বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি হ্রদ ও জলাশয় শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়ছে কৃষি, জলবিদ্যুৎ ও মানুষের পানীয় জলের ভবিষ্যৎ। বৃহস্পতিবার, সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা রিপোর্টে এই দাবি করেছেন আন্তর্জাতিক গবেষকরা।
প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের অর্ধেকের বেশি বড় হ্রদ ও জলাশয় শুকিয়ে গেছে বা শুকিয়ে যাচ্ছে। এর একটি কারণ অবশ্যই বিশ্ব উষ্ণায়ন। এর সঙ্গে রয়েছে মানুষের হঠকারী আচরণ, একের পর এক জলাশয় বুজিয়ে ফেলা।
বিশ্বের দুই হাজার জলাশয় ও হ্রদ পর্যবেক্ষণ করে এই গবেষণা রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। ১৯৯২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এসব হ্রদ ও জলাশয়ের স্যাটেলাইট ছবি পরীক্ষা করা হয়েছে এবং সেখান থেকেই এই ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।
কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিজ্ঞানের গবেষক ফ্যাংফ্যাং ইয়াও এই গবেষণা দলের প্রধান। তাদের বক্তব্য, ১৯৯০ সালের পর থেকে ক্রমশ লেক এবং বড় হ্রদগুলি শুকোতে শুরু করেছে। গবেষণা বলছে, কোনো কোনো জলাশয়ে প্রতি বছর ২২ গিগাটন করে জল শুকিয়ে যাচ্ছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে বহুগুণ বেশি।
গবেষকরা দেখেছেন, ১৯৯২ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে ৫৩ শতাংশ হ্রদের পান যোগ্য জল কমেছে। মানুষের দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার, বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন এবং ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বিশ্বব্যাপী জলাশয়ের জলের স্তরকে নীচে নেমে যেতে বাধ্য করেছে।
শুকিয়ে যাওয়া এসব হ্রদ এলাকায় বসবাস করেন প্রায় ২০০ কোটি মানুষ। পানীয় জলের স্তর নীচে নেমে যাওয়ায়, সকলেই সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক অঞ্চলে পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম মাপকাঠি গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধি। এর ফলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বদলে গেছে। আগে যেখানে যেমন বৃষ্টি হতো, এখন তা হচ্ছে না। এর ফলে স্বাভাবিক হ্রদগুলোর পলি আগে যেভাবে জমতো, এখন তা বদলে গেছে। হ্রদ ও জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ার পেছনে এই ঘটনাকে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন গবেষকরা।
গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'গত ২৮ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'লেক মিড' থেকে দুই-তৃতীয়াংশ জল শুকিয়ে গেছে।' গবেষণায় আরও দেখা গেছে, মধ্য এশিয়ার আরাল সাগর, মধ্য প্রাচ্যের মৃত সাগর-সহ একাধিক হ্রদ শুকিয়ে গেছে।
উষ্ণায়নের প্রভাব পড়েছে আফগানিস্তান, মিশর এবং মঙ্গোলিয়ার হ্রদগুলিতে, সেখানে বাষ্পীভবনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে না পারলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরো হ্রদ এবং জলাশয় শুকিয়ে যাবে। আর তেমনটি ঘটলে তার প্রভাব হবে ভয়ংকর।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন