‘ডিজিটাল গ্রেফতারি’ নিয়ে মোদীর উদ্বেগের পরেই উদ্যোগী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, গঠিত হল উচ্চ পর্যায়ের কমিটি

People's Reporter: রবিবার 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে ডিজিটাল গ্রেফতারি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'দেশে এমন কোনও গ্রেফতারিই নেই। সাইবার প্রতারকরা এটাকে নতুন অস্ত্র হিসেবে মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে।'
ছবি - প্রতীকী
ছবি - প্রতীকী ছবি - সংগৃহীত
Published on

দেশ জুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ‘ডিজিটাল গ্রেফতারি’। যা নিয়ে গত রবিবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগের পরেই নড়েচড়ে বসল কেন্দ্র সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখার জন্য গঠন করা হল এক উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। যে কমিটির মাথায় থাকবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব।

জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের তত্ত্বাবধানে গঠিত হয়েছে এই কমিটি। এই উচ্চ পর্যায়ের কমিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখে দ্রুত পদক্ষেপ করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (১৪সি) দেশের প্রতিটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করেছে।

যত দিন যাচ্ছে এই ধরণের সাইবার প্রতারণার অভিযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিজিটাল গ্রেফতারির ফাঁদে পড়ে চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসেই ১২০ কোটি টাকা খুইয়েছেন সাধারণ মানুষ। এই নথি শুধু সরকারি হিসাবে। যে অভিযোগগুলি জমা পড়েনি, তার হিসাব যোগ করলে প্রতারণার অঙ্ক আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২১ সালে সাইবার ক্রাইমের অভিযোগ ছিল সাড়ে ৪ লক্ষের কাছাকাছি। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় সাড়ে ৯ লক্ষের বেশি। ২০২৩ সালে ১৫ লক্ষের অধিক। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ অভিযোগ জমা পড়েছে। এখান থেকেই পরিস্কার উদ্বেগ কতটা গুরুতর।

গত রবিবার 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে ডিজিটাল গ্রেফতারি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশে এমন কোনও গ্রেফতারিই নেই। সাইবার প্রতারকরা এটাকে নতুন অস্ত্র হিসেবে মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে। দেশের কোনও আইনে এর উল্লেখ নেই। তদন্তের জন্য কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থা কখনোই কাউকে ফোনে যোগাযোগ করে বা ভিডিও কল করে তথ্য চায় না। এমন কল এলে কেউ ভয় পাবেন না। বরং প্রতারকদের কলটি রেকর্ড করুন। নিকটবর্তী থানায় অভিযোগ দায়ের করুন। প্রয়োজনে ন্যাশনাল সাইবার হেল্পলাইনে যোগাযোগ (নম্বর - ১৯৩০) করতে পারেন।“

কীভাবে হচ্ছে এই প্রতারণা? জানা যাচ্ছে প্রতারকরা আপনাকে ফোন করে সিবিআই, ইডি অথবা অন্যান্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী শাখার অফিসার হিসেবে নিজের পরিচয় দেবে। আপনার বন্ধু বা আত্মীয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানাবে। তাঁদের কাছ থেকে মাদক জাতীয় কোনও নিষিদ্ধ দ্রব্য পাওয়া গেছে জানানো হবে। অথবা আপনাকে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে জানাতে পারেন। ভিডিও কল করে আপনার মুখ দেখতে চাইবে। উল্টো দিকের লোক পুলিশের মতোই পোশাক পরে থাকবে, যাতে সন্দেহের কোনও জায়গা না থাকে। যদি কেউ ভয় পায় তাহলে প্রতারকদের চাপসৃষ্টি করার কাজ আরও সহজ হয়ে যায়। প্রমাণ হিসেবে 'ভুয়ো' অ্যারেস্ট মেমো দেখাতে পারে। এরপর এই মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করবে আপনার কাছে।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সাইবার প্রতারণার সম্মুখীন হলে বা এমন কোনও ফোন এলে কখনোই ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করা উচিত নয়। প্রয়োজনে ফোনের ইন্টারনেট যোগাযোগ বন্ধ রাখুন। ব্যাঙ্কের সাথেও যোগাযোগ করুন। নিজের অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে জানুন। কল রেকর্ড করে পুলিশের হাতে তুলে দিন।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in