ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA) মঙ্গলগ্রহের একটি ল্যান্ডস্কেপ ছবি প্রকাশ করেছে। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, লালগ্রহের দক্ষিণের উচ্চভূমিতে ‘আওনিয়া টেরা’র একটি গর্ত। উক্ত ছবিটি বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। তাঁদের অনেকে এই গর্তকে ‘সাহারার চোখ’ -এর সাথে তুলনা করছেন।
চলতি বছরের ২৫শে এপ্রিল ESA-র ‘মার্স-এক্সপ্রেস’ উপগ্রহ এই ছবিটি তুলেছিল। এই উপগ্রহটি ২০০৩ সাল থেকে লালগ্রহকে প্রদক্ষিণ করছে এবং গ্রহের ভূপৃষ্ঠের ছবি তুলে বায়ুমণ্ডলের গঠন শনাক্ত করার কাজ করেছে। রবিবার (১২ই জুন) ট্যুইটারে ছবি প্রকাশ করেছে ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA)।
ইতিপূর্বে, ‘রিচ্যাট’ নামে পরিচিত এই ভৌগলিক কাঠামোটি, পশ্চিম আফ্রিকার সাহারা মরুভূমিতে অবস্থিত। যা বর্তমানে ‘আইস অফ সাহারা বা সাহারার চোখ’ নামে পরিচিত। এই ভৌগলিক কাঠামোটি হুবহু মঙ্গলগ্রহের টোপোগ্রাফির মতোই। পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ২৫০ মাইল উপর থেকে তোলা এই ছবিটির মাঝখানে একটি ‘বুলস আই’ নামে একটি গর্ত রয়েছে।
ESA-র মতে, মঙ্গলগ্রহের এই ছবিটির কেন্দ্রে রয়েছে একটি গর্ত, যা এই ল্যান্ডস্কেপের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। আপাতদৃষ্টিতে চোখের মতো দেখতে এই গর্ততে জল থাকার সম্ভবনা রয়েছে। মানুষের চোখের বলয়ের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত শিরাগুলিতে যেমন জলধারণ করে, তেমনই এই ছবিতে দৃশ্যমান। চ্যানেলগুলি সম্ভবত সাড়ে ৩-৪ বিলিয়ন বছর আগে মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠ জুড়ে জল বহন করেছিল। এই চ্যানেলগুলি আংশিকভাবে একটি অন্ধকার জায়গায় অবস্থান করছে। কিছু জায়গায় আশেপাশের জমির উপরে উত্থিত অবস্থায় আছে বলেই এর আকৃতি চোখের মতো।
ESA –এর তরফে এই ছবির বিভিন্ন সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত ক্ষয় প্রতিরোধী পলিযুক্ত চ্যানেলগুলির নীচে দিয়ে জল প্রবাহিত হত। আরও একটি মত রয়েছে, সম্ভবত মঙ্গলের চ্যানেলগুলিতে লাভা দ্বারা পূর্ণ ছিল। গর্তের ছবিতে ভূপৃষ্ঠের উপর বেশ কয়েকটি রঙও দেখা যায়। যা থেকে অনুমান করা হয় এই অঞ্চলটি বিভিন্ন ধরণের উপকরণ দিয়ে তৈরি। গর্তের দক্ষিণের অংশ উষ্ণ লাল, একটু উত্তরে গাঢ় বাদামী এবং রঙটি ধূসর হয়ে যায় গর্তের কাছাকাছি এসে। এছাড়াও ছবিতে অনেক বিচ্ছিন্ন পাহাড় দেখা যায়।
মঙ্গলগ্রহের ‘আওনিয়া টেরা’ চিত্তাকর্ষক গর্তের জন্য পরিচিত। এটির নামকরণ করা হয়েছে প্রাচীন গ্রীসের একটি অঞ্চলের নামানুসারে। ‘আওনিয়া’ নামে প্রাচীন গ্রীসের একটি অঞ্চল ছিল। যা সাহিত্য, বিজ্ঞান এবং শিল্পকলার দেবী মিউজের কাছে পবিত্র স্থান হিসাবে পরিচিত ছিল। সেখানকার ভৌগলিক অবস্থার সাথে ESA –এর আলোচ্য ছবির মিল রয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন