Pegasus: ভারতে নজরদারি তালিকায় সরকারী কর্মকর্তা, বিরোধী রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মীদের এক অংশ - রিপোর্ট

ভারতে বেশ কিছু সাংবাদিক, সমাজকর্মী, বিরোধী রাজনীতিবিদ, সরকারী কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের ফোন নাম্বার স্নুপিং তালিকায় ছিল। এক প্রতিবেদনে একথা জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।
Pegasus: ভারতে নজরদারি তালিকায় সরকারী কর্মকর্তা, বিরোধী রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মীদের এক অংশ - রিপোর্ট
ছবি প্রতীকী সংগৃহীত
Published on

ভারতে বেশ কিছু সাংবাদিক, সমাজকর্মী, বিরোধী রাজনীতিবিদ, সরকারী কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের ফোন নাম্বার স্নুপিং তালিকায় ছিল। এছাড়াও আজারবাইজান, কাজাখস্তান, পাকিস্তানেরও বেশ কিছু নাম্বার এই তালিকায় ছিলো। এক প্রতিবেদনে একথা জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

ভারতের স্বতন্ত্র ডিজিটাল মিডিয়া দ্য ওয়্যার এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা সিদ্ধার্থ বরদারাজন যখন জানতে পেরেছিলেন যে সিকিউরিটি ল্যাবের বিশ্লেষণে দেখা গেছে তার ফোনটি পেগাসাস দ্বারা যুক্ত করা হয়েছে তখনই তাঁর মনে কিছু প্রশ্ন জাগে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারের এমন একজন মন্ত্রীর কথা মনে হয়েছিলো তাঁর, যাঁর সঙ্গে সাক্ষাতকালে ওই মন্ত্রী নজরদারি সম্পর্কে অস্বাভাবিক উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।

বরদারাজন সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে জানিয়েছিলেন, ‘ওই মন্ত্রী প্রথমে সভার জায়গা পরিবর্তন করেন, তারপর তাঁর ফোনটি বন্ধ করেন এবং আমাকেও ফোন বন্ধ করতে বলেন। এরপর অন্য একটি ঘরে ওই ফোনদুটি রাখা হয় এবং সেই ঘরে গান চালিয়ে দেওয়া হয়। ...সেই সময় আমি ভেবেছিলাম এই ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ, তবে এখন মনে হচ্ছে সম্ভবত তিনি বুদ্ধিমান ছিলেন।"

পেগাসাস এক সামরিক গ্রেডের স্পাইওয়ার, যা এক লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইজরাইলি সংস্থা কোনো সরকারকে সন্ত্রাসবাদী ও অপরাধীদের সন্ধানের জন্য সরবরাহ করে, তার সাহায্যে বেশ কিছু সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, ব্যবসায়ী এবং নিহত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির ঘনিষ্ঠ দুই মহিলা সহ ৩৭ জনের স্মার্টফোন সফলভাবে হ্যাক ব্যবহার করা হয়েছিল। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এবং সহযোগী ১৬টি মিডিয়ার মিলিত তদন্তে একথা জানা গেছে।

ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, তালিকার প্রকৃত সংখ্যা না জানা গেলেও চারটি মহাদেশের প্রায় ৫০টি দেশের ১০০০-এর বেশি ব্যক্তির নাম শনাক্ত করা গেছে। এই তালিকায় বেশ কয়েকজন আরব রাজপরিবারের সদস্য, কমপক্ষে ৬৫ জন ব্যবসায়িক কর্মকর্তা, ৮৫ জন মানবাধিকার কর্মী, ১৮৯ জন সাংবাদিক এবং ৬০০-রও বেশি রাজনীতিবিদ এবং সরকারী আধিকারিক – যার মধ্যে মন্ত্রী, কূটনীতিক এবং সামরিক ও সুরক্ষা কর্মকর্তারা ছিলেন। বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর নাম্বারও এই তালিকায় ছিল।

এই তালিকায় প্রায় ৫০ হাজারের বেশি নাম্বার নথিভুক্ত ছিলো। যেসব দেশ তাদের নাগরিকদের ওপর নজরদারি চালায় এবং ওই ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও-র বেশ কিছু ক্লায়েন্ট মূলত এই কাজ করেছিলো বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

এই তালিকায় সর্বাধিক সংখ্যা ছিলো মেক্সিকোর। যেখানে রাজনীতিবিদ, ইউনিয়ন প্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং সরকারী সমালোচকদের প্রায় ১৫ হাজার নাম্বার অন্তর্ভুক্ত ছিলো।

এছাড়াও কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, বাহারিন এবং ইয়েমেন সহ মধ্য প্রাচ্যের একটি বড় অংশ ছিল। সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, সৌদি আরব এবং বাহারিন এনএসও ক্লায়েন্টদের মধ্যে রয়েছে বলে ওই প্রতিবেদন জানিয়েছে।

তালিকার এক হাজারেরও বেশি ফরাসী নাম্বার ছিল। হাঙ্গেরিতে, কমপক্ষে দুটি মিডিয়া প্রধানের নাম্বার এই তালিকায় যুক্ত ছিলো। এছাড়াও দু'জন কর্মরত ​​সাংবাদিকের ফোনকে লক্ষ্যবস্তু করে সংক্রমিত করা হয় বলেও ফরেনসিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে।

পেগাসাস যে আইফোন এবং অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে নজরদারি চালায় সেখানে কিছু চিহ্ন রেখে যায়। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড এবং এনক্রিপশনের মতো পরিচিত গোপনীয়তার ব্যবস্থাগুলি পেগাসাসের বিরুদ্ধে সামান্য সহায়তা দেয়। পেগাসাস স্পাইওয়ার ব্যবহারকারীদের কোনওভাবে সতর্ক না করেই তার ফোনে নজরদারি চালাতে পারে। এটি যে কোনও ডিভাইসের যে কোনও কিছু পড়তে পারে এবং ব্যবহারকারীর ছবি, রেকর্ডিং, লোকেশন ট্র্যাক, যোগাযোগ, পাসওয়ার্ড, কল লগ এবং সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলি চুরি করতে পারে। এছাড়াও পেগাসাস স্পাইওয়্যার নিজের ইচ্ছেমত ফোনের মাইক্রোফোন এবং ক্যামেরা চালু করে নজরদারি চালাতে সক্ষম।

পেগাসাসের এই আক্রমণ বিভিন্ন উপায়ে শুরু হতে পারে। এটি কোনো মোবাইলে কোনও এসএমএস বা বার্তা পাঠিয়ে সক্রিয় হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, নজরদারি শুরু করতে কোনও ব্যবহারকারীকে অবশ্যই কোনো লিঙ্কে ক্লিক করতে হবে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, স্পাইওয়্যার সংস্থাগুলি তাদের "জিরো-ক্লিক" আক্রমণ বলে চিহ্নিত করেছে, যেখানে এই স্পাইওয়্যার কোনও ফোনে এক গোপন মেসেজ প্রেরণ করে, যা ব্যবহারকারীর পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়না। এমনকি নজরদারি শুরু করার জন্য ব্যবহারকারীদের তাদের ফোন চালু করারও দরকার পড়ে না।

২০১১ সালে, ইজরায়েলের উত্তর তেল আভিভের সিলিকন উপত্যকায় প্রতিষ্ঠার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এনএসওর প্রথম বিদেশী ক্লায়েন্ট হয় মেক্সিকো। মিডিয়া কনসোর্টিয়াম দ্বারা পরীক্ষিত তালিকায় দেখা গেছে ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে ১৫ হাজারেরও বেশি মেক্সিকান নাম্বার এখানে যুক্ত করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিক দেশের প্রধান প্রধান মিডিয়া সংস্থার পক্ষে কাজ করতেন।

তাদের মধ্যে একজন ছিলেন কারমেন অ্যারিস্টেগুই, তিনি দেশের অন্যতম বিশিষ্ট তদন্তকারী সাংবাদিক এবং সিএনএন-এ নিয়মিত লিখতেন। মেক্সিকান রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি নিয়ে লেখালেখির জন্য তাঁকে নিয়মিত হুমকি দেওয়া হত। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর প্রযোজককেও এই স্পাইওয়ারের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। নতুন রেকর্ড এবং ফরেনসিক পরীক্ষার তথ্য অনুসারে পেগাসাসের বিভিন্ন লিঙ্ক তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীর ফোনেও সনাক্ত করা হয়েছিল।

২০১৩ সালে এডওয়ার্ড স্নোডেনের জাতীয় সুরক্ষা সংস্থার নথি প্রকাশের পরেই আজকের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক স্পাইওয়্যার-এর প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। তিনি জানিয়েছিলেন, যে এনএসও প্রায় সকলেরই বৈদ্যুতিন যোগাযোগে নজরদারি করতে পারে। কারণ বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ট্র্যাফিক বহনকারী ট্রান্সন্যাশনাল কেবল এবং গুগল এবং এটিএন্ডটি-র মতো বৃহত্তর টেলিযোগাযোগ ইন্টারনেট সংস্থাগুলির ডেটায় তাদের গোপন সংযোগ ছিল।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in