ভারত ছেড়ে চলে যাবে, তবুও হোয়াটসঅ্যাপ গোপনীয়তা ভাঙতে পারবে না। ২০২১ সালের কেন্দ্র সরকার ঘোষিত তথ্যপ্রযুক্তি নিয়মের মামলায় বৃহস্পতিবার দিল্লি হাইকোর্টে এমনই জানিয়ে দিলেন মেটার আইনজীবী। এদিন আদালতে মেটার পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, গোপনীয়তার কারণেই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন মানুষ। আর তার সঙ্গে কোনো ভাবে আপোস করা সম্ভব নয়।
সোশ্যাল মিডিয়া মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপে ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন’ সিস্টেম আছে। এর কারণে চ্যাটগুলি ব্যবহারকারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। বাইরের কেউ নজরদারি চালিয়ে সেই চ্যাট পড়তে পারবে না। এমনকি মেটার মূল অফিসও সেই চ্যাট পড়তে পারবে না।
অন্যদিকে, কেন্দ্রের ঘোষিত নিয়মে বলা হয়েছিল, মেসেজিং প্ল্যাটফর্মে চ্যাট গুলির মধ্যে আর কোনো গোপনীয়তা থাকবে না। প্রয়োজনে কোনো তথ্যের সন্ধানে ওই চ্যাট সরকার পড়তে পারবে। উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ইন্টারমিডিয়ারি গাইডলাইনস এবং ডিজিটাল মিডিয়া এথিক্স কোড রুল ২০২১ ঘোষণা করে কেন্দ্র সরকার। ওই রুল অনুযায়ী, টুইটার (বর্তমানে এক্স), ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপের মতো বৃহৎ সোশ্যাল প্লাটফর্ম গুলিকে নতুন নিয়ম মেনে চলতে হবে। আর কেন্দ্রের এই নয়া নিয়মে রাজি হয়নি মেটা।
এরপর কেন্দ্রের সেই নয়া নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। এখনও পর্যন্ত শীর্ষ আদালতে এই সংক্রান্ত ১৪ টি মামলা জমা পড়েছে। গত ২২ মার্চ মামলাগুলি দিল্লি হাইকোর্টে স্থানান্তরিত করে দেয় শীর্ষ আদালতে। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে চলছিল সেই মামলার শুনানি।
বৃহস্পতিবার দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মনমোহন এবং বিচারপতি মনমীৎ প্রীতম সিংহ অরোরার ডিভিশন বেঞ্চে মেটার আইনজীবী তেজস কারিয়া জানান, হোয়াটসঅ্যাপ গোপনীয়তার সঙ্গে আপোষ করবে না। এটা করতে গেলে দীর্ঘ সময় ধরে মেসেজ রেখে দিতে হবে। কারণ কোন সময় কোন ম্যাসেজের দরকার হবে তা আগে থেকে জানা যাবে না। লক্ষ লক্ষ মেসেজ রেখে দেওয়া সম্ভবও নয়।
এরপরেই হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ মেটার আইনজীবীকে প্রশ্ন করে, এই সংক্রান্ত কোনো নিয়ম আছে কিনা বিশ্বের কোনো দেশে। উত্তরে আইনজীবী জানান, বিশ্বের কোনো দেশ এই সংক্রান্ত নিয়ম চালু করেনি। আর যদি গোপনীয়তা ভঙ্গ হয়, তাহলে ভারত ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবে তারা।
অন্যদিকে, এদিন কেন্দ্রের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের আপত্তিকর বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। যা সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকারক। এই কারণে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা পর্যন্ত সৃষ্টি হতে পারে। সেকারণেই ওই নিয়মটি চালু হওয়া জরুরী।
দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালতের পর্যবেক্ষণ, সাধারণ মানুষের গোপনীয়তার অধিকার আছে, কিন্তু তা নিরঙ্কুশ নয়। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৪ আগস্ট।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন