প্লাস্টিক দূষণ এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিশ্বজুড়ে এই সংক্রান্ত বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও গত এক বছরে একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হয়েছে। যার বেশিরভাগই জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তৈরি পলিমার থেকে তৈরি।
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক জনহিতৈষী মাইন্ডেরু ফাউন্ডেশনের প্লাস্টিক ওয়াস্ট মেকার্স ইনডেক্স প্রকাশিত দ্বিতীয় সূচক অনুসারে, ২০২১ সালে বিশ্বে ১৩৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন একক-ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়েছে। যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন বেশি। উল্লেখ্য, সেই বছরই প্রথম সূচক প্রকাশিত হয়েছিল। একথা জানিয়েছে সিএনএন।
প্রতিবেদনে অনুসারে, গত দুই বছরে তৈরি অতিরিক্ত প্লাস্টিক বর্জ্য পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের জন্য প্রায় ১ কেজি বেশি এবং ফিল্ম এবং স্যাচেটের মতো নমনীয় প্যাকেজিংয়ের চাহিদার কারণে এই উৎপাদন হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের সরকার একক-ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পরিমাণ কমানোর নীতি ঘোষণা করেছে। যে নীতি অনুসারে একক-ব্যবহারযোগ্য স্ট্র, ডিসপোজেবল কাটলারি, খাবারের পাত্র, তুলো সোয়াব, ব্যাগ এবং বেলুনের মতো পণ্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সিএনএন জানিয়েছে গত জুলাই মাসে, প্রথম মার্কিন রাজ্য হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়া তার নিজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করে। যেখানে বলা হয় ২০৩২ সালের মধ্যে প্লাস্টিক প্যাকেজিং বিক্রি ২৫ শতাংশ কমানো হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত সহ অন্যান্য দেশেও এই নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।
যদিও রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, পুনঃব্যবহার করা প্লাস্টিক উৎপাদনের পরিমাণের সাথে মোকাবিলা করার তৎপরতা যথেষ্ট দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। যার ফলে ব্যবহৃত পণ্যগুলিকে পুনর্ব্যবহার করার চেয়ে ল্যান্ডফিল, সৈকত এবং নদী ও মহাসাগরে ফেলে দেবার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
মিন্ডারুর প্রতিষ্ঠাতা অ্যান্ড্রু ফরেস্ট জানিয়েছেন, "এটি সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করে যে, প্লাস্টিক দূষণ সমস্যা অনেক বড় আকার ধারণ করেছে এবং পলিমার উত্পাদকদের দ্বারা চালিত হচ্ছে। যা তেল ও গ্যাস সেক্টর দ্বারা চালিত।"
তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তৈরি প্রতি কিলোগ্রাম প্লাস্টিকের পলিমারের উপর একটি "পলিমার প্রিমিয়াম"-এর প্রস্তাব করেছেন। যাতে মানুষ, কোম্পানি এবং সরকারকে রিসাইকেল করার জন্য আরও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, "উন্নত বিশ্বে, পলিমার সংগ্রহে অর্থপ্রদান স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক সংগ্রহের দিকে পরিচালিত করবে। উন্নয়নশীল বিশ্বের ক্ষেত্রে, যাদের কাছে কোন কাজ নেই তারা এই কাজ করবে। এর ফলে সমুদ্রে কোন প্লাস্টিক বর্জ্য যাবে না, রাস্তায় প্লাস্টিক বর্জ্য থাকবে না, বন্যপ্রাণীদের ক্ষেত্রে প্লাস্টিক বর্জ্যর কারণে বিষক্রিয়া হবেনা।
গত বছর, রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ পরিষদ বিশ্বের প্রথম বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ চুক্তি তৈরি করতে সম্মত হয়েছে।
এই বিষয়ে নজরদারি চালানোর জন্য একটি আন্তঃসরকারি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে ২০২৪ সালকে লক্ষ্যমাত্রা রেখে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক চুক্তির খসড়া তৈরির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন