Bangladesh: বাংলাদেশে সরকারের ইস্তফার দাবিতে এবার কি ঢাকা অবরোধে যাবে বিরোধীরা?

এদিনের সমাবেশ থেকে শনিবার (২৯ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার সব প্রবেশ পথে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা করেছে।
ঢাকায় বিএনপি-র মহাসমাবেশ
ঢাকায় বিএনপি-র মহাসমাবেশছবি জি কে সাদিক
Published on

গত ১২ জুলাই রাজধানী ঢাকার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা করে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। ওই মঞ্চ থেকেই বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সরকারের ইস্তফার দাবিতে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা করে।

তারই ধারাবাহিকতায় আজ (২৮ জুলাই) বিএনপি ঢাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করেছে। এই সমাবেশ থেকে শনিবার (২৯ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার সব প্রবেশ পথে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা করেছে। এই সাথে সরকারের ইস্তফার দাবিতে বিএনপি-র এক দফা আন্দোলনের সাথে সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোও এই কর্মসূচি পালন করবে।

এর আগে সারাদেশের বিএনপি-র ৮২টি সাংগঠনিক ইউনিট থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় মহাসমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় আসে। এর ফলে সরকারের ইস্তফার দাবিতে বিএনপি ঢাকা অচল করে দিতে পারে এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। এই আশঙ্কা থেকেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সতর্ক অবস্থান নেয়। বিএনপি যেন এমন কিছু করার জন্য মাঠ ফাঁকা না পায় সে লক্ষ্যে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে লড়াইয়ের ময়দানে ছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও।

দুই দলের এমন পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে ঢাকায় রাজনৈতিক হিংসার শঙ্কাও তৈরি হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত তেমন সংঘাত দেখতে হয়নি। যদিও এদিনের সমাবেশের পর বিএনপি ও তার আন্দোলনের শরিক বিভিন্ন দল ও জোটগুলো সারাদেশ থেকে ঢাকার প্রবেশ পথে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা করেছে। এর ফলে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, বিএনপি কি এবার সারাদেশ থেকে রাজধানী ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার মতো কিছু করতে যাচ্ছে?

তবে এমনটা নাও হতে পারে। যেমন বিএনপি মহাসমাবেশ থেকে ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি শুরু করতে পারে বা সরকারের ইস্তফার দাবিতে ঢাকা অচল করে দিতে পারে শাসক দল থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও সাধারণ জনগণের মাঝেও এমন শঙ্কা ছিল। অন্যদিকে বিএনপির সমাবেশে সারাদেশ থেকে লোক সমাগমও ব্যাপক হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি তেমন কিছু করেনি। সরকার বিএনপির পক্ষ থেকে হিংসার আশঙ্কা করলেও তেমনটা ঘটেনি। বরং কোনো ধরনের হিংসা বা সংঘাত না করে বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছে।

এটা এ কারণেও হতে পারে যে, বিএনপি সরকারের ইস্তফার দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে দলীয় ক্ষমতা যাচাই করছে। আবার এমনটাও হতে পারে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিএনপি এই বার্তা দিতে চাচ্ছে যে, তাদের দাবির পক্ষে ব্যাপক লোক সমাগম হয়েছে এবং তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারে কাছে তাদের দাবির বাস্তবায়ন চাচ্ছে।

বিএনপির সাথে সারাদেশের মানুষ এই সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইছে এমন বার্তাও দিতে চাইছে দলটি। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে এতো দিন বিএনপির প্রতি রাজনৈতিক হিংসার যে অভিযোগ তোলা হতো বিএনপি সেটাকেও প্রমাণ করে দিলো যে তারা ব্যাপক জনসমাগম করে কর্মসূচি করলেও সেটা রাজনৈতিক সংঘাতের দিকে যায় না, যদি না আইনশৃঙ্খালা বাহিনী বা সরকারি দলের পক্ষ থেকে হিংসার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। এই সব সম্ভাবনা আলাদা আলাদাভাবে বিএনপির লক্ষ্য থাকতে পারে, আবার তারা সবগুলোই যাচাই করে দেখছে এরকমও হতে পারে।

বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সব সময় রাজনৈতিক হিংসার যে অভিযোগ করতো তা যে পুরোপুরি ঠিক নয় বিএনপি এই মহাসমাবেশ থেকে সেটাও দেশের মানুষের কাছে ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরলো। অন্যদিকে দেশের সাধারণ মানুষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিএনপি এই বার্তা দিতে পারলো যে, গত ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকলেও দলের সাংগঠনিক ভিত্তি বেশ পোক্ত আছে। এবং আওয়ামী লীগ যেমনটা বলে যে, বিএনপির মাজা ভেঙে গেছে বাস্তব পরিস্থিতি তেমন নয়। বরং বিএনপি তার মহাসমাবেশ থেকে এবং সাম্প্রতিক বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, তারা ক্ষমতার বাইরে থাকলেও সাংগঠনিভাবে এখনো বেশ মজবুত এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা আওয়ামী লীগকে ব্যাপক ব্যবধানে পরাজিত করে ক্ষমতায় আসার মতো শক্তি রাখে।

২৯ জুলাই বিএনপি ঢাকার প্রবেশ পথে যে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা করেছে এই কর্মসূচি থেকেও হয়ে তারা সারাদেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার মতো অবস্থানে যাবার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ দেশের মানুষ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হয়তো বিএনপি এই বার্তা দিতে চাইছে যে তারা জনগণকে সাথে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতে আন্দোলন করছে। অন্যদিকে বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘিরে যে রাজনৈতিক সংঘাত হবে সেটার জন্যও শাসক দলকে দায়ী করার একটা পরিস্থিতি বিএনপি তৈরি করতে চাচ্ছে হয়তো।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আগামী ডিসেম্বর বা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে সংবিধান মেনে বর্তমান সরকারের অধীনেই যে কোনও উপায়ে জাতীয় নির্বাচন করার ঘোষণা করেছে। ফলে বিএনপির চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করার আগে সরকার আগাম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘোষণা করতে পারে। আর এই নির্বাচনে সরকার পক্ষীয় বেশ কিছু দল অংশ নেবে তা এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়েছে।

ফলে আওয়ামী লীগও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করতে পারে। আর সেই চেষ্টা রুখতে বিএনপি সুযোগ বা পরিস্থিতি অনুকূলে পেলে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার মতো কর্মসূচিতে যেতেই পারে।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in