এবার মহাকাশচারীদের ঘাম ও মূত্রের মতো শারীরিক বর্জ্য থেকে ৯৮ শতাংশ জল পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে পৌঁছল নাসা। গত সপ্তাহেই মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা তাদের এই সাফল্যের কথা জানিয়েছে। এবার থেকে মহাকাশে জলের আর কোনও সমস্যা থাকবে না বলে আশা করছে নাসা।
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য জল খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। বিশেষ করে মহাকাশচারীদের জন্য এটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মহাকাশে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেক মহাকাশচারীর দিনে প্রায় ৩.৭৮ লিটার জল দরকার। কিন্তু এত জল পৃথিবী থেকে সরবরাহ করা বেশ কঠিন ও অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ। ঠিক এই কারণে, মহাকাশে খুব বেশি দূর পর্যন্ত পাড়ি দেওয়া এখনও মানুষের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ।
কিন্তু নাসা দাবি করেছে, অবশেষে সেই সমস্যার সমাধান পাওয়া গিয়েছে। এবারে মহাকাশে উপস্থিত মহাকাশচারীদের ঘাম, মূত্রের মতো শারীরিক বর্জ্য থেকেই পুনরুদ্ধার করা যাবে জল। নাসার ইন্টারন্যাশনাল স্পেস সেন্টার (আইএসএস)-এ থাকা এনভায়রনমেন্টাল কন্ট্রোল অ্যান্ড লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম বা ইসিএলএসএস মানুষের শরীরের বর্জ্য থেকে প্রায় ৯৮ শতাংশ জল পুনরুদ্ধার করে দেখিয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বের প্রথমসারির এই মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।
নাসার মতে, ইন্টারন্যাশনাল স্পেস সেন্টারে থাকা এই ইসিএলএসএস এমন একটি হার্ডওয়ার যার মধ্যে একটি ওয়াটার রিকভারি সিস্টেম রয়েছে। এই সিস্টেম মানুষের শরীরের বর্জ্য জল সংগ্রহ করে ওয়াটার প্রসেসর অ্যাসেম্বলি (ডবলুপিএ)-তে পাঠায়। সেখানেই ওই বর্জ্য জল থেকে পুনরায় পানীয় জল উৎপাদিত হয়। কিন্তু কীভাবে? নাসা জানিয়েছে, এই সিস্টেমে আসলে একটি উন্নত মানের ডিহিউমিডিফায়ার রয়েছে যা মহাকাশযানে কেবিনের মধ্যে মহাকাশচারীদের শরীর থেকে নির্গত হওয়া নিশ্বাস ও ঘাম থেকে আর্দ্রতা সংগ্রহ করতে সক্ষম।
অন্যদিকে, আইএসএস-এ আরও একটি সিস্টেম রয়েছে যার নাম ইউরিন প্রসেসর অ্যাসেম্বলি (ইউপিএ)। এই সিস্টেমটি মানুষের মূত্র থেকে ভ্যাক্যুম ডিস্টিলেশন পদ্ধতিতে জল সংগ্রহ করে তা থেকে পানীয় জল পুনরুদ্ধার করে। এর আগে এই সিস্টেমে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতো, তা বেশ পুরনো। সেক্ষেত্রে মূত্র থেকে পানীয় জল পুনরুদ্ধার করা গেলেও তা যথেষ্ট ছিল না। কারণ, পুনরুদ্ধারের পরেও নির্দিষ্ট পরিমাণ মূত্রে আরও কিছুটা পুনরুদ্ধার যোগ্য জল বাকি রয়ে যাচ্ছিল। সেই জন্য সম্প্রতি ইউপিএ-এর সিস্টেমে একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্রাইন প্রসেসর অ্যাসেম্বলি (বিপিএ) ব্যবহার করা হয়েছে। এই নতুন প্রযুক্তি বিপিএ ব্যবহারের পর দেখা যাচ্ছে, এবার ইউপিএ সিস্টেমটি মূত্র থেকে ৯৮ শতাংশ জল পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হচ্ছে।
নিজেদের এই সাফল্যে অত্যন্ত খুশি নাসার ইঞ্জিনিয়ররা। মার্কিন মুলুকের এই মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, এবার থেকে মহাকাশ অভিযানগুলি আরও কম খরচে পরিকল্পনা করা যাবে। আর তার থেকেও বড় সুবিধা, এবার মহাকাশে গবেষণার ক্ষেত্রে দূরত্ব আর বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। এবার চাঁদ ও লাল গ্রহ মঙ্গলের গণ্ডি ছাড়িয়ে খুব সহজেই আরও দূরে পাড়ি দিতে পারবে মানুষ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন