্তি বাঁধে সেখানেই। শাসকের আইনি হাতিয়ার পুলিশ গুলি চালিয়ে, শ্রমিকের রক্তে হাত রাঙিয়ে সেটা দমন করতে চায়।
সেই ঘটনা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের স্বীকৃতিতে শ্রমিক শ্রেণীর জয় ঘোষণা করলেও আট ঘণ্টার দাবিতে প্রথম শ্রম ধর্মঘট হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়। দিনটি ছিল ১৮৫৬ সালের ২১শে এপ্রিল, সোমবার। এই প্রসঙ্গে রোজা লুক্সেমবার্গের রচনা প্রণিধানযোগ্য। অস্ট্রেলিয়ার এই ঘটনাকে যদি আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসের প্রথম ঘটনা বলে বুঝে নিতে হয়, তবে সেই মানের দ্বিতীয় বড় ঘটনাটি ঘটে হাওড়ায় ১৮৬২ সালের ৫ মে। এটাও ছিল সোমবার, সেদিন হাওড়ার রেল শ্রমিকেরা তাদের দাবিপূরণের জন্য ধর্মঘটে নামে। তিন দিনের বেশী চলে এই ধর্মঘট। কাজের সময় কমানোর দাবি এই ধর্মঘটের অন্যতম একটা কারণ ছিল। ১২০০র বেশী রেল-শ্রমিকের এই যূথবদ্ধ আন্দোলন রেলের চাকা থামিয়ে দেয়। এই সময়ের বলিষ্ঠ প্রগতিশীল বাংলা রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পত্রিকা ‘সোমপ্রকাশ’, তার ২৩ শে বৈশাখ, ১২৬৯ সংখ্যায় ধর্মঘটের বিবরণী প্রকাশ করে। পুলিশি হিংসার নিন্দা জানিয়ে এবং আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়ে সেটা প্রকাশিত হয়। বলাবাহুল্য, এই পত্রিকাটির আদি-পরিকল্পনায় ছিলেন স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়।
ভারতীয় শ্রমাকাশে রক্ত-পতাকা
‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা সারা ভারতের শ্রমিক-কর্মচারী আন্দোলনের অনেক খবরই প্রকাশ করে। ঐ ১৮৬২র মার্চ মাস থেকে ক্রমশ তুঙ্গে ওঠা ইস্ট ইণ্ডিয়া রেলওয়ে অডিট ডিপার্টমেন্টের কেরাণী কুলের আন্দোলন যখন ধর্মঘটের রূপ নেয়, তখনও সেই খবর সোমপ্রকাশের পাতায় স্থান পায়। সেই সুবাদেই জানা যায় পরের বছর, অর্থাৎ ১৮৬৩ সালে বোম্বাইয়ে ঘটা ক্ষৌরকর্মীদের ধর্মঘট ও কলকাতার পালকি বাহকদের ডাকা ধর্মঘটের নানা কথা। কলকাতায় ঘোড়ার গাড়ির গাড়োয়ান ধর্মঘট, বোম্বাইয়ের ছাপাখানার ধর্মঘট, কিম্বা মাদ্রাজের মাংস-বিক্রেতাদের ধর্মঘটের সংবাদও প্রকাশিত হয় ১৮৭৩র সোমপ্রকাশের পাতায়।
উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের শ্রম সমাজ, অন্যান্য সকল দুর্বিপাককে গৌণ ধরে নিয়েও দুটি মূল সমস্যার মুখোমুখি হয়। প্রথমত, সাবেকী উৎপাদন পদ্ধতির সঙ্গে আধুনিক যন্ত্রনির্ভর উৎপাদন পদ্ধতির বিপুল ব্যবধান মেটানো, যা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে দেখা যায় কুঁড়েতে বসবাসকারী নেংটি পরা খালি গায়ের বিপুল সংখ্যক মজুর তাদের আয় বৈষম্য নিরসনেও সফলতা পায় না। ১০ থেকে ১৫ ঘন্টা কাজ করেও শ্রমিক তার লজ্জা-ক্ষুধা মেটানোর মতো উপার্জনে সফল হয় না। ফলে কাজের সময় বিচারে মজুরি সম্পর্কিত দাবি শ্রমিকের মজ্জাগত চেতনাভ্যাসে পরিণত হয়।
সেই অভ্যাসেই লাল পতাকা ভারতের শ্রমাকাশেও ওড়ে। শ্রমিকের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগে ১লা মে তারিখে শ্রমিক দিবস পালিত হয়। ব্রিটিশ শোষণ ও শাসন বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবেই সেটা দানা বাঁধে। লেবার কিষাণ পার্টি অব হিন্দুস্থানের উদ্যোগে ১৯২৩ সালের ১লা মে তারিখে মাদ্রাজের সমুদ্র সৈকতে কমিউনিস্ট শ্রমিক নেতা সিঙ্গারাভেলু চেটিয়ার-এর সভাপতিত্বে মে দিবস অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা আন্দোলনে গান্ধীবাদের সমান্তরালে কমিউনিস্ট ধারাকে ক্রমে স্পষ্ট করে এই ধরনের কর্মসূচী। চেটিয়ার নিজেও প্রথমে গান্ধীবাদী ছিলেন। হয়তো কিছুটা সেই কারণেই ১লা মে দিনটিকে তিনি সরকারের কাছে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণার অনুরোধ জানান।
সেই সময় থেকে ভারতের বিভিন্ন শ্রমিক মহল্লায় মে দিবস পালনের একটা ধারা প্রসারিত হতে থাকে। সেই প্রবাহে শ্রমিকের কাছে সহোদরের রক্তঋণ পরিশোধের অবসর হয়ে ওঠে মে দিবস। ভারতের বিভিন্ন শিল্পতালুকে যেমন সেটা ছড়িয়ে পড়তে থাকে, ঠিক তেমনই আবার নগরাঞ্চলে খেটে খাওয়া বিভিন্ন মানুষ তাদের পেশার সংযোগে ঐক্যবদ্ধ হতে মে দিবস পালন করেন। যেমনটি লাহোরের টাঙ্গাওয়ালা শ্রমিকেরা করেছিল। ১৯২৬ সালের মে দিবসে তারা টাঙ্গা চালাননি, বরং লাহোর শহরটাকে বিভিন্ন পোস্টারে সাজিয়ে তুলেছিলেন। সেই সুসজ্জিত পোস্টারে তারা তাদের কথাটা সাধারণ মানুষকে জানিয়েছিলেন। পালিত হয়েছিল প্রথম টাঙ্গা ধমঘট। লাহোরের মানুষ দেখেছিল সুসজ্জিত লাল ঝাণ্ডার মিছিল। সেখানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন টাঙ্গা চালক মীর আবদুল মজিদ। বোম্বাইতেও মে দিবস পালিত হয়েছিল ১৯২৬ সালে। ঐ দিনের শোভাযাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন পৌরসভার শ্রমিকেরা এবং শোভাযাত্রার পুরোভাগে ছিলেন এন. এম. যোশী, মীরজকর, এ. ভি. ঘাটে প্রমুখ শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।
ভারত জুড়ে শ্রমিকশ্রেণীর উদ্যোগে পূর্ণ কমিউনিস্ট মর্যাদায় দিনটিকে পালন করা শুরু হয় তার পরের বছর। ১৯২৭ সালের মে দিবস পালনের কর্মসূচী সেই কারণেই বিশেষভাবে স্মরণীয়। ঐ বছরই প্রথম সারা ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস থেকে মে দিবস পালনের জন্য সমস্ত প্রাদেশিক ট্রেড ইউনিয়নগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই নির্দেশে সাড়া দিয়ে ঢাকা, কলকাতা, বোম্বাই, মাদ্রাজ ইত্যাদি প্রধান প্রধান শহরে বিপুল উৎসাহের মধ্যে মে দিবস পালিত হয়। লাল পতাকার তলে সমবেত হয় শ্রমিক-কিষাণ জোট।
শহীদদের আত্মত্যাগ
উনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগ, পুঁজি বিকাশের সেই যুগ, যখন দৈনিক ১২ ঘণ্টা থেকে ১৪ ঘন্টা শ্রমিকদের খাটিয়ে বলগাহীন শোষণের মাধ্যমে একচেটিয়া পুঁজি জন্ম নিচ্ছে। ইউরোপ এবং আমেরিকা জুড়েই সেটা হচ্ছে। আমেরিকায় হেনরি ফোর্ড, কিম্বা রকফেলারের মতো মুনাফাশিকারী অর্থ-পিশাচদের দল তখন দুনিয়ার শ্রম-সম্পদ শোষণের নিবিড় জাল ছড়াচ্ছে। পরিচালন সংস্থার ফাঁদে শ্রমিকের কাছে তখন মালিক ক্রমশ অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছেন। ফাঁদ পাতার সেই অপকর্মে ঐ সব মালিক শ্রেণীর জুড়ি মেলা ভার। শ্রমিককে শায়েস্তা করার জন্য তারা তৈরি করেছে গুণ্ডাবাহিনীর সিন্ডিকেট। ধর্মঘট ভাঙা থেকে মানুষ খুন, সবেতেই তারা দক্ষ। মালিকের কথাটা মাটিতে পড়তে না পড়তেই শ্রমিক-ধোলাই সম্পাদিত হয়ে যায়। প্রয়োজনে মজুরের বৌটার গণধর্ষণ, সেটা তো তখন নিত্য ঘটনা। এমন গুণ্ডা-কোম্পানি প্রসঙ্গে ‘পিংকাটন এজেন্সি’র কথা আমরা জানি। যেখানেই ধর্মঘট, সেখানেই শ্রমিকদের খুন, তাদের মহল্লা জ্বালিয়ে দেওয়া, পরিবার নষ্ট করে জীবন-যন্ত্রণা বাড়িয়ে দেওয়া হল তখন শ্রম নিয়ন্ত্রণের পন্থা।
আধুনিক দাস সেই নিয়ন্ত্রিত শোষণের জাল ছিঁড়তে চায়। ইতিহাসের বস্তুবাদীতায় হতদরিদ্র শ্রমিক কুলেও তাই বিপ্লবীরা জন্ম নেন। স্পার্টাকাসরা ফিরে ফিরে আসেন। আমেরিকার মাটিতেও সেটা ঘটেছিল। শিল্প নগর শিকাগোর মাটি শ্রমিকের রক্তে লাল হয়েছিল। নেতৃত্বে পারসন্স, স্পাইজ, ফিশার, এঞ্জেল প্রমুখের মতো শ্রমিকেরা ছিলেন, যারা বিপ্লবী ক্ষুদিরামের মতো ফাঁসিকাঠে সহাস্যে দাঁড়িয়ে পড়তে পারেন।
শ্রমিক সংহতি জানিয়ে মে দিবসে শিকাগোর হে মার্কেট অঞ্চলে আট ঘন্টা কাজের দাবিকে সামনে রেখে শ্রমিকদের জমায়েত শুরু হয়। শুরু থেকেই জায়গাটাকে পুলিশ ঘিরে রাখে। গুণ্ডা-কোম্পানির সিন্ডিকেটে থাকা ঠ্যাঙ্গারে বাহিনীও সেখানে আগে থেকেই যথাসংখ্যক মজুত ছিল। যেই পুলিশকে লক্ষ্য করে কেউ বোমা ছোড়ে, অমনি পুলিশ গুলি চালায়। বারো-চোদ্দ জন নিরস্ত্র শ্রমিক লাশ হয়ে যায়। বেশ কয়েক জন গুলিতে আহত হন। উভয় বাহিনীর অত্যাচারে শতাধিক শ্রমিকের হাত-পা ভাঙ্গে, চোখ, মুখ ফাটে। নির্মমতা মাত্রা ছাড়ায়।
আহত বন্দীদের বিচার শুরু হয় ২১ জুন। বিচারের নামে প্রহসন। বিচারক জোসেফ ই. গ্যারি ৯ই অক্টোবর বিচারের রায় শোনান। রায় মৃত্যুদণ্ডের বার্তা দেয়। পারসন্স, স্পাইজ, ফিশার, এঞ্জেলকে ফাঁসিকাঠে লটকে দেওয়ার কথা ঘোষিত হয়।
রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রে শ্রমিকের প্রাণদণ্ড।
শ্রমিক সংহতির স্বার্থে গড়ে ওঠা লড়াই তাতে জোরদার হয়। প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত একজন কমিউনিস্টের সঙ্গে রয়েছেন একজন নৈরাজ্যবাদী। শ্রমিক সংহতিতে একদল প্রতিবাদী সহোদর।
সেই হিল্লোলে ফাঁসিকাঠে দাঁড়িয়ে মার্কসীয় দর্শনে আস্থারাখা ফিশারের প্রত্যয়সিদ্ধ ঘোষণা—“এটা আমার জীবনে সবচেয়ে খুশির মুহূর্ত।”
নির্ভীক, দামাল, অপরাজেয় সেই ঘোষণা শাসকের মনে ভয় ধরায়। ফাঁসির মঞ্চে কালো কাপড়ে মাথা ঢাকতে রাজী না হয়ে নৈরাজ্যবাদী এঞ্জেলের উচ্ছ্বাস— “নৈরাজ্যের জয় হোক”।
শুধু কণ্ঠস্বর ভেসে আসে না, ফাঁসির মঞ্চ থেকে বার্তা ভেসে আসে। শহীদের উপলব্ধি। স্পাইজ দীপ্ত কন্ঠে বলেছিল—“আজ তোমরা আমাদের টুঁটি টিপে ধরছো, কিন্তু সামনেই এমন দিন আসবে যখন আমাদের নীরবতা তোমার দম্ভের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠবে।” সেই বিশ্বাসে ফাঁসির মঞ্চে পারসন্স বোধের বয়ান বুনেছিল—“হে আমেরিকার মানুষ, আমাকে বলার অনুমতি দেওয়া হবে কি? শেরিফ মাটসন, আমাকে বলতে দিন। জনগণের কথাটা শোনা হোক! ওটা শোনা দরকার।”
শেষ হল চারটি জীবন, শুরু হল নতুন যুগ। সেই সন্ধিক্ষণ লাল পতাকাকে শ্রমজীবী মানুষের লড়াইয়ের প্রতীক করে তোলে।
শহীদের আত্মত্যাগ লড়াইয়ের শিক্ষা দেয়। দেয় লাল পতাকা বয়ে চলার প্রতিবাদী, বিপ্লবী শক্তি। মে দিবসের শহীদেরা সেই পথকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছেন। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষ তাদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে লাল পতাকাকে শহীদের রক্তে ভেজা প্রতীক হিসেবেই দেখেছেন। তবে ১৮৮৬ সালের ঐতিহাসিক মে দিবসকে লাল পতাকার জন্মদাতা বলাটা সঠিক নয়।
“মডার্ন টাইমস”-এ চার্লি যেমন দেখিয়েছিলেন নিষ্পেষিত শ্রমিক জীবন আর তার প্রতিবাদের গল্প, ঠিক তেমনি শৈল্পিক ঢঙে বাস্তবের মাটিতে থাকা ব্যারিকেডের ওপর ওড়ে লাল পতাকা। ১৮৩২ সালে জুন অভ্যুত্থানের সময় প্যারিসের শ্রমিক বসতির চারপাশে তৈরী ব্যারিকেডের উপরই সেই প্রথম উত্তোলন করা হয়েছিল একটি লাল পতাকা, সংগ্রামের বিপ্লবী চিহ্ন। ১৮৪৮ সালের জুন অভ্যুত্থানেও ফরাসী শ্রমিকেরা তাদের কারখানা থেকে মহল্লায়, সর্বত্র লাল পতাকা তোলেন। কার্ল মার্কসের নির্বাচিত রচনাবলীর প্রথম খণ্ডেই সেই ঘটনার উল্লেখ আছে। ১৮৭১ সালের প্যারি কমিউনেও লাল পতাকা উড়েছিল। ১৮৭১ সালে নিউ ইয়র্কের টমস্কিন স্কোয়ারে কর্মসংস্থানের দাবিতে বেকার তরুণ-তরুণীরা লাল পতাকা তুললে পুলিশ নৃশংস আক্রমণ নামিয়ে আনে। মে দিবস সেই বিপ্লবী সংগ্রামের নিশানকে শ্রম চেতনায় বিশ্ব-আঙ্গিনায় তুলে ধরে।
মার্কস-এঙ্গেলস ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস
মানব সমাজকে বস্তুনিষ্ঠ পদ্ধতিতে দেখেছিলেন মার্কস এবং এঙ্গেলস। তাঁদের নিরলস গবেষণা শ্রম ব্যবস্থাকে মানবিক করে তোলার কাজে নিয়োজিত ছিল। পুঁজিবাদে প্রচলিত উৎপাদন ব্যবস্থার মধ্যে থাকা শ্রমবিভাজনের প্রক্রিয়াটি যে অমানবিক এবং যন্ত্রসম, সেটা তারা অর্থনৈতিক ও সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণে প্রমাণ রেখেছেন। শুধুমাত্র ইংল্যান্ডের না, আমেরিকার শ্রমিক শ্রেণী কোন অবস্থার মধ্যে আছে সেটা তাঁরা জানতেন। ইতিহাসের বস্তুবাদী বিশ্লেষণে তাঁরা দেখেছেন যে যন্ত্রনির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থাতেও কাজের ঘণ্টার কোনো নিয়ম বাস্তবে নেই। ১৮০৬ সালে ফিলাডেলফিয়ার জুতো কারখানার ধর্মঘটী শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মামলা চলার সময় প্রকাশ পায় যে, শ্রমিকদের উনিশ থেকে কুড়ি ঘণ্টা পর্যন্ত দৈনিক খাটানো হয়।
দশ ঘণ্টা কাজের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেয় গৃহনির্মাণ শিল্পের শ্রমিকেরা। এর প্রত্যক্ষ ফল হিসাবে জন্ম নিয়েছিল দুনিয়ার প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন বলে খ্যাত ফিলাডেলফিয়ার মেকানিকদের ইউনিয়ন। ঘটনাটা ১৮২৭ সালের। অপর দিকে নিউ ইয়র্ক শহরে রুটি তৈরির কারখানা শ্রমিকরা ১৮৩৪ সালে ধর্মঘটে যায়। এই ধর্মঘট চলার সময় ‘ওয়ার্কিং মেনস অ্যাডভোকেট’ পত্রিকায় লেখা হয়, “মিশর দেশের ক্রীতদাস প্রথার চেয়েও দুঃসহ অবস্থার মধ্যে রুটি কারখানার কারিগরেরা বছরের পর বছর কাটিয়ে চলেছেন। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে গড়ে আঠেরো থেকে কুড়ি ঘণ্টাই তাদের খাটতে হয়।” লাগামহীন শ্রম শোষণের এই ছিল কমিউনিস্ট ইশতেহার রচনা-পূর্ব কিছু সামাজিক নমুনা।
ফলে, কাজের ঘণ্টা কমানোর দাবিতে ইউরোপে এবং আমেরিকাতে শ্রমিক ধর্মঘটের পথই বেছে নেয়। এটাই তার শেষ হাতিয়ার। সরাসরি কর্মবিরতি। আমেরিকার শিল্প শহরগুলো ১৮২০ সাল থেকে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত একটার পর একটা ধর্মঘটের সাক্ষী বহন করে। শ্রমের লিঙ্গায়ন, উদ্বৃত্ত শ্রম সময়, মজুরি হ্রাস, পণ্যায়ন, ইত্যাদি পুঁজিবাদী কারসাজি তখন মার্কসীয় সমালোচনায় জর্জরিত। ফোর্ডবাদ থেকে টেলরবাদ, যে চেষ্টাই চালাক না কেন, শ্রমিক তার দৈনন্দিন জীবন অভিজ্ঞতায় মিলিয়ে নিয়েই মার্কসীয় বিশ্লেষণে আস্থা রাখেন।
১৮৬৪ সালের সেপ্টেম্বরে লন্ডনে অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিকে মার্কস তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট করেন। সেই উদ্বোধনী ভাষণে কাজের ঘন্টা কমানোর প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্যটি মে দিবসের সলতে পাকানোর কাজে বেশ উল্লেখযোগ্য। মার্কস বলেছিলেন– “অত্যন্ত প্রশংসনীয় অধ্যবসায়ের সাথে ত্রিশ বছরের সংগ্রামের পরে জমি-প্রভু আর অর্থ-প্রভুদের মধ্যে ঘটা একটা সাময়িক বিভেদকে কাজে লাগিয়ে ইংরেজ শ্রমিক শ্রেণী দশ ঘণ্টার আইন পাশ করতে সফল হয়েছে।”
১৮৬৬ সালের ২০শে অগাস্ট ৬০টি ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বাল্টিমোরে জমায়েত হয়ে গঠন করেন ন্যাশনাল লেবার ইউনিয়ন। এই প্রতিষ্ঠা-সভাতেই প্রস্তাব নেওয়া হয় যে “এই দেশের শ্রমিককে পুঁজি-দাসত্বের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য… স্বাভাবিক কাজের দিন হিসেবে আট ঘণ্টাকেই গণ্য করতে হবে। যতদিন এই গৌরবময় ফল অর্জন আমরা না করতে পারি, ততদিন আমরা আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগের সংকল্প নিচ্ছি।”
১৮৮৬ সালের ডিসেম্বরে সেন্ট লুইতে আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবারের অধিবেশনে সিদ্ধান্ত হয় যে, ১৮৯০ সালের ১লা মে থেকে এই দিবসটি প্রতি বছর পালিত হবে সারা আমেরিকায়। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ১৮৮৯ সালের ১৪ই জুলাই দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্যারিস কংগ্রেসে এঙ্গেলসের উপস্থিতিতে (মার্কস তখন আর বেঁচে নেই) এই দিবসটিকে শুধু আমেরিকার নয়, সারা পৃথিবীর শ্রমজীবী মানুষের বিক্ষোভ ও সমাবেশের আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হবার সিদ্ধান্ত হয়। তাই ১৮৯০ সালের ১লা মে থেকে সারা পৃথিবীতেই এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
১৮৯০ সালে কমিউনিস্ট ইশতেহারের জার্মান সংস্করণে এঙ্গেলস যুক্ত করেন মে দিবসের কথা। ১৮৯৩ সালে আন্তর্জাতিকের জুরিখ কংগ্রেসে এঙ্গেলসের উপস্থিতিতেই প্রস্তাব নেওয়া হয় :-“শুধু আট ঘণ্টা দিনের জন্যই মে দিবসের সমাবেশ নয়, সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে শ্রেণী-বৈষম্যকে ধ্বংস করার জন্য তাকে অবশ্যই শ্রমিক শ্রেণীর দৃঢ় সঙ্কল্পের সমাবেশে পরিণত করতে হবে এবং এভাবেই যেতে হবে সেই পথে যেটা সকল জাতির শান্তির পথ, বিশ্বশান্তির একমাত্র পথ।”
অত্যুক্তি, না করলে নয়
আমেরিকান সমাজে পুঁজিবাদ যে বর্বর নৃশংস শোষণের রাজ কায়েম করেছিল, তার রাজনৈতিক-অর্থনীতিটিই হল মে দিবসের ঐতিহাসিক পটভূমি।
পুঁজিবাদী দাসত্বের শৃংখল থেকে শ্রমিক শ্রেণীকে মুক্ত করার শপথ নিয়ে মে দিবসের যাত্রা শুরু হয়।
কিন্তু মে দিবস আজও কেন সারা দুনিয়ার শ্রমজীবী মানুষের কাছে এত প্রিয়, এত জীবন্ত? কী তার তাৎপর্য?
এমন সব প্রশ্নে অনেক কথা মাথায় আসে। চোখের সামনে ইতিহাসের পাতায় ভেসে ওঠে হরেক রকমের ছবি। দেখি বার্লিনের রাস্তায় “দ্যা গ্রেট ডিক্টেটর” হিটলার সাহেব মে দিবসের মিছিলে হাঁটছেন। মে দিবসের সেই জনসভায় প্রেসিডেন্ট পাউল লুতভিগ ফন হিন্ডেনবুর্গ দিনটিকে আনন্দের সঙ্গে জাতীয় শ্রমিক দিবস ঘোষণায় তাঁর বক্তব্য শেষ করছেন। হিটলার উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছেন। হিন্ডেনবুর্গ ও হিটলারের এই মে দিবস পালনের খবর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মূলত বেতার ও সংবাদপত্রের দপ্তর সেই কাজটা তখন করে। ১৯৩৩ সালের ১ মে’র সেই ঘটনায় সাক্ষী থাকেন বার্লিনের শ্রমিক শ্রেণী, যাদের অনেকেই ১৯৪৫র ১ মে বার্লিনের রাস্তায় লাল ফৌজের জয়ধ্বনি শোনেন। আজ ভারতের শ্রম সমাজ শ্রমিক শ্রেণীর জয়ধ্বনি গায়, তখনও রেল লাইনের পাড়ে পোড়া রুটি রক্ত স্রোতে ভেসে যায়। রুটিই তো স্বাধীনতা! স্বাধীনতা রুটি।
রুজির সেই অর্থনৈতিক সংগ্রামকে আজও রাজনৈতিক সংগ্রামে রূপান্তরের ডাক দেয় মে দিবস। ভ্রান্ত চেতনা ঠেলে ফেলে শ্রেণী অবস্থানে জীবনের বিষয়গুলোকে বুঝতে সামর্থ্য জোগায় মে দিবস। প্রকৃত শ্রেণী চেতনা বিকাশের ইতিহাসে শ্রমের বস্তুবাদী চর্চার প্রতিটি দিনই হল তাই মে দিবস। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে সেটা হয়তো একটা মাত্র দিন, ১ মে। কিন্তু তার ব্যপ্তি সর্বমাত্রিক। সে হল সংহত শ্রমিক পরিচিতি। সমস্ত অসংগঠিত শ্রমিককে সংগঠিত করার আহ্বানে এই দিবসের ডাক।
বিশেষ করে আট ঘন্টার অধিকার যখন শ্রমিক শ্রেণী নতুন করে হারাতে বসেছে। “ডিপ স্টেট”-এর দিকে এগিয়ে চলেছে বিশ্বায়িত ঠগি বাহিনীর রাজনৈতিক দখলদারিত্ব। স্বজনতোষী কর্পোরেট পুঁজি এখন আর শুধু জল, জমি, প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশকে খাচ্ছে না, সমগ্র মানব সভ্যতাকে গিলে ফেলতে চাইছে। সেই সর্বগ্রাসী শোষণের বিরুদ্ধে সমগ্র শ্রমিক শ্রেণীকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানায় উত্তর-অতিমারির মে দিবস।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন