প্লাস্টিক বর্জ্য দূষণের ফলে পরিবেশ মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা এই প্লাস্টিক দূষণ প্রতিকারে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তাতে কাজ হয়নি তেমনভাবে। ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম রিসার্চ (ইউএনইপি) অনুসারে, যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রে মাছ উৎপাদন অনেক কমে যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর মানুষ পিছু গড়ে ২২১ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য উতপাদন হয়।
বিশ্বব্যাপী দশটি দেশ সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন করে। সেগুলি হল –
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রঃ গত চার দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর ৪২ মিলিয়ন মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য উত্পাদন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। উল্টোদিকে হ্রাস পেয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার। ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে মাত্র ৫-৬ শতাংশ প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করা হয়েছে। পৌরসভার প্লাস্টিক বর্জ্যের (municipal plastic waste) অন্তত ৮৫ শতাংশ মাটিতে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আমেরিকার প্লাস্টিক উৎপাদনের ব্যাপক বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ব্যর্থ হয়েছে সেখানকার পরিকাঠামো।
ভারতঃ প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের অন্যতম উৎপন্নকারী দেশ। বছরে প্রায় ৯.৪৬ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন করে ভারত। দেশটি বর্তমানে প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এই সমস্যার মূল কারণ হল, ভারতে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকাঠামোর প্রয়োজন নেই। যার ফলে বর্জ্য পদার্থ জলাশয়ে প্রবেশ করছে।
চীনঃ চীন বছরে প্রায় ৬০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন করে। যার মধ্যে ১৬ মিলিয়ন টন পুনর্ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে প্লাস্টিক বর্জ্য দূষণের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে চীন। একবার ব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং সার্কুলার অর্থনীতিতে জোর দেওয়া হচ্ছে।
ব্রাজিলঃ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনকারী দেশ। বছরে প্রায় ১১.৩ মিলিয়ন টন উৎপাদন করে, যার মধ্যে শুধুমাত্র ১.২৮ শতাংশ পুনর্ব্যবহৃত হয়।
জাপানঃ জাপান বছরে প্রায় ৯ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন করে, যার মধ্যে ৪০ শতাংশেরও বেশি নিষ্পত্তিযোগ্য প্লাস্টিক। বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ের অন্যতম বৃহৎ ভোক্তা হওয়া সত্ত্বেও, এই বর্জ্যের বেশিরভাগই সাগরে মেশে। জাপানে বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের হার ১৯.৯ শতাংশ।
ইন্দোনেশিয়াঃ ইন্দোনেশিয়া বছরে আনুমানিক ৭.৮ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন করে, যার মধ্যে ৪.৯ মিলিয়ন টন অব্যবস্থাপিত হয়। প্লাস্টিক বর্জ্য রুখতে ইন্দোনেশিয়ার সরকার একটি প্রোগ্রাম চালু করেছে। সাগর থেকে প্লাস্টিক আবর্জনা সংগ্রহের জন্য অর্থ প্রদান করা হবে সরকারের তরফ থেকে। যার লক্ষ্য হল ২০২৫ সালের মধ্যে সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্য ৭০ শতাংশ কমানো।
রাশিয়াঃ রাশিয়ার প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এই দেশ ৮.৪৭ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন করে।
জার্মানিঃ পুনর্ব্যবহারে বিশ্বসেরা হিসাবে সম্মানিত হওয়া সত্ত্বেও, ইউরোপের সবথেকে বেশি প্যাকেজিং বর্জ্য উত্পাদকদের মধ্যে একটি জার্মানি, বিশেষত প্লাস্টিক। দেশটিতে প্রতি বছর প্রায় ৬.৫ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে মাত্র ৩৮ শতাংশ পুনর্ব্যবহৃত হয়।
ব্রিটিশ যুক্তরাষ্ট্রঃ এটি হল বিশ্বের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্যের উৎসগুলির মধ্যে একটি, যা ব্যক্তি প্রতি প্রায় ৬.৪ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্যে উৎপাদনে অবদান রাখে ৷ সরকারের সর্বোত্তম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, দেশে এখনও যথেষ্ট প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে, যেমন প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারের উপর চার্জ আরোপ করা এবং মাইক্রোবিডের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি।
মেক্সিকোঃ মেক্সিকোতে প্রতি বছর ৫.৯ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয়, যার মধ্যে ১৫ শতাংশ পুনব্যবহৃত হয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন