প্রযুক্তি জগতে সবচেয়ে বড় নৃশংস ঘটনা ঘটল শনিবার। এক ধাক্কায় প্রায় তিন হাজারের বেশি দক্ষ কর্মীকে ছাঁটাই করেছে ট্যুইটার (Twitter)। একইসঙ্গে, ভারত সহ সারাবিশ্বে বেশ কয়েকটি বিভাগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জানা যাচ্ছে, যে তিন হাজারের বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে, তার মধ্যে ভারতেই রয়েছে প্রায় ২০০ জনের বেশি দক্ষ কর্মী।
বিশ্বজুড়ে ট্যুইটারে দক্ষ কর্মীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৭,৬০০ জন। এর মধ্যে '৫০ শতাংশ' কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা জানিয়েছে ট্যুইটার।
সম্প্রতি, প্রায় ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে টুইটার অধিগ্রহণের পরেই কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হেঁটেছেন ধনকুবের এলন মাস্ক (Elon Musk)।
ট্যুইটার অধিগ্রহণের পরেই সংস্থার শীর্ষ আধিকারিক হিসাবে সিইও পরাগ আগরওয়াল (CEO Parag Agrawal), সংস্থার চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার নেড সেগাল (CFO Ned Segal), সংস্থার প্রধান আইনি প্রধান (পলিসি ও ট্রাস্ট) বিজয়া গাড্ডে (Vijaya Gadde) এবং টুইটারের পরামর্শদাতা শন এজেটকে (Sean Edgett) ছাঁটাই করে এলন মাস্কের মালিকানাধীন ট্যুইটার কর্তৃপক্ষ। সেই রেশ না কাটতেই শনিবার ট্যুইটার থেকে আরও ৫০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করা হল।
গত ২১ অক্টোবর, দ্য গার্ডিয়ান (The Guardian)-এর এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয় - ট্যুইটার (Twitter) অধিগ্রহণের পরে, চুক্তি অনুসারে সংস্থার ৭৫ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছেন এলন মাস্ক।
সংবাদ সংস্থা AFP জানিয়েছে, যাদের বরখাস্ত বা ছাঁটাই করা হয়েছে তাঁরা আজ থেকে কোম্পানির কম্পিউটার এবং ইমেল অ্যাক্সেস থেকে বঞ্চিত হবেন।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংস্থায় শ্রমিক/কর্মচারী শ্রেণীর ওপর ছাঁটাইয়ের খাঁড়া নেমে এসেছে। অনেকেই এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন। যদিও, শনিবারের ঘটনা সে সবকিছুকেই ছাপিয়ে গেছে।
জানা যাচ্ছে, ট্যুইটারের ভোক্তা পণ্য প্রকৌশল বিভাগের (Consumer Product Engineering) ভাইস প্রেসিডেন্ট আরনড ওয়েবার (Arnaud Weber) এবং এই বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর টনি হেইল (Tony Haile)-কেও ছাঁটাই করা হয়েছে।
টুইটার ফ্রন্টিয়ার্সের এক প্রাক্তনী, টনি হ্যাইল (Tony Haile) লিখেছেন, 'আমিও সচেতনভাবে টুইটার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছি। এটি একটি অদ্ভূত দিন, উভয় ক্ষেত্রের ৫০ শতাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা জানবেন না হতাশ হবেন তা ঠিক করা যাচ্ছে না।'
যারা কোম্পানিতে থেকে গেলেন, তাঁরাও নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।
মিশেল অস্টিন (Michele Austin) নামক এক প্রাক্তন ট্যুইটার কর্মী লিখেছেন, 'ঘুম ভেঙেই খবর পেলাম ট্যুইটারে আমার কাজ করার সময় শেষ হয়ে গেছে। আমার হৃদয় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে। এটা আমি মেনে নিতে পারছি না। এটি আমার ক্যারিয়ারের সেরা সময় ছিল। কাজের ক্ষেত্রে আমি প্রতিটি মিনিট উপভোগ করেছি।'
সূত্রের খবর, এই ছাঁটাইয়ের ফলে ট্যুইটারের বাণিজ্যিক, টেকনিক্যাল ও যোগাযোগ বিভাগ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কর্মীদের আগাম লিখিত নোটিশ না দিয়ে ব্যাপক ছাঁটাইয়ের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টুইটারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকো ফেডেরাল আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ট্যুইটার কর্মীরা।
আদালতে মামলাকারীদের আইনজীবী জানিয়েছেন, ফেডেরাল ওয়ার্কার অ্যাডজাস্টমেন্ট অ্যান্ড রিট্রেনিং অ্যাক্ট-র নিয়মানুযায়ী বড় কোম্পানিগুলিকে ছাঁটাইয়ের ৬০ দিন আগে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। কিন্তু ট্যুইটার তা করেনি। বদলে ট্যুইটার তাদের কর্মীদের একটি নথিতে স্বাক্ষর করাচ্ছে, যাতে তাঁরা মামলা না করেন। এটা বেআইনি। ট্যুইটারকে আদালতের তরফ থেকে সাবধান করা উচিত।
With Inputs IANS
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন