Gaza: হারিয়ে যাওয়া কম্পাস – গাজা সংকট ও সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা

People's Reporter: সংবাদমাধ্যমের এইরকম আচরণ যে একেবারে নতুন, তা বলা চলে না। আমরা ভারতীয়রা বিশেষ করে এর সঙ্গে বিশেষভাবে পরিচিত। তৃতীয় শ্রেণির সংবাদমাধ্যমগুলি হাওয়া বুঝে খবরের শিরোনাম পাল্টায় প্রতিনিয়ত।
গাজায় হাসপাতালে ইজরায়েলি আক্রমণ ছবি সৌজন্য - এক্স হ্যান্ডেল
গাজায় হাসপাতালে ইজরায়েলি আক্রমণ ছবি সৌজন্য - এক্স হ্যান্ডেলগ্রাফিক্স - আকাশ
Published on

‘ইজরায়েলের হামলায় হাসপাতালে নিহত শতাধিক’ – প্রথমে এই ছিল সংবাদপত্রের শিরোনাম। কয়েক ঘন্টা পরেই তা হয়ে দাঁড়ালো ‘গাজার হাসপাতালে আক্রমণ, নিহত অন্ততঃ ৫০০’। ঘড়ির ঘন্টার কাঁটা ডান দিকে আবার সরল কয়েক ঘাট। বেড়াল অচিরেই আবার রুমাল হল। পৃথিবী জানল তাজা খবরের নতুন শিরোনাম,’বিস্ফোরণে হাসপাতালে মৃত ন্যূনতম ৫০০’। অর্থাৎ প্রথমে মোছা হল আক্রমণকারীর নাম। তখনও ক্ষমা ঘেন্না করে ‘আক্রমণ’ যে একটা হয়েছে, তার স্বীকৃতি তবুও ছিল। সেও টিকল না। একটু পরে মুছে গেল আক্রমণ যে আদৌ হয়েছিল, তার স্বীকৃতিও। আর এই লেখা যখন লেখা হচ্ছে, ততক্ষণে গাজার হাসপাতালে বিস্ফোরণের দায়ও যদি গাজাবাসীরই ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয় তাতে নেহাত অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

সংবাদমাধ্যমের এইরকম আচরণ যে একেবারে নতুন, তা বলা চলে না। আমরা ভারতীয়রা বিশেষ করে এর সঙ্গে বিশেষ ভাবে পরিচিত। তৃতীয় শ্রেণির সংবাদমাধ্যমগুলি হাওয়া বুঝে খবরের শিরোনাম পাল্টায় প্রতিনিয়ত। তাই এখানে অবাক করার মতো বিষয় এটা নয় যে হাওয়া বুঝে একটি সংবাদমাধ্যম শিরোনাম পাল্টেছে। অবাক হওয়ার মতো বিষয় হল, সংবাদমাধ্যমটি নেহাত হেঁজিপেঁজি কোনও সংস্থা নয়, খোদ ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’।

এই ছোট্ট ঘটনা থেকেই আভাস পাওয়া যায়, সংবাদমাধ্যমের থেকে নেই নেই করেও যে ন্যূনতম নৈতিকতা মানুষ প্রত্যাশা করে, তা চিতায় উঠেছে গত ক’দিনে গাজা সংঘাতকে কেন্দ্র করে। এই দেশের নাগরিকদের অনেকেই, যাঁরা দেশীয় সংবাদমাধ্যমগুলির অষ্টপ্রহর একঘেয়ে প্রোপাগান্ডায় একপ্রকার বিরক্ত হয়েই চোখ রাখতেন বি.বি.সি বা ডি.ডাব্লিউ-তে চোখ বোলাতেন এন.ওয়াই.টি বা ওয়াশিংটন পোস্ট-এর খবরে, তাঁরা ‘নিরপেক্ষতা’-র আশা না করলেও প্রত্যাশা রাখতেন ন্যূনতম পেশাদারিত্বের। বিগত কয়েকদিনে প্যালেস্তাইন সংকটকে কেন্দ্র করে যে চূড়ান্ত লজ্জাজনক আচরণ এই সংবাদমাধ্যমগুলির তরফে দেখা গেল, তারপরেও এইপ্রকার কোনও প্রত্যাশা সুস্থবুদ্ধির মানুষের মনে অবশিষ্ট থাকার কথা নয়।

উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক ইসাম আবদাল্লাহ-এর ঘটনাটি। ইসাম পেশায় রয়টার্স-এর ভিডিওগ্রাফার, ইজরায়েলের গোলাবর্ষণে নিহত হয়েছেন খবর কভার করার সময়ই। অথচ খোদ ‘রয়টার্স’ শোকবার্তায় সুচারু ভাবে এড়িয়ে গেছে ‘ইজরায়েল’ নামটি। একথা জোরের সঙ্গে বলা যায়, ইসামের মৃত্যু হামাস-এর বুলেটে হলে রয়টার্স-এর তরফে হত্যাকারীর নাম সম্পর্কে এই অবাক করা মৌনতা অনুপস্থিত থাকত। শুধু কি মৌনতা ? একের পর এক সাংঘাতিক দায়িত্বজ্ঞানহীন ও সাংবাদিক নৈতিকতার পরিপন্থী অতিভাষণের প্রতিযোগিতায় নামতে দেখা গেছে একের পর সংবাদমাধ্যমকে।

উদাহরণ হিসেবে, জনৈক সাংবাদিক দাবি করেন হামাস চল্লিশ জন শিশুর মুন্ডচ্ছেদ করেছে। নিমেষে এই খবর ছড়িয়ে পড়ল সি.এন.এন থেকে বি.বি.সি সর্বত্র। এত গুরুতর খবর যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রিপোর্ট করার আগে যে একবার খতিয়ে দেখার প্রয়োজনও কেউ মনে করেলেন না। পরে যখন প্রমাণিত হল সংবাদটি মিথ্যা, খোদ ইজরায়েলি সেনাবাহিনী জানাল তাদের কাছে এইপ্রকার শিশুদের গণ-মুন্ডচ্ছেদের তথ্য নেই তখন ছোট্ট করে ক্ষমা চাইলেন বহু সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম। কিন্তু ততক্ষণে ঘৃণার আগুনে ঘৃতাহুতি দেওয়ার কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। অথচ, এর ঠিক বিপরীত কাজটি করারই তো দায়িত্ব ছিল সংবাদমাধ্যমগুলির।

বর্তমান সংকটের প্রাথমিক দিনগুলিতে, হামাস-এর হামলার ঠিক পরেই, বিশ্বের জনতার একটি বড়ো অংশ দাঁড়িয়েছিলেন ইজরায়েলের আক্রান্ত সাধারণ মানুষের পাশে। হামাস-এর নিরীহ মানুষের উপর হামলা, শান্তি কনফারেন্সে গুলি বর্ষণ, খুন ও অপহরণ খুব স্বাভাবিক ভাবেই বিশ্ববাসীর মধ্যে জন্ম দিয়েছিল গভীর সহানুভূতির। কিন্তু এই কঠিন প্রশ্ন সংবাদমাধ্যমগুলির করা জরুরি ছিল, এই সহানুভূতির ও জনমতের সুযোগ নিয়ে ইজরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ গ্লোবাল নর্থের তার সহযোগী শক্তিগুলি ঠিক কি করতে চলেছে ? এই প্রশ্ন তাঁরা করেননি।

এটা ঐতিহাসিক সত্য, ইজরায়েল বিংশ শতকের দ্বিতীয়ভাগ থেকেই পশ্চিমের মদতে পেশিবলে প্যালেস্তাইনের সাধারণ মানুষকে বুটে নিচে পিষ্ট করে নিজেদের বজ্রশাসন কায়েম করার যে নীতির বাস্তবায়নে রত। যে স্রোতের মতো প্রেক্ষিতহীন, অসত্য ও অর্ধসত্য তথ্যের বন্যা বিগত কয়েকদিন বিশ্বের আকাশ বাতাস মুখরিত করে তুলেছে, তা আদতে প্যালেস্তিনীয়দের গণনিধনের (অথবা গণবিতাড়নের) মাধ্যমে সেই নীতির বাস্তবায়নের পক্ষে জনমত নির্মাণেরই সর্বশেষ প্রচেষ্টা।

কার্যত গণবিতাড়নের তথা নিধনের স্বপক্ষে এই যে জনমত গঠনের প্রচেষ্টা, যার দ্বারা প্রভাবিত হয়েই আমরা মেনে নিয়েছি গাজায় বিদ্যুৎ,পানীয় জল ও খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করা অপরিহার্যতা, হামাস-এর মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের কাজের জন্য অসংখ্য সাধারণ গাজাবাসীর উপর অষ্টপ্রহর বোমাবর্ষণ ন্যায়ধর্ম। আমাদের এই প্রভাবিত হওয়া থেকে আটকাতে বিরুদ্ধ স্বর তো উঠে আসার কথা ছিল পেশাদারি সংবাদমাধ্যমগুলির কন্ঠ থেকেই। তাঁদেরই তো দায় থাকে ‘রাজা তোর কাপড় কোথায় ?’, সেই প্রশ্ন তোলার।

আমাদের দুর্ভাগ্য, তাঁরা সেই প্রশ্ন তোলেননি। মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলি নিজেদের কাজে শুধু সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন তাই নয়, নিজেদের যে-টুকু নৈতিকতা, পেশাদারিত্ব অবশিষ্ট ছিল তা জলাঞ্জলি দিয়ে জাতিগত নিধনের এই ‘যৌক্তিক ভাষ্য’ নির্মাণের প্রক্রিয়ার শরিক হয়েছেন। তাঁরা আমাদের জানাতে ভুলে গেছেন ১৯৪৮ থেকে ঘটে চলা প্যালেস্তাইনের ইতিহাসের কাহিনী, ‘নাকবা’-র সময় লক্ষ লক্ষ মানুষের ছিন্নমূল হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণার কথা।

তাঁরা বলতে ভুলে গেছেন কিভাবে ‘মোসাদ’ ১৯৭০-এর দশক থেকে ধর্মনিরপেক্ষ প্যালেস্তিনিয়ান জাতীয় আন্দোলনকে দুর্বল করার লক্ষ্যে হামাস-কে সমর্থন করে গেছে সুদীর্ঘকাল। যে কালসর্প একদা তুমি নিজে দুগ্ধ-কদলী দিয়ে প্রতিপালন করেছ নিজ স্বার্থে, তা শুধু তোমার শত্রুদেরই দংশন করবে, এ ভাবা মূর্খতা – এই চিরসত্য তাঁরা বলতে বেমালুম ভুলে গেছেন। এই ভুল (?) থেকেই তাঁদের ভাষ্য তালগোল পাকিয়ে গেছে। তাই তাঁদের দর্শক বা পাঠকদের সুবিধার্থে (!) উপস্থাপিত ইতিহাসের পাতায় শুধুই ২০০০ পরবর্তী হামাস আছে, নেই জর্জ হাবাশ বা ঘাসান কানফানি, নেই পি.এল.ও বা ডি.এফ.এল.পি। নেই ক্যাম্প ডেভিড বা অসলো অ্যাকর্ড-এর কথা। তাঁরা একবারও বলার প্রয়োজন বোধ করেননি, কি করে ইজরায়েলের সরকার গুপ্তহত্যা এবং কারাদন্ড প্রদানের মাধ্যমে প্যালেস্তাইনের রাজনীতিতে যারা শান্তিপূর্ণ ভাবে এই সমস্যার সমাধানে উৎসাহী ছিলেন, তাঁদেরকে একে একে সরিয়ে দিয়েছে রাজনীতির আঙিনা থেকে।

প্যালেস্তাইনে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আগ্রহী ধর্মনিরপেক্ষ সকল শক্তিকে ধ্বংস অথবা রাজনৈতিক ভাবে ভয়ংকর দুর্বল করে দেওয়ার পর, সেই শূন্যস্থান যে হামাস-এর মতো একটি অস্ত্র ও রক্তপাতের মাধ্যমে সমাধানে বিশ্বাসী উগ্র ইসলামিস্ট শক্তি দখল করেছে, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করার কোনও অধিকারই ইজরায়েলের নেই – একথা তাঁদের সোচ্চারে বলা উচিৎ ছিল। দুর্ভাগ্য, তাঁরা তা বলেননি। বরং তাঁরা আপ্রাণ ভাবে প্রতিপন্ন করার প্রচষ্টা করে চলেছেন ইজরায়েল এতকাল শান্ত সভ্য ভাবে হাত গুটিয়ে বসেছিল, তারা কোনওদিন নিরীহ মানুষের গায়ে হাত দেয়নি। নিরীহ মানুষদের লক্ষ্য করে হত্যালীলা চালায় শুধু হামাস।

এই তথ্য আমাদের জানাতে সংবাদমাধ্যমগুলি বেমালুম ভুলে গেছে, ২০০৬ থেকে ইজরায়েল গাজার উপর বারংবার বিনা প্ররোচনায় আকাশপথে অনল বর্ষণ করেছে। ২০০৬-এর জুন মাসে ‘অপারেশন সামার রেইন্স’, অক্টোবর-নভেম্বরে ‘অপারেশন অটাম ক্লাউডস’, ২০০৮-এর ফেব্রুয়ারি-মার্চে ‘অপারেশন হট উইন্টার’, ২০০৮-এর ডিসেম্বর থেকে ২০০৯-এর জানুয়ারির মধ্যে অপারেশন কাস্ট লেড’, ২০১২-এর মার্চ মাসে ‘অপারেশন রানিং একো’, ২০১২-এর নভেম্বরে ‘অপারেশন পিলার অফ ক্লাউড’, ২০১৪-এর জুলাই-আগস্টে ‘অপারেশন প্রোটেক্টিভ এজ’, ২০১৯-এর নভেম্বর মাসে ‘অপারেশন ব্ল্যাক বেল্ট’, ২০২২-এর আগস্ট মাসে ‘অপারেশন ব্রেকিং ডন’, ২০২৩-এর মে মাসে ‘অপারেশন শিল্ড অ্যান্ড অ্যারো।

বছর আসে, বছর  যায়, গাজার উপর নির্বিচারে বোমা বর্ষণে সাধারণ নিরীহ মানুষের মৃত্যুমিছিল পৃথিবী দেখেও না দেখার ভান করে। আজ হামাসের সন্ত্রাসবাদী হামলায় নারী ও শিশু সহ ইজরায়েলের নিরীহ মানুষের মৃত্যুতে সংবাদমাধ্যমগুলি বলছে আমাদের শিহরিত হতে, সহানুভূতি দেখাতে, ক্রোধান্বিত হতে। এর একটা দাবিতেও ভুল নেই। কিন্তু একথা বলার পরেও এই নিবন্ধের লেখক যখন দেখেন, এই শোক ও ক্রোধ প্রকাশ করছে যে সকল সংবাদমাধ্যমগুলি, তাঁরাই ইজরায়েলি হামলায় বিগত শুধু পনেরো বছরে যে হাজার হাজার একই রকম নিরীহ, নিরাপরাধ নারী ও শিশু সহ নিরীহ মানুষের মৃত্যু সম্পর্কে আশ্চর্যজনক ভাবে নিশ্চুপ ও মন্তব্য করতে নারাজ – তখন তাঁদের নৈতিক পচনের মাত্রা সম্পর্কে সন্দেহ থাকে না।

এই পচনই তাঁদের বলতে বাধা দেয় ‘ইউনাইটেড নেশনস’-এর ‘অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অফ হিউম্যানিট্যারিয়ান অ্যাফেয়ারর্স’ সংক্ষেপে O.C.H.A-এর একটা পরিসংখ্যান। ইজরায়েলের হামলায় গাজায় নিরীহ মানুষের মৃত্যুর একটি হিসেব ২০০৮ থেকেই এই সংস্থা রাখছে। ইজরায়েলের হামলায় ২০০৮ থেকে ২০২৩-এর মধ্যে গাজায় মোট মৃত্যু সংখ্যা ৫,৩৬৫। এর মধ্যে ২৫%-ই নারী, শিশু অথবা মহিলা।

যদি প্যালেস্তিনিয়ান সরকারের পরিসংখ্যান দেখি, তাহলে সংখ্যাটি আরও বেশি। তবে তা বাদ দিয়েও, শুধু U.N-এর পরিসংখ্যান থেকেও যে কোনও মানুষের কাছে স্পষ্ট, ইজরায়েলি বাহিনী যা করেছে ও করে চলেছে তা হামাসের থেকে বিন্দুমাত্র কম নৃশংস নয়। মনুষ্যত্বের লাঞ্ছনার যে দোহাই দিয়ে আমাদের ইজরায়েলের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে বলা হচ্ছে, সেই দোহাই বিপরীত দিকে বিন্দুমাত্র কম প্রযোজ্য হয় না, বরং অনেক বেশিই হয়।

বরং এই ক্ষেত্রে ইজরায়েলি বাহিনীর দায় আরও অধিক। গাজায় শেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৬ সালে। তাতেও হামাস ভোট শতাংশের নিরিখে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেনি। তারপর বহু বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। গাজার অধিকাংশ (৫০%-এর অধিক) জনতার বয়স ১৮ বা তার নিচে। যুব সম্প্রদায় তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার কোনদিনই সুযোগ পায়নি (মোট জনতার ৭৫%-এর বয়স ৩০-এর নিচে)। এই পরিসংখ্যান সত্ত্বেও যখন আমরা দেখি সংবাদমাধ্যম তোতাপাখির মতো ইজরায়েলের রাষ্ট্রপতি আইজ্যাক হের্জগের ভাষ্য আওড়িয়ে আমাদের সামনে তুলে ধরে ‘গাজা = হামাস’, আর একমুখে মনুষ্যত্বর দোহাই দিয়ে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়াতে বলেই আরেকমুখে হামাসের পাপের যৌথ শাস্তি হিসেবে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষকে রাতারাতি বাস্তুচ্যুত করার যুক্তি সাজায়, তখন সেই সীমাহীন দ্বিচারিতার স্পর্ধা দেখে রাগে দুঃখে মৌন হয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

অথচ, তাঁদেরই এই সত্য তুলে ধরার দায়িত্ব ছিল। সোচ্চারে বলা উচিৎ ছিল, হামাস সামগ্রিক ভাবে প্যালেস্তিনিয়ান জনতার প্রতিনিধিত্ব করে না এবং ইউ.এন স্বীকৃত প্যালেস্তিনিয়ান অথরিটির বিরুদ্ধেও তারা পূর্বে অস্ত্র ধারণ করেছে। এর পাশাপাশি তাঁদের এই কথাও বলা উচিৎ ছিল, হামাস প্যালেস্তাইনের প্রতিনিধিত্ব না করলেও ইজরায়েলের বাহিনী অবশ্যই নির্বাচিত ইজরায়লের সরকারের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই ইজরায়েলের সরকারের সিদ্ধান্তক্রমে ও গ্লোবাল নর্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ তার সহযোগী রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতা বলে বলীয়ান হয়ে যে নির্বিচার হত্যালীলা শুধু বিগত দেড় দশকেই এই বাহিনী চালিয়েছে তার আরও কঠোর নিন্দা কেন হবে না ?

ইজরায়েলের বাহিনীর সমালোচনা করতে এতো সংকোচ কেন ? হামাসকে যথার্থভাবেই যদি নিরাপরাধ মহিলা ও শিশু নিধনের জন্য নিন্দা করা হয়, একই অপরাধে ইজরায়েলকে নিন্দা করতে দ্বিধা কিসের ? হামাস-এর রকেট হামলাকে যদি আমরা সন্ত্রাসবাদ বলতে পারি, ইজরায়েলের হাসপাতাল আর স্কুলে এয়ার স্ট্রাইক করা আর সাদা ফসফরাস ছড়ানোকে সন্ত্রাসবাদ বলতে এতো অনীহা কেন ?

অধ্যাপক ইলান প্যাপে, ইজরায়লের হাইফা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন। কঠিন সত্য আর সহজ মিথ্যার মধ্যে প্রথমটির পক্ষ নেওয়ার জন্য তাঁকে স্বদেশ ছাড়তে হয়েছিল দেশদ্রোহিতার অভিযোগ মাথায় নিয়ে। সম্প্রতি তাঁর একটি লেখা পড়ার সুযোগ হলো। বর্তমান সংকটের পরিস্থিতিতেও তিনি কলম ধরেছেন। লিখেছেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে, শান্তির পক্ষে। আবারও জোর দিয়ে বলেছেন নাগরিক সম-অধিকারের ভিত্তিতে সব অবরোধ, প্রহরা ও পাঁচিল মুছে দিয়ে একটিই রাষ্ট্র গড়ার মধ্যে দিয়ে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে। এই রাষ্ট্রে আবার ফিরে আসবেন দশকের পর দশক নিজের দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়া প্যালেস্তিনিয়ানরা। আরব আর ইহুদিরা হবে শত্রু নয়, সহ-নাগরিক।  

বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর বক্তব্য অবাস্তব, নিছক দিবাস্বপ্ন। তিনি নিজেও তা জানেন। তবুও লিখতে ভোলেননি, মূলগত মনুষ্যত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে অবস্থানের দিকে আমাদের নৈতিক কম্পাস নির্দেশ করে, কঠিন হলেও পথ চলা উচিৎ সেইদিকেই, অবস্থান নেওয়া উচিৎ তার পক্ষেই। এই কম্পাসই আজ বিশ্বের তাবড় তাবড় সংবাদমাধ্যমগুলি কম্পাস হারিয়ে ফেলেছে। তাদের পাল্লায় পড়ে, আমরা, যারা সাধারণ মানুষ, তাঁদেরও যাতে সেই কম্পাস খোয়া না যায় সেইদিকে সতর্ক থাকা একান্তই জরুরি।     

গাজায় হাসপাতালে ইজরায়েলি আক্রমণ ছবি সৌজন্য - এক্স হ্যান্ডেল
Gaza: ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে ইজরায়েলি বিমান হানা, মৃত অন্তত ৫০০, নিন্দায় সরব আন্তর্জাতিক মহল
গাজায় হাসপাতালে ইজরায়েলি আক্রমণ ছবি সৌজন্য - এক্স হ্যান্ডেল
Palestine Israel Conflict: ইজরায়েল- প্যালেস্টাইন দ্বন্দ্বে মৃত কমপক্ষে ১৫০০

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in