দশ কিলোমিটার দূরত্ব। মাস দুয়েক আগেও যে রাস্তা অ্যাপ ক্যাবে অনায়াসে ২১০-২০ টাকায় যাতায়াত করা যেত সেই ভাড়া এখন গড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮০-৯০ টাকা। বেশিরভাগ সময়েই ৩০০টাকার ওপরে। এমনকি সন্ধ্যে হয়ে গেলে ৫৫০ টাকাও হয়ে যায়। উবের কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, অতিরিক্ত চাহিদার জন্য ভাড়া বেশি। কিন্তু কত বেশি? হলুদ ট্যাক্সিতে সাড়ে দশ কিলোমিটারের ভাড়া ওঠে ১৬০-৬৫ টাকা। কোন জাদুবলে সারজ প্রাইসের দোহাই দিয়ে অ্যাপ ক্যাবে তা দ্বিগুণ, তিনগুণ হয়ে যায়? এ প্রশ্ন সাধারণ যাত্রীদের। বিশেষ করে, নিজেদের দৈনন্দিন যাতায়াতের জন্য যারা অ্যাপ ক্যাবেই ভরসা রাখেন।
বেশি ভাড়া ছাড়াও ইদানীং বেড়েছে উবের চালকদের অভব্যতা। একে তো বেশি ভাড়া। কোনো গাড়িতেই এসি চলেনা। নিয়ম মেনে একজন যাত্রী নেমে যাবার পর প্রায় কোনো গাড়িই স্যানিটাইজ করা হয় না। এরওপর এখন শুরু হয়েছে রিফিউজাল। একইদিনে আটবার রিফিউজালের পর নবম গাড়িতে যেতে পেরেছেন কোনো যাত্রী – এরকম নজিরও আছে।
এখন উবের বুক করলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রথমে চালকের ফোন চলে আসে – ‘আপনি কোথায় আছেন?’ তার জবাব দিলেই পরের প্রশ্ন ‘ক্যাশ দেবেন না অনলাইন?’ ‘কত ভাড়া দেখাচ্ছে?’ এবং সবশেষে আসল প্রশ্ন ‘ড্রপ লোকেশন কোথায়?’ উবের বুক করেছেন নাকি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন বুঝেই ওঠা যাবে না। আপনার গন্তব্য চালকের মনমত না হলেই বুকিং ক্যানসেল। অনেক সময় চালক যাবেন না বলার পরেও ক্যানসেল না করে ইচ্ছাকৃত বসে থাকেন। যাতে আপনি বিরক্ত হয়ে ক্যানসেল করে দেন। যদিও উবেরের নিয়ম অনুসারে চালক কখনোই যাত্রীকে গন্তব্য জিজ্ঞেস করতে পারেন না। অথচ এই ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে। যারা রোজ অ্যাপ ক্যাব ব্যবহার করেন তাঁদের শতকরা ৯৯ জন ভুক্তভোগী। যদিও মুক্তির পথ জানা নেই কারোরই। না প্রশাসন, না উবের – যাত্রীদের জন্য ভাবার কেউ নেই। উবের কর্তৃপক্ষ যে কিছুই জানেন না এরকমটা নয়। কিন্তু তাদের ব্যবসা যেহেতু আটকাচ্ছে না তাই তাঁরাও সম্ভবত বিশেষ চিন্তিত নন এই বিষয়ে।
হলুদ ট্যাক্সি, অটো-র উৎপাত থেকে বাঁচতে মানুষ বেছে নিয়েছিলেন অ্যাপ ক্যাব। কিছুটা বেশি খরচ করেই যাতায়াতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন শহরের মানুষ। যদিও গত কয়েক মাসে একদিকে যেমন মাত্রাছাড়া ভাড়া বাড়িয়েছে উবের তেমনই শুরু হয়েছে একশ্রেণীর উবের চালকের অভব্যতা। সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে একটু চোখ রাখলেও মানুষের ক্ষোভের প্রকাশ পাওয়া যাচ্ছে। যদিও উবেরের কাছে যাত্রীদের ক্ষোভ জানানোর সুযোগ সীমিত। যেখানে উবেরের সাজিয়ে দেওয়া প্রশ্নমালা অনুসারেই আপনি উত্তর দিতে পারবেন। নিজের অভিযোগ জানানোর খুব একটা সুযোগ নেই।
অ্যাপ ক্যাবের মতই অবস্থা অটোতেও। নোনাপুকুর ট্রাম ডিপো থেকে এলিট – আগে অটো ভাড়া ছিলো ১২ টাকা। কোভিডের সময় ভাড়া বেড়ে হয়েছিলো ১৭ টাকা। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিলো যেহেতু কম সংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে হবে তাই ক্ষতি পোষাতে ভাড়া বৃদ্ধি। এখন অটো ফিরে গেছে আগের জায়গাতেই। চার জন, পাঁচ জন। অথচ ভাড়া ১৭ টাকাই আছে। কেন ভাড়া কমেনি সে প্রশ্নের উত্তর দেবার কেউ নেই। দেখারও কেউ নেই।
অটোর পথে হেঁটেই ন্যূনতম বাসভাড়া বেড়েছে গড়ে ৩ টাকা। কোনো বেসরকারি বাসেই এখন আর ৭ টাকা কোনো ভাড়া নেই। উঠলেই ১০ টাকা। এই ভাড়াও বেড়েছিলো কোভিডকে ঢাল করে। যেহেতু কম সংখ্যক যাত্রী বাসে উঠবেন তাই মালিকদের খরচ পোষাতে ভাড়া বৃদ্ধি। এখন আর নিয়মের কোনো তোয়াক্কা নেই। বাদুড়ঝোলা বাসে ন্যূনতম ১০ টাকা দিয়েই যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ। বহু বাসরুটেই বিভিন্ন স্টেজে বিভিন্ন রকম ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। যদিও সরকারিভাবে কোনো ভাড়া বাড়ানো হয়নি। কিন্তু ওই যে। দেখার কেউ নেই। অতএব কে শোনে কার কথা।
শেষ কবে কেউ হলুদ ট্যাক্সিতে মিটারে গেছেন অনেক ভেবেও বোধহয় বের করতে পারবেন না। কারণ নাকি তেলের দাম বেড়েছে। সরকার ভাড়া বাড়ায়নি। তাই কোনো হলুদ ট্যাক্সি আর মিটারে যাবেনা। গেলেও যা মিটার হবে তার থেকে ন্যূনতম ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দিতে হবে। এছাড়াও আছে ইচ্ছেমত দুগুণ, তিনগুণ ভাড়ার দাবি। এরপর পছন্দমত রুট না হলে তাঁরা যাবেন না। ধরে নিন আপনি ১০ কিলোমিটার দূরত্বের কোনো জায়গায় যাবেন। মিটার মেরেকেটে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা উঠবে। বহু ট্যাক্সিই সেটা ২৫০ থেকে শুরু করে ৩৫০, ৪০০ – যার যেমন ইচ্ছে হাঁক পাড়েন। একটু সন্ধ্যে হয়ে গেলে তো কথাই নেই। তখন গ্যাঁটের কড়ি খরচা করে বাবা বাছা করে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টায় নাজেহাল যাত্রীরা। এই যন্ত্রণার শেষ কবে?
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন