ভারত সরকার দেশের শীর্ষ স্থানীয় কিছু সাংবাদিকের ওপর পেগেসাস ব্যবহার করছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যেখানে বলা হয়েছে, ভারতে আবারও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পেগাসাস স্পাইওয়ার ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এই তালিকায় এমন একজন সাংবাদিক আছেন যার বিরুদ্ধে এর আগেও পেগেসাস ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল।
ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও গ্রুপের তৈরি করা পেগাসাস স্পাইওয়্যার দিয়ে কোনো ব্যক্তির ফোনের যাবতীয় তথ্য, ই-মেল, ছবি, কলে আড়ি পাতা, ওই ব্যক্তির অবস্থান এবং সেই ব্যক্তির মোবাইলের ক্যামেরা ব্যবহার করে তাঁর ছবি তোলা যায়। দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন জানিয়েছে, বাণিজ্যিক পরিসংখ্যান অনুসারে ভারতের ইন্টালিজেন্স ব্যুরো ২০১৭ সালে এই স্পাইওয়ার ইজরায়েলের এনএসও গ্রুপের কাছ থেকে আমদানি করে।
তদন্তকারী সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সর্বত্র ব্যাপকহারে এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা হয়। যদিও পেগাসাস প্রস্তুতকারী সংস্থা স্পষ্টই জানিয়েছে, কোনও দেশের সরকার অথবা নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ছাড়া এই স্পাইওয়ার বিক্রি করা হয়না।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বক্তব্য অনুসারে, ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যারের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, সাংবাদিক সিদ্ধার্থ বরদারাজন এবং দ্য অরগানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট-এর সাউথ এশিয়া এডিটর আনন্দ মাংনালের আই ফোনে সাম্প্রতিক সময় পেগাসাস স্পাইওয়্যারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে এঁদের ফোনে পেগাসাস স্পাইওয়ারের উপস্থিতি ধরা পড়ে।
দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে, এই বছরের ১৬ অক্টোবর সিদ্ধার্থ বরদারাজনের ফোনে পেগাসাস স্পাইওয়ার পাওয়া যায়। যে দুই সাংবাদিকদের ফোনে সাম্প্রতিক সময়ে পেগাসাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে তাদের কাছে অক্টোবর মাসেই অ্যাপল-এর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা আসে।
এর আগে ২০২১ সালের জুলাই মাসে অভিযোগ ওঠে, ইজরায়েলের এনএসও সংস্থার তৈরি পেগাসাস (Pegasus) স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হয়েছে বিশ্বের দেশে। এই তালিকায় ভারতেরও নাম জড়ায়। অভিযোগ ওঠে, ভারতের সাংবাদিক, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা, সমাজকর্মীদের মোবাইলে গোপনে এই স্পাইওয়্যার ঢুকিয়ে আড়ি পাতা হয়েছে। তাঁদের টেলিফোন কথাবার্তা, সোসাল মিডিয়ার বার্তা আদান-প্রদান, ব্যক্তিগত কথাবার্তা সবই নজরদারি করা হয়েছে ‘পেগাসাস’এর মাধ্যেমে। জানা যায়, এই স্পাইওয়্যারটি এমনই যে যেমন গোপনে তা মোবাইলে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, তেমন গোপনেই তা সরিয়ে নেওয়া যায়।
এই নিয়ে দেশব্যাপী হইচই হলে শীর্ষ আদালতে মামলা হয়। এরপর, ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর, পেগাসাস তদন্তের জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আর ভি রভেন্দ্রনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। প্রায় ১০ মাস পর ২০২২ সালের ২৫ আগস্ট, সেই কমিটি আদালতে নিজেদের তদন্ত রিপোর্ট পেশ করে। কিন্তু, তদন্ত কমিটির সেই রিপোর্ট সম্পূর্ণ জনসমক্ষে আনেনি শীর্ষ আদালত। আদালত শুধু জানিয়েছে, তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা করেনি কেন্দ্রীয় সরকার।
গত বছরের অক্টোবর মাসে অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রোজেক্ট (Organized Crime and Corruption Reporting Project) দাবি করে যে, ২০১৭ সালে ইজরায়েলের কাছ থেকে পেগাসাস (Pegasus) স্পাইওয়্যার ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি কিনেছিল ভারতের গোয়েন্দা ব্যুরো (IB)। এই স্পাইওয়্যার ৩ লক্ষ ১৫ হাজার ডলারের বিনিময়ে কেনা হয়েছে বলেও ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়।
এই তথ্য সামনে আসার পরেই পেগাসাস নিয়ে সম্পূর্ণ তদন্ত রিপোর্ট (যে রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টের কাছে জমা পড়েছে) প্রকাশের দাবি জানান সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। টুইটারে তিনি জানান, ‘আদালত নিশ্চয়ই এই রিপোর্ট নজরে আনবে। সাংবিধানিক পদ্ধাতিতেই মোদী সরকারকে দায়ী করতে হবে। কার দায়িত্ব তা চিহ্নিত করতে হবে।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন