হুইসেল ব্লোয়ার ফ্রান্সেস হাউজেন সম্প্রতি অভিযোগ করেন ফেসবুক ভারতে ঘৃণাসূচক এবং ভয় উদ্রেককারী মন্তব্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়না। তিনি জানান, হিন্দি এবং বাংলায় বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করার উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকার কারণে এটা করা সম্ভব হয়না। হাউজেনের এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, স্থানীয় বা আঞ্চলিক ভাষায় ঘৃণাসূচক বক্তব্য মোকাবিলার কোনো ব্যবস্থা ফেসবুকের নেই।
সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের প্রধান অরবিন্দ গুপ্ত আইএএনএসকে বলেন, "ফেসবুক মানুক বা না মানুক, এটি সত্যি যে আঞ্চলিক ভাষায় বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করার কোনো ব্যবস্থা ফেসবুকের নেই এবং সে কারণেই এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।"
এই পুরো বিতর্ককে যে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে গুপ্ত বলেন, এর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন যে, ঘৃণা ছড়ানো পেজগুলো ফেসবুকে কখনই অফিসিয়াল পেজ নয়। কিন্তু এটা সত্যি যে ফেসবুক এখনও সেগুলো বন্ধ করার জন্য কোন সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি।
বিশেষ করে হিন্দি এবং বাংলাকে লক্ষ্যবস্তু করার প্রশ্নে তিনি বলেন যে, এই ধরনের সমস্যা অন্যান্য ভাষার সাথেও হতে পারে। কারণ ফেসবুকে স্থানীয় ভাষা বোঝার লোক নেই।
আইএএনএস-কে দেওয়া এক বিবৃতিতে, ফেসবুকের এক মুখপাত্র বলেন, বছরের পর বছর ধরে, তারা এমন প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্যভাবে বিনিয়োগ করেছে যা ঘৃণাসূচক বক্তব্যকে সক্রিয়ভাবে শনাক্ত করে, "ব্যবহারকারীরা আমাদের কাছে অভিযোগ করার আগেই"।
তিনি আরও বলেন, "আমরা এখন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে হিন্দি এবং বাংলা সহ বিশ্ব জুড়ে ৪০টি ভাষায় নিয়ম লঙ্ঘনকারী বিষয়বস্তু সনাক্ত করতে ও ব্যবস্থা নিতে সক্ষম।"
ইউএস সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) দায়ের করা হগেনের অভিযোগ অনুসারে, "আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত, গোষ্ঠী এবং পেজগুলো ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে, মুসলিম বিরোধী বিবৃতি দিয়ে হিন্দুপন্থী জনগোষ্ঠীকে (ভি এন্ড আই) সহিংসতা ও উস্কানির উদ্দেশ্য নিয়ে পোষ্ট করে"।
"অ্যাডভারসারিয়াল হার্মফুল নেটওয়ার্কস - ইন্ডিয়া কেস স্টাডি"র প্রতিবেদনের লেখকের উদ্ধৃতি দিয়ে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "... এবং রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে আমরা এখনও এই গ্রুপের পদের জন্য মনোনয়ন পেশ করতে পারিনি"।
হাউজেনের অভিযোগ অনুসারে, ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ রেকর্ডগুলি থেকে স্পষ্ট যে এই ধরনের ক্ষতিকারক বিষয়বস্তু বন্ধ করার জন্য "হিন্দি এবং বাংলা বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট করার অভাব" ছিল।
ক্লাসিফায়ার হল এক স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি এবং অ্যালগরিদম যা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ঘৃণাসূচক বক্তব্য শনাক্ত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
তৃতীয় পক্ষের তথ্য অনুসারে, ভারতে ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপের ৪০০ মিলিয়ন করে ব্যবহারকারীর আছে এবং ভারত সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলির অন্যতম বড় বাজার।
যদিও এই অভিযোগ প্রসঙ্গে বিজেপি এবং আরএসএস এখনও কোনও মন্তব্য করেননি।
অতীতে, ফেসবুক ভারতে ঘৃণার বিষয়বস্তুর বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার বেশ কয়েকটি অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি (I&T) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহারের বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্য ফেসবুক এবং টুইটারের কর্মকর্তাদের সমন জারি করেছিল। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি নিয়ে কমিটি ভারতে ফেসবুকের প্রধান অজিত মোহনকেও প্রশ্ন করেছে।
বিজেপির প্রতি ফেসবুকের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আগস্ট ২০২০ সালে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে প্ল্যাটফর্মের তৎকালীন ইন্ডিয়া পলিসি প্রধান আঁখি দাস বিজেপি নেতাদের ঘৃণাসূচক পোষ্ট অপসারণের ধারণার বিরোধিতা করেছিলেন এবং সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন যে এর ফলে তাদের "বাণিজ্যিক স্বার্থ"তে বাধা আসতে পারে । দাস পরে ফেসবুক ছেড়ে দেন।
অন্যদিকে, ফেসবুকের সিইও মার্ক জুকেরবার্গ তাঁর কর্মচারীদের কাছে একটি নোটে এই অভিযোগ খন্ডন করে জানিয়েছেন, তাঁর কোম্পানির এক প্রাক্তন কর্মী সমাজে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে যা দাবি করেছেন তাঁর সেই দাবিগুলির কোনও অর্থ নেই।
- With Agency Inputs
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন