Parliament Session: সংসদের প্রথম অধিবেশনই সাক্ষী থাকতে পারে টানটান উত্তেজনার

People's Reporter: সংসদের এই বিশেষ অধিবেশন ক্ষমতাসীন এনডিএ ও বিরোধী ইন্ডিয়া শিবিরের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। সদ্যসমাপ্ত ভোটের পর এই অধিবেশনেই সাংসদদের শপথ গ্রহণের পাশাপাশি নির্বাচন হবে স্পীকার পদেও।
নতুন সংসদ ভবন
নতুন সংসদ ভবন ছবি - সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীর এক্স হ্যান্ডেলের সৌজন্যে
Published on

অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের প্রথম অধিবেশন শুরু হতে চলেছে আগামী ২৪ জুন। চলবে ৩ জুলাই পর্যন্ত। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু একথা জানিয়েছেন। সংসদের নিম্নকক্ষের এই বিশেষ অধিবেশন একদিকে যেমন ক্ষমতাসীন এনডিএ-র কাছে গুরুত্বপূর্ণ তেমনই গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী ইন্ডিয়া শিবিরের কাছেও। কারণ সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনের পর প্রথম এই অধিবেশনেই সাংসদদের শপথ গ্রহণের পাশাপাশি নির্বাচন হবে স্পীকার পদেও। জানা যাবে বিরোধী দলনেতার নামও।

এনডিএ শিবিরের ২৯৩ আসনের পাশাপাশি এবার ইন্ডিয়া মঞ্চও আসন পেয়েছে ২৩৪। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এনডিএ-র প্রধান শরিক বিজেপির এবার লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে ৩২ আসন কম থাকার কারণে এবার একাধিক বিষয়ে ভোটাভুটি হলে বিজেপিকে নির্ভর করতে হবে শরিকদের ওপরে। ফলে শরিকদের সঙ্গে নিয়ে মানিয়ে চলার একটা বিষয় প্রথম থেকেই থেকে যাবে। কাজেই বিগত দুই লোকসভার মত এবারের লোকসভার অধিবেশন একতরফা হবার সম্ভাবনা অনেকটাই কম।

সংসদের অধিবেশন শুরু হবার পরেই প্রথম সমস্ত সদস্যরা শপথবাক্য পাঠ করবেন। যাতে কমপক্ষে তিন দিন সময় লাগবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এর পরেই সংসদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে স্পীকার নির্বাচন। এখনও পর্যন্ত অষ্টাদশ লোকসভায় স্পীকার কে হবেন বা কোন দল থেকে হবেন তা ঠিক হয়নি।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে স্পীকার পদের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে সংসদের অধিবেশন চলাকালীন বহু কিছুই স্পিকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। ফলে স্পীকার পদ ছাড়তে নারাজ বিজেপি। যদিও বিজেপির অন্য দুই জোটসঙ্গী চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম (১৬ আসন) এবং নীতিশ কুমারের জেডি(ইউ) (১২ আসন) স্পীকার পদের দাবি জানিয়েছে। কেউই নিজেদের দাবি থেকে সরতে রাজি নয়। যা নিয়ে সংসদ উত্তপ্ত হলেও হতে পারে এবং বিজেপি যদি স্পীকার পদ শরিকদের ছাড়তে রাজি না হয় সেক্ষেত্রে জোট সমীকরণ কী দাঁড়াবে তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। কারণ নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকার কারণে শরিকদের চটানো এই মুহূর্তে সম্ভব নয় বিজেপির পক্ষে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রশ্নে এই দুই জোটসঙ্গীকে বিজেপির দরকার। আগামী ২৬ জুন সংসদে স্পীকার নির্বাচনের কথা। তার আগে ২৫ জুন দুপুর ১২টার মধ্যে স্পীকার পদের জন্য নাম প্রস্তাব করতে হবে। স্পীকার নির্বাচনের দিন যদি ভোটাভুটি হয় সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে থাকার কথা।

এখনও পর্যন্ত যা খবর তাতে স্পীকার পদ ছাড়বে না বিজেপি। সেক্ষেত্রে তেলেগু দেশম বা জেডিইউ-এর সঙ্গে কোন পথে সমঝোতা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। স্পীকার পদের পাশাপাশি বিরোধীরা ইতিমধ্যেই দাবি জানিয়েছে ডেপুটি স্পীকার পদের জন্য। যা নিয়ে যথেষ্ট জলঘোলা হতে পারে। এখনও পর্যন্ত স্পীকার হিসেবে নাম উঠে এসেছে সপ্তদশ লোকসভার স্পীকার ও বিজেপি নেতা ওম বিড়লা, অন্ধ্রপ্রদেশের বিজেপি নেত্রী ডাগগুবতী পুরন্দেশ্বরী এবং তেলেগু দেশম নেতা জি এম হরিশ বালাযোগীর।

স্পীকার নির্বাচন প্রসঙ্গে ইন্ডিয়া মঞ্চের পক্ষ থেকে শিবসেনা উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠীর নেতা সঞ্জয় রাউথ স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন যদি তেলেগু দেশমের প্রার্থী স্পীকার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সেক্ষেত্রে ইন্ডিয়া মঞ্চ তাঁকে সমর্থন দেবে। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতা অশোক গেহলট জানিয়েছেন, যদি স্পীকার পদে বিজেপিই থেকে যায় সেক্ষেত্রে তেলেগু দেশম এবং জেডিইউ সাংসদদের কেনাবেচা দেখতে হতে পারে।

স্পীকার নির্বাচনের আগে পর্যন্ত সংসদের কাজ পরিচালনা করবেন প্রোটেম স্পীকার। সাধারণভাবে সংসদের প্রবীণ কোনও সদস্যকে প্রোটেম স্পীকারের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এছাড়াও লোকসভায় বিরোধী দলনেতা কে হবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। নিয়ম অনুসারে বিরোধী দলনেতার পদ পেতে গেলে সংসদের মোট আসন সংখ্যার দশ শতাংশ আসন পেতেই হয়। সেই হিসেবে এবার বিরোধী ইন্ডিয়া মঞ্চের প্রধান শরিক কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ১০০ (এক নির্দল কংগ্রেসে যোগ দেবার পর)। সুতরাং বিরোধী দলনেতার পদ কংগ্রেসই পাবে। যদিও এখনও পর্যন্ত যা খবর তাতে রাহুল গান্ধী বিরোধী দলনেতার পদ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক নন। সেক্ষেত্রে বিরোধী দলনেতা কে হবেন তা নিয়ে জল্পনা আছে। একাধিক নামও এই তালিকায় আছে। যাদের মধ্যে আছেন গৌরব গগৈ, মণীশ তিওয়ারি এবং কুমারী শৈলজার নাম। যদিও সকলেরই পছন্দের তালিকায় প্রথমে আছেন রাহুল গান্ধী।

ইতিমধ্যেই রাহুল গান্ধী ওয়াইনাড আসন ছেড়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন। সেই কেন্দ্র থেকে লড়াই করবেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা। রাজনৈতিক মহলের অনুমান প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা ওই আসন থেকে সহজেই জয়ী হবেন। তাই আপাতত কাউকে বিরোধী দলনেতা করে পরবর্তী সময় প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরাকে লোকসভায় বিরোধী দলনেতা করলেও অবাক হবার কিছু নেই। যদিও তার জন্য আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন।  

এবারের অধিবেশনেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুরমু সংসদের যৌথ অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন। আগামী ২৭ জুন সেই যৌথ অধিবেশন হবার কথা। যেখানে আগামী পাঁচ বছরে নতুন সরকারের দিশা সম্পর্কে তিনি আগাম ধারণা দেবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতির ভাষণের পরেই মন্ত্রীসদস্যদের সঙ্গে সভার সদস্যদের পরিচয় করাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরপর শুরু হবে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের ওপর ধন্যবাদ জ্ঞাপন।

মূলত এই জায়গা থেকেই এবারের সংসদে উত্তাপ বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ের নীট দুর্নীতি অথবা পশ্চিমবঙ্গের রেল দুর্ঘটনা প্রসঙ্গ বিরোধীরা তুলবেই। এই দুই বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাদানুবাদ হবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ফলে সংসদের প্রথম অধিবেশন থেকেই টানটান উত্তেজনা দেখা যেতে পারে।

মতামত লেখকের ব্যক্তিগত

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in