যুক্তিবাদী ও জনবিজ্ঞান আন্দোলনের পুরোধা প্রবীর ঘোষ প্রয়াত

সারা দেশে কুসংস্কার বিরোধী লড়াইতে সামনের সারিতে ছিলেন প্রবীর ঘোষ। জীবনভোর হাতে কলমে প্রমাণ করে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে অলৌকিক বলে কিছু হয়না। একাধিকবার বিভিন্ন বুজরুকের মুখোশ খুলে দিয়েছেন।
প্রয়াত প্রবীর ঘোষ
প্রয়াত প্রবীর ঘোষফাইল ছবি, ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির ফেসবুক পেজের সৌজন্যে
Published on

ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা প্রবীর ঘোষ প্রয়াত। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। শুক্রবার সকালে দমদমের মতিঝিলের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা প্রবীর ঘোষ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন।

বিগত কয়েক দশক ধরে জনবিজ্ঞান আন্দোলন এবং যুক্তিবাদী আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি। তাঁর লিখিত একাধিক বইয়ের মাধ্যমে তিনি যুক্তিবাদকে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই চালিয়ে গেছেন। তাঁর ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ বইটি পাঠকমহলে বিশেষ সাড়া ফেলেছিল। এছাড়াও ‘আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না’ – তাঁর আরও একটি সাড়া জাগানো গ্রন্থ।

সারা দেশে কুসংস্কার বিরোধী লড়াইতে সামনের সারিতে ছিলেন প্রবীর ঘোষ। জীবনভোর তিনি হাতে কলমে প্রমাণ করে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করে গেছেন যে অলৌকিক বলে কিছু হয়না। একাধিকবার তিনি বিভিন্ন বুজরুকের মুখোশ খুলে দিয়েছেন। প্রকাশ্যে সরব ছিলেন জ্যোতিষ এবং ওঝাদের বিরুদ্ধে। তুকতাক, সম্মোহন বলে যে কিছু হয়না তার প্রমাণও একাধিকবার দিয়েছেন এবং বুজরুকদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। এমনকি তিনি কেউ অলৌকিক শক্তির প্রমাণ দেখাতে পারলে তাঁকে ৫০ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন।

দীর্ঘদিন ব্যাঙ্কে চাকরি করলেও একটা সময় এসে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি যুক্তিবাদী আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে নেন। পূর্ববঙ্গের ফরিদপুরে তাঁর জন্ম হলেও পরবর্তী সময়ে আদ্রা শহরে বেড়ে উঠেছেন। এরপর পশ্চিমবঙ্গের খড়গপুর হয়ে তিনি দমদমে আসনে বাবার চাকরিসূত্রে।

যুক্তিবাদের প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে একাধিক সময়ে তিনি বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের বিশ্বাস থেকে সরে আসেননি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত যুক্তিবাদী সমিতি এখনও কোনও জায়গায় বুজরুকির খবর পেলে সেখানে ছুটে যায় এবং সাধারণ মানুষকে সেই বুজরুকির বিরুদ্ধে সচেতন করার চেষ্টা করে।

প্রয়াত প্রবীর ঘোষ মৃত্যুর আগে তাঁর দেহ এবং চোখ দান করার অঙ্গীকার করে গেছিলেন। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, চোখদানের কাজ শেষ হয়েছে। আগামীকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রবীর ঘোষের দেহ পিস হেভেনে থাকবে এবং এরপর সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজে তা দান করা হবে।    

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in