CHAT GPT: চ্যাট জিপিটি : আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজ্যান্স এর নতুন বরদান...নাকি অভিশাপ ?

এটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজ্যান্স এর ওপর ভিত্তি করে তৈরী অন্যতম শ্রেষ্ঠ চ্যাটবট। যা তৈরী করেছে "ওপেন এআই" নামে একটি মার্কিন তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা। AI, ML, DL এর পেছনে কাজ করছে NLP'র পরিকাঠামো।
ছবি প্রতীকী
ছবি প্রতীকী গ্রাফিক্স - আকাশ
Published on

স্টিফেন হকিং সাবধান করে গেছিলেন। তিনি বলেছিলেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স (AI) যেদিন সম্পূর্ণভাবে শক্তিশালী হয়ে যাবে, সেদিন সে নিজেই নিজেকে রিডিজাইন করতে সক্ষম হবে। জৈবিক দিক দিয়ে মানব সভ্যতার কাছে এত দ্রুত নিজেকে বদলে নেবার ক্ষমতা নেই। তাই AI কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়তো একদিন মানবসভ্যতার শেষ ডেকে আনার জন্য দায়ী হতে পারে। বিবিসি' কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই আশঙ্কা করে গেছেন পৃথিবীখ্যাত পদার্থবিদ। তার আশঙ্কা অনেকটাই আসল রূপ নিতে শুরু করেছে। সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিকাঠামোর ওপর তৈরী করা একটি চ্যাটবট গোটা দুনিয়ায় হৈচৈ ফেলেছে। তার নাম চ্যাট জিপিটি (CHAT GPT)।

চ্যাট জিপিটি নিয়ে এতো ভয় পাবার কী কারণ? বলার আগে ছোট্ট করে জেনে নিন কী করতে পারে এই AI বেসড রোবোবট। ধরুন একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার বটটিকে জিজ্ঞাসা করছে, আমি অনেকদিন ধরে একটা প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু আমার কোড প্যাটার্নে কোথাও ভুল হচ্ছে, যা আমি ধরতে পারছি না...বলে ওই প্রোগ্রামার নিজের তৈরী করা কয়েক হাজার লাইন কোডের প্রোগ্রাম ওই বটকে দিয়ে দিল। কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যে ওই বট কোডের কোথায় ভুল হচ্ছে তা ধরিয়ে দিল ! শুধু তাই নয়, কী করলে ভবিষ্যতে এমন ভুল এড়ানো সম্ভব তা নিয়েই তিন চার লাইন উপদেশ দিয়ে দিচ্ছে চ্যাট জিপিটি !! চ্যাট জিপিটি'র মত কোনো AI প্ল্যাটফর্ম ঠিকঠাক কাজ শুরু করে দিলে প্রচলিত পেশাগুলিতো বটেই, একাধিক 'হোয়াইট কলার' কাজ - যেমন, সফ্টওয়্যার ডেভেলপমেন্টে প্রোগ্রামার হিসেবে কোনো মানুষের দরকার পড়বে কিনা তা নিয়েই এখন আলোচনা তুঙ্গে।

চ্যাট জিপিটি'র মত কোনো AI প্ল্যাটফর্ম ঠিকঠাক কাজ শুরু করে দিলে প্রচলিত পেশাগুলিতো বটেই, একাধিক 'হোয়াইট কলার' কাজ - যেমন, সফ্টওয়্যার ডেভেলপমেন্টে প্রোগ্রামার হিসেবে কোনো মানুষের দরকার পড়বে কিনা তা নিয়েই এখন আলোচনা তুঙ্গে।

এমনিতেই কম্পিউটার সায়েন্স উন্নত হবার পর অত্যাধুনিক সমস্ত প্রোগ্রাম ডেভলপমেন্ট আমাদের সমাজ থেকে প্রথাগত অনেক কাজের রিপ্লেসমেন্ট তৈরী করে দিয়েছে। অনলাইনেই চলছে পণ্য পছন্দ, কেনাবেচা, কাস্টমার কেয়ার ইত্যাদি। এই সমস্ত প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট কম্পিউটার প্রোগ্রামের কাঁধে ভর করে দিব্যি চলছে অনেকদিন। কিন্তু গবেষণা ও উন্নতি তো এক জায়গায় থেমে থাকে না। এলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সময়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজ্যান্স ( AI )। নাম শুনলে খুব খটমট মনে হলেও সাদামাটা ভাষায় মেশিনকে নির্দিষ্ট কিছু কমান্ডের মাধ্যমে নিজের থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করার কাজের নাম হল AI। আসলে বিপুল সংখ্যক (বিগ ডেটা) তথ্যকে ট্রেইনিং ডেটা হিসেবে ধরে চলছে হিসেবে নিকেশ।

বাজারে এই ভবিষ্যৎ গুণনের কাজের চাহিদা আজকাল আকাশছোঁয়া। বিশাল কর্পোরেট হাউসগুলো বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ঢালছে এই কাজে। ক্ষেত্রটির মূল নাম ডেটা সায়েন্স বা তথ্য বিজ্ঞান। আসলে স্ট্যাটিস্টিক্স এর ওপর ভর করেই ডেটা সায়েন্স এর কাজ চলছে। কিন্তু যোগ হয়েছে কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনের দুনিয়া। আস্তে আস্তে সামনে এসেছে এ আই, মেশিন লার্নিং (ML), ডিপ লার্নিং (DL) ইত্যাদি। আর সময়ের সাথে সাথে মানুষ, প্রায় সমস্ত কাজের দায়িত্ব একটু একটু করে দিয়ে দিচ্ছে মেশিনের ওপরেই।

আসলে স্ট্যাটিস্টিক্স এর ওপর ভর করেই ডেটা সায়েন্স এর কাজ চলছে। কিন্তু যোগ হয়েছে কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনের দুনিয়া। আস্তে আস্তে সামনে এসেছে এ আই, মেশিন লার্নিং (ML), ডিপ লার্নিং (DL) ইত্যাদি। আর সময়ের সাথে সাথে মানুষ, প্রায় সমস্ত কাজের দায়িত্ব একটু একটু করে দিয়ে দিচ্ছে মেশিনের ওপরেই।

আমরা কথা বলছিলাম চ্যাট জিপিটি নিয়ে। এটি আসলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজ্যান্স এর ওপর ভিত্তি করে তৈরী করা অন্যতম শ্রেষ্ঠ চ্যাটবট বলা চলে। অ্যাপ্লিকেশনটি তৈরী করেছে "ওপেন এআই" নামে একটি মার্কিন তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা। AI, ML, DL এর পেছনে কাজ করছে NLP'র অতিকায় পরিকাঠামো। ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিং। গোটা ইন্টারনেট এর মধ্যে ব্যবহার হওয়া সমস্ত তথ্যের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে তৈরী করা বিশেষ একটা প্রক্রিয়া।

চ্যাট জিপিটি'র মধ্যে থাকা NLP মডেল এতটাই সুতীক্ষ্ণ কাজ করতে সক্ষম যে কোনোরকম ভুল ধরা সম্ভব হচ্ছে না। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করার জন্য এই রোবোবটকে একটি রিসার্চ পেপার লেখার কাজ দেওয়ার পর মাত্র কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যে একটা আস্ত রিসার্চ পেপার লিখে দিচ্ছে বটটি! আলাদাভাবে প্ল্যাগারিজম সফটওয়্যার দিয়ে পরীক্ষা করার পরেও ধরা পড়ছে না কোনো ভুল কিংবা চুরির কাজ। মানে দাঁড়ালো বটটি একটি নতুন বিজ্ঞান প্রবন্ধ লিখে দিচ্ছে যা চুরি করা না কিংবা ভুল না!

চ্যাট জিপিটি নিয়ে ভয়ের কারণ আছে বৈকি! পৃথিবীর নানা অংশে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এই AI প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এসাইন্টমেন্ট তৈরী করে নিচ্ছে। একদম ঝকঝকে ! প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা তো প্রশ্নের মুখেই, সাথে এই ক্ষেত্রে সাহায্য প্রদানকারী নানা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বই টিকবে কিনা সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

ওপেন এ আই’ সংস্থাটি চ্যাট জিপিটি র পাশাপাশি ইতোমধ্যেই ডালি - 2 নামের আরেকটি প্ল্যাটফর্ম তৈরী করেছে। এই অ্যাপ্লিকেশন লেখা থেকে ছবি তৈরির কাজ করছে। অর্থাৎ আপনি লিখে দেবেন কি চাই, এ আই চাহিদা অনুযায়ী ছবি এঁকে দেবে।

চ্যাট জিপিটি নিয়ে ভয়ের কারণ আছে বৈকি! পৃথিবীর নানা অংশে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এই AI প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এসাইন্টমেন্ট তৈরী করে নিচ্ছে। একদম ঝকঝকে ! প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা তো প্রশ্নের মুখেই, সাথে এই ক্ষেত্রে সাহায্য প্রদানকারী নানা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বই টিকবে কিনা সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই আমেরিকার নানা স্কুল, কলেজে চ্যাট জিপিটি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ওপেন এ আই সংস্থাটিও চুরি আটকাতে নতুন আরেকটি প্রোগ্রাম তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল কতদিন? চ্যাট জিপিটি'র যে ভার্সন এখন ব্যবহার করা যাচ্ছে, সেটি বিনামূল্যে গবেষণা কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য বাজারে ছাড়া হয়েছে। নির্মাতা সংস্থাও এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের আগে বেশ কিছু সতর্কীকরণের বার্তা দিয়েছে। কিন্তু যদি শুরুতেই এই অবস্থা হয় তবে সামনে কী হবে?

লেখক, চিত্রকর, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, সেলসম্যান কিংবা অন্যকিছু। পেশাগুলো বাঁচবে তো? এ আই 'এর কাজে কোনো ভুল হচ্ছে না। নিখুঁত প্রায়। “ওপেন এ আই” নামের যে সংস্থা কিনা এই চ্যাটবটটি তৈরী করলো সেই সংস্থায় কাজ করছে মাত্র 375 জন কর্মী। অ্যাপ্লিকেশনটি এখন অবধি ব্যবহার করেছেন বেশ কয়েক মিলিয়ন মানুষ। এত মিলিয়ন মানুষের নানা কাজের প্রশ্ন, নানা ক্ষেত্র, জবাব দিচ্ছে মাত্র একটা অ্যাপ্লিকেশন। হয়তো মানুষ এর প্রতিকারের জন্য নতুন কিছু তৈরী করে নেবে অদূর ভবিষ্যতে। কিন্তু ততদিন অবধি চ্যাট জিপিটি কিংবা এই রকমের অন্য প্ল্যাটফর্মগুলো যে চিন্তার বড় বিষয় সে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

Key words: Artificial Intelligence, CHAT GPT, NLP

ড. সোমপ্রকাশ ধর শেষ কিছু বছর ধরে তথ্য বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করছেন। ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ ডি ‘ভূগোল ও বিপর্যয় মোকাবিলা’ বিষয়ে। বর্তমানে ডেটা সায়েন্স'-এর সাহায্যে রিমোট সেন্সিং ও জি আই এস অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ে তিনি গবেষণারত।

আরও পড়ুন

ছবি প্রতীকী
Plastic Waste: বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে প্লাস্টিক দূষণ, ১ বছরে রেকর্ড পরিমাণ বর্জ্য
ছবি প্রতীকী
২০২২ সালে ভারতে ভয়াবহ আবহাওয়ার বলি ২,২২৭ জন!

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in