ভারতে পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যার মধ্যে এই মুহূর্তে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বায়ু দূষণ। ২০২১-এর ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট অনুসারে বিশ্বের প্রথম ১০০টি বায়ু দূষিত শহরের মধ্যে ৬৩ টি ভারতে। যার মধ্যে আছে দেশের রাজধানী নয়া দিল্লীর নাম। এই রিপোর্ট জানাচ্ছে ২০২১ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বায়ুদূষণ সংক্রান্ত নির্দেশিকার ভিত্তিতে ভারতের শতকরা ৪৮ শতাংশ শহর ১০ গুণ বেশি বিপজ্জনক অবস্থায় আছে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে PM2.5 ঘনত্ব - বাতাসে ক্ষুদ্র কণা যা 2.5 মাইক্রোমিটার বা তার চেয়েও ছোট। সম্প্রতি earth.org-তে এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট, ২০২১ অনুসারে ভারতের যে যে শহর বায়ুদূষণের শীর্ষে আছে তার মধ্যে আছে রাজস্থানের ভিওয়াদি (১০৬.২), উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ (১০২), দিল্লি (৯৬.৪), উত্তরপ্রদেশের জৌনপুর (৯৫.৩), নয়দা (৯১.৪), বাগপত (৮৯.১), হরিয়ানার হিসার (৮৯), ফরিদাবাদ (৮৮.৯), উত্তরপ্রদেশের গ্রেটার নয়দা (৮৭.৫), হরিয়ানার রোহতক (৮৬.৯)।
রিপোর্ট জানাচ্ছে, গাড়ির ধোঁয়া, শিল্পের বর্জ্য, রান্নার ধোঁয়া, নির্মাণ শিল্প, শস্যাবশেষ পোড়ানো এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষেত্র থেকেই ভারতে সর্বাধিক বায়ুদূষণ হচ্ছে। ভারতে বিদ্যুতায়নের জন্য লাগামহীনভাবে কয়লা, তেল এবং গ্যাসের ব্যবহারের কারণে এই মুহূর্তে বিশ্বের মধ্যে ভারত তৃতীয় বৃহত্তম দূষণকারী দেশ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারত প্রতি বছর বায়ুমণ্ডলে ২.৬৫ বিলিয়ন মেট্রিক টন কার্বন ছড়ায়।
উল্লেখ্য, কোভিড-১৯-এর কারণে ২০২০ সালে দেশব্যাপী লকডাউনের সময় দেশে বায়ুদূষণের মাত্রা কমেছিল। ২০১৯-এর মার্চ এপ্রিল মাসে যেখানে এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স (AQI)-এর তথ্য অনুসারে বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল ৬৫৬, সেখানে ২০২০ সালের একই সময় বায়ুদূষণের মাত্রা কমে হয় ৩০৬। যদিও ২০২১ সালে ভারত বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে। প্রথম স্থানে ছিল বাংলাদেশ।
সমীক্ষা জানাচ্ছে, ক্রমাগত বায়ুদূষণের বৃদ্ধির কারণে ভারতে হৃদযন্ত্র এবং ফুসফুসের অসুখ ক্রমশ বাড়ছে এবং প্রতি বছর ৭০ লক্ষ মানুষের অকালমৃত্যুর কারণ হচ্ছে। এমনকি ২০২১ সালে বায়ুদূষণের মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে দিল্লি সংলগ্ন অঞ্চলের বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়।
বায়ুদূষণ আটকাতে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে দিল্লি ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিয়নে (NCR) বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে ও গৃহস্থালীতে জ্বালানী হিসেবে কয়লার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যদিও যেখানে সবথেকে বেশি কয়লার ব্যবহার হয়, সেই থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন