জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মহাসঙ্কটে পড়েছে ঝাড়খণ্ড। খুবই খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই রাজ্যের কৃষিকাজ, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, ভূগর্ভস্থ জল ও আবহাওয়ার অবস্থা। সরকারি রিপোর্টে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
২০২০ সালে, গবেষণার মাধ্যমে ভারতের রাজ্যের জলবায়ু দুর্বলতা সূচক রিপোর্ট (Climate Vulnerability Index report) তৈরি করেছে IIT-মান্ডি, IIT- গুয়াহাটি এবং IISc ব্যাঙ্গালোর। এই রিপোর্ট অনুসারে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে ঝাড়খণ্ড, মিজোরাম, ওডিশা, ছত্তিশগড়, আসাম, বিহার, অরুণাচল প্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ। এই সূচকে, দেশের শীর্ষ ১০০ টি সংবেদনশীল জেলার মধ্যে ৬০ শতাংশ ঝাড়খণ্ড, আসাম এবং বিহারে চিহ্নিত করা হয়েছে।
গত বছর, ভারত সরকারের একটি রিপোর্ট (Climate Vulnerability Assessment for Adaptation Planning in India) প্রকাশ করেছে। যেখানে, দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রাজ্যগুলির মধ্যে ঝাড়খণ্ডের নাম উঠে এসেছে।
সম্প্রতি, কেন্দ্রের মোদী সরকারও সংসদে স্বীকার করেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম হল ঝাড়খণ্ড। চলতি বছর, ঝাড়খণ্ডে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিজেপি সাংসদ দীপক প্রকাশ। এর উত্তরে কেন্দ্র জানায়, ঝাড়খণ্ডে ৬ টি জেলা আছে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষি-ফসল চক্রের উপর ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (ICAR)-এর গবেষণা রিপোর্ট তুলে ধরে কেন্দ্র জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝাড়খণ্ডের গাড়োয়া, গোড্ডা, গুমলা, পাকুর, সাহেবগঞ্জ এবং পশ্চিম সিংভূম জেলাগুলি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
ICAR নিজেদের NICRA (ন্যাশনাল ইনোভেশন অন ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্ট এগ্রিকালচার) প্রকল্পের অধীনে সারা দেশে কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বোঝার চেষ্টা করেছে। এরমধ্যে, ঝাড়খণ্ডের মোট ১৮ টি জেলা (গ্রামীণ) এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। উচ্চ ঝুঁকির তালিকায় থাকা ছয়টি জেলায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ধান, গম, ভুট্টা, চীনাবাদাম, ছোলা ও আলুর মতো ফসলের উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিমন্ত্রী অশ্বিনী চৌবে বিজেপি সাংসদের প্রশ্নের জবাবে আরও বলেছেন, উচ্চ তাপমাত্রা এবং অত্যধিক বৃষ্টিপাতের মধ্যেও এই জেলাগুলিতে যাতে চাল, গম, ডাল এবং টমেটো খাদ্যপণ্য উৎপাদন করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা চলছে।
নীতীশ প্রিয়দর্শী নামে রাঁচির এক পরিবেশবিদ এবং ভূতাত্ত্বিক জানিয়েছেন, গত আড়াই দশকে বিভিন্ন গবেষণা ও সমীক্ষার ভিত্তিতে তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে - ঝাড়খণ্ডের প্রায় সমস্ত এলাকায় তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাতের ধরণে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।
প্রিয়দর্শী দাবি করেছেন, ঝাড়খণ্ডের খনি এলাকায় উর্বর জমির ক্ষয় দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনা গেলে, আগামী ১০০-১৫০ বছরে রাজ্যের একটি বিশাল এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে।
ক্রমাগতহারে বনাঞ্চল ধ্বংস, অপরিকল্পিত নগর উন্নয়ন, খনির এলাকার সম্প্রসারণ এবং ভূগর্ভস্থ জলের অত্যধিক শোষণের কারণে এখানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। রাজ্যের কয়েক ডজন নদীও আজ শুকিয়ে যাচ্ছে, যেখানে সারা বছর জল থাকত।
কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, একসময় রাজ্যের রাজধানী (রাঁচি) হিল স্টেশন হিসাবে পরিচিত ছিল। আর, এখন তা গরম শহরগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৯ থেকে ২০১৪ সাল - টানা ৪৫ বছর ধরে রাঁচির গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে, ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল - মাত্র ৬ বছরে রাঁচির গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন