পশ্চিমবঙ্গে একজন কৃষকও আত্মহত্যা করেনি। এমনই দাবি করা হয়েছিল ২০২১ সালের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্যে। মূলত, রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট তৈরি করেছে কেন্দ্র। তবে, এই রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
কেন প্রশ্ন উঠছে? জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি কৃষকদের আত্মহত্যা নিয়ে তথ্য পেতে RTI করেছিলেন বিশ্বনাথ গোস্বামী নামে এক আইনজীবি। সেই RTI-এর উত্তরে তিনি জানতে পারেন- গত এক বছরে কেবলমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় আত্মঘাতী হয়েছেন ১২২ জন কৃষক। যার মধ্যে সর্বাধিক আত্মঘাতী কৃষকের বাড়ি ঘাটালে। যেখানে ২০২১ সালে আত্মঘাতী হয়েছেন ৬৩ জন।
ওই আরটিআই-এর উত্তরে আরও জানা গেছে ঘাটাল ছাড়াও গোয়ালতোড়ে আত্মঘাতী হয়েছেন ১৪ জন কৃষক, আনন্দপুরে ১০ জন কৃষক, কেশপুরে ও পিংলায় ৮ জন করে কৃষক, দাঁতন ও মোহনপুরে ৭ জন করে কৃষক এবং কেশিয়ারিতে ৫ জন কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন।
এখানেই শেষ নয়। চলতি বছরেও কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে চলেছে এই জেলায়। RTI-এ জানা গেছে- জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় আত্মঘাতী হয়েছেন ৩৪ জন কৃষক। এর মধ্যে ঘাটালে আত্মঘাতীর সংখ্যা ১৩। এছাড়াও দাঁতনে ৭ জন, গোয়ালতোড় ও কেশপুরে ৫ জন করে এবং পিংলা ও আনন্দপুরে ২ জন করে কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন।
আরটিআই-এর উত্তর পাবার পর গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্বনাথ গোস্বামী রাজ্যের অ্যাডিশনাল ডিজি এবং আইজি, স্টেট ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোকে এক চিঠি লিখে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যের দাবি জানিয়েছেন। তাঁর মতে এই ঘটনা অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য গোপনের পর্যায়ে পড়ে।
প্রসঙ্গত, মাত্র কয়েকদিন আগেই NCRB - ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া ২০২১ এবং অ্যাক্সিডেন্টাল ডেথস অ্যান্ড সুইসাইডস ইন ইন্ডিয়া ২০২১ শীর্ষক দুটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। যেখানে বলা হয়েছে ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে আত্মহত্যার সংখ্যা ১৩,৫০০। যা দেশের মধ্যে চতুর্থ। কিন্তু, সেই রিপোর্টে কোনো কৃষক আত্মহত্যা করেছেন বলে জানানো হয়নি। এনসিআরবি রিপোর্টের তথ্য অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গে কোনো কৃষক বা কৃষি শ্রমিক বিগত বছরে আত্মঘাতী হননি।
এই বিষয়ে সারাভারত খেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক অমিয় পাত্র বলেন, কৃষক যে বিপন্ন অবস্থায় আছে এটা সরকার অস্বীকার করতে চাইলেও কোনোভাবেই তা চাপা দেওয়া যাবে না। এরা যখন এনসিআরবিতে তথ্য পাঠায় তখন এগুলো চেপে যায়। এটা অত্যন্ত অসৎ কাজ। আসলে রাজ্যের সব জেলায় কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। এটাকে অস্বীকার করা যায়না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন