ভারতের ৮৫ শতাংশ মানুষ বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব অনুভব করছেন। ২০২১-২২ সালের থেকে ১১ শতাংশ বেড়েছে এই সংখ্যা। সম্প্রতি ‘ইয়েল প্রোগ্রাম অন ক্লাইমেট চেঞ্জ কমিউনিকেশন’ –এর নতুন প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্য অনুসারে, ২১৭৮ জন উত্তরদাতাদের তিনজনের মধ্যে একজন (৩৪ শতাংশ) বলেছেন, আবহাওয়া-সম্পর্কিত বিপর্যয় যেমন প্রবল গরম, খরা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বন্যার ইত্যাদি নানা কারণে ইতিমধ্যেই তারা নিজেদের বাসস্থান ছেড়ে ভিন্ন জায়গায় পাড়ি দিয়েছেন বা পাড়ি দেওয়ার কথা ভাবছেন।
চলতি বছরে ভারতের কিছু অংশে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। মনুষ্য সৃষ্ট গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে প্রতি দশকে গড়ে ০.২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দশকে (২০১৪-২০২৩) ১.১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ। ২০১৩-২০২২-এর মধ্যে ১.১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছিল। নতুন গবেষণা অনুযায়ী, ভারতীয়রা তাদের জীবন এবং জীবিকার উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন গোটা দক্ষিণ এশিয়ার কাছে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন সরাসরি মানুষকে ঘরছাড়া করছে বা তাদের কষ্টকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। যার ফলে তারা বাসস্থান পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছে।
এই সমস্ত দেশগুলিতে জলবায়ুর পরিবর্তন সংক্রান্ত অভিবাসনের কারণগুলি হল- বাংলাদেশে নদীর তীরে ধস, পাকিস্তান ও ভারতে বন্যা, নেপালে হিমবাহ গলে যাওয়া, ভারত ও বাংলাদেশে সমুদ্রের এগিয়ে আসা, বৃষ্টি না হওয়া, শ্রীলঙ্কায় ধানজমি ও চা বাগানে স্বাভাবিকের চেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত, ঘূর্ণিঝড় এবং অস্বাভাবিক তাপমাত্রা।
দক্ষিণ এশিয়ার ক্ল্যাইমেট অ্যাকশান নেটওয়ার্কের ২০২০ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, জলবায়ুর এই পরিস্থিতি থাকলে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতের ৪৫ মিলিয়ন মানুষ বাসস্থান পরিবর্তন করবেন।
ইয়েলের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের অভিবাসনের মূল কারণগুলি হল - তীব্র তাপপ্রবাহ (৮৫ শতাংশ), খরা এবং জলের ঘাটতি (৮৫ শতাংশ), বায়ু দূষণ (৮৫ শতাংশ), দুর্ভিক্ষ এবং খাদ্যের ঘাটতি (৮৩ শতাংশ), ঘূর্ণিঝড় (৭৬ শতাংশ), বন্যা (৭১ শতাংশ), কৃষি কীটপতঙ্গ সংক্রান্ত রোগ (৮৭ শতাংশ), উদ্ভিদ ও প্রাণীজ প্রজাতির বিলুপ্তি (৮৬ শতাংশ)। রিপোর্ট অনুযায়ী, এই কারণগুলি পরবর্তিতে আরও বাড়বে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ভারতের ১৪ শতাংশ মানুষ ইতিমধ্যেই বাসস্থান ছেড়েছেন। এবং আরও ২০ শতাংশ মানুষ বাসস্থান পরিবর্তনের হওয়ার কথা ভাবছেন।
ভারতে বন্যা বা খরার ফলে বিপর্যস্ত মানুষদের পুনরুদ্ধারে দীর্ঘ সময় লাগে প্রশাসনের। এই কারণে বেশিরভাগ মানুষ অভিবাসন বেছে নিয়েছেন। উদারণস্বরূপ, আসামে বহ্মপূত্র নদের পাশে প্রতিবছর বন্যার কারণে বহু মানুষ নিজেদের পুরনো বাসা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ খরার কারণে অন্যত্র চলে গেছেন। এছাড়া প্রায় এক-চতুর্থাংশ বন্যা এবং ১০ শতাংশ শিলাবৃষ্টির কারণে অন্যত্র যেতে বাধ্য হয়েছেন।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ সালে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাসা পরিবর্তন করেছেন ভারতের ৫ মিলিয়ন মানুষ। ভারত সরকার ইতিমধ্যেই ২০৭০ সালের মধ্যে দেশকে কার্বন মুক্ত করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতির কিছুটা পূরণ করতে চাইছে৷ যদিও অনেকের মতে, এটা করার জন্য সরকারকে আরও অনেক কিছু করতে হবে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৮৫ শতাংশ মানুষের মতে কয়লার পরিবর্তে বায়ু এবং সৌর শক্তিতে বিদ্যুত উত্পাদন করলে বায়ু দূষণ হ্রাস হবে। অন্যদিকে, ৬১ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, এটি করলে ভারতে বেকারত্ব বাড়বে। ৫৮ শতাংশ বলেছেন, এর ফলে ভারতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হবে এবং ৫৭ শতাংশ বলছেন, এতে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন