ঐতিহ্য মানেই কলকাতা। ভারতের পুরানো রাজধানীর ইতিহাস এবং সংস্কৃতির খোঁজ করলে, প্রথমেই আমাদের মাথায় আসে ভারতীয় জাদুঘরের নাম। কিন্তু কলকাতায় আরও এই রকম বহু জাদুঘর রয়েছে, যেখানে আছে ঐতিহাসিক এবং দুষ্প্রাপ্য জিনিসের সমাহার। এই রকমই পাঁচটি জায়গার হদিশ রইল। সময় পেলে দেখে আসতে পারেন ইতিহাসে মোড়া জায়গাগুলি -
আলিপুর জেল মিউজিয়ামঃ
ব্রিটিশ আমলে ১৯০৬ সালে কলকাতায় তৈরি হয়েছিল আলিপুর সেন্ট্রাল জেল। কলকাতার প্রাচীনতম সংশোধনাগার এটি। ২০১৯ সালে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা হওয়ার পর থেকে সেখানে আর কোনও আবাসিককে রাখা হয়নি। সংশোধনাগারকে সরকারি উদ্যোগে রূপান্তরিত করা হয়েছে জাদুঘরে। বর্তমানে এটাই কলকাতার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ স্থানে পরিণত হয়েছে।
একসময় এই সংশোধনাগারে রাখা হয়েছিল নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়, যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত, দীনেশ গুপ্ত, রাধাচরণ পাল, প্রমোদ রঞ্জন চৌধুরীদের। তাঁদের থাকার কুঠুরি, কীভাবে তাঁরা থাকতেন, বর্তমানে সেগুলিই দর্শনীয় স্থান। এছাড়া ধ্বনি-আলোর অনুষ্ঠানও হয় এখানে। শব্দ ও আলোর মোড়কে তুলে ধরা হয় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বীর বিপ্লবীদের সংগ্রামী ইতিহাস।
সময়ঃ মঙ্গলবার থেকে রবিবার দুপুর ১২ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত খোলা থেকে আলিপুর জেল মিউজিয়াম। সন্ধ্যা ৭ টার পর শুরু হয় ধ্বনি-আলো অনুষ্ঠান। টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়।
নেতাজি ভবনঃ
১৯০৯ সালে কলকাতার এলগ্রিন রোডের উপর নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর বাবা জানকীনাথ বসু তৈরি করেছিলেন বাড়িটি। পরবর্তীতে বাড়িটি সরকারকে দিয়ে দিয়েছে পরিবারের সদস্যেরা। ১৯৬১ সালে এই বাড়িটিকেই জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্রের রূপ দেয় ‘নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো’। সুভাষচন্দ্রের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করা হয় এখানে।
এখানেই সুভাষচন্দ্রকে গৃহবন্দী করে রেখেছিলেন ব্রিটিশরা। ১৯৪১ সালে এই বাড়ি থেকেই ইংরেজদের চোখে ধুলো দিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। বর্তমানে এই বাড়িটি কলকাতার একটি অন্যতম ভ্রমণ স্থান। যে গাড়ি করে সুভাষচন্দ্র অন্তর্ধানে গিয়েছিলেন, সেই গাড়িটিও সযত্নে রাখা আছে বাড়ির সামনে। এমনকি ১৯৩৮ এবং ১৯৩৯ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি থাকাকালীন নেতাজি যে ঘরে বসে বৈঠক করতেন, সেটিও সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা রয়েছে।
সময়ঃ মঙ্গলবার থেকে রবিবার পর্যন্ত সকাল ১১ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে নেতাজী ভবন।
এশিয়াটিক সোসাইটিঃ
১৭৮৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি স্যার উইলিয়াম জোনস কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে প্রতিষ্ঠা করেন এশিয়াটিক সোসাইটির। এরপর ১৮০৮ সালে পার্ক স্ট্রিটের একটি ভবনে এটি স্থানান্তরিত করা হয়। পরে ১৯৬৫ সালে পাশেই আরও একটি ভবন তৈরি হয়। বর্তমানে এশিয়াটিক সোসাইটি কেন্দ্রের সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনস্থ একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, যা ‘জাতীয় গুরুত্ব’ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাসম্পন্ন। এখানে রয়েছে বহু দুষ্প্রাপ্য বই, পুঁথি, মুদ্রা।
সময়ঃ সোমবার থেকে শুক্রবার সকাল ১০.৪৫ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬.১৫ মিনিট পর্যন্ত এবং শনি ও রবিবার সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
মার্বেল প্যালেসঃ
১৮৩৫ সালে রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক জোড়াসাঁকোর কাছে মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটে তৈরি করেছিলেন মার্বেল প্যালেস। এই রাজকীয় প্রাসাদের অফিসঘরে রয়েছে একটি অতি সুন্দর ঝাড়বাতি, দেওয়ালে রয়েছে দেড়শো বছর আগে হাডসনের তৈরি তৈলচিত্র, রয়েছে আর্ট গ্যালারি, বিশাল বিশাল ফুলদানি, ঝাড়লণ্ঠন, মূর্তি, রাজেন মল্লিকের যাবতীয় শখ-আহ্লাদ, শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা, ঠাকুরদালানে রামায়ণ ও গ্রিক পুরাণের নানা নিদর্শন রয়েছে। এছাড়া এখানকার সেরা আকর্ষণ চিড়িয়াখান ও পক্ষীশালা। প্রাসাদের ভিতরের বাগানে রয়েছে ১০০ বছরেরও পুরনো গাছপালা।
সময়ঃ মঙ্গলবার থেকে রবিবার বেলা ১১ টা থেকে ৪ টে পর্যন্ত খোলা থাকে।
জিপিও মিউজিয়ামঃ
১৮৬৮ সালে ইউরোপীয় স্থাপত্যের আঙ্গিকে তৈরি হয় জিপিও-র সাদা ভবন। তারই পশ্চিমে ইতালীয় ধাঁচের লাল ইটের তিনতলা বাড়িটি বর্তমানে ডিরেক্টর জেনারেল অফ কলকাতা জিপিও। এখানে রয়েছে সংগ্রহশালা, যা ‘পোস্টাল মিউজ়িয়াম’ নামে পরিচিত। এছাড়া ব্রিটিশ শাসনকালে ডাকব্যবস্থা কেমন ছিল সেই ইতিহাস, খুঁত-থাকা পয়সা বাতিল করার জন্য ১৯১২ সালে টাঁকশাল থেকে জিপিও-কে কয়েন কাটার যন্ত্র দেওয়া হয়, তা-ও রয়েছে। আছে রানারের ব্যবহৃত পোশাক, অস্ত্র, ঘণ্টা আর লণ্ঠন। জিপিও মিউজিয়ামে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাসবই ও তাঁর স্বাক্ষর।
সময়ঃ প্রতিদিনই সকাল ১১ টা থেকে বিকেল ৪ টে পর্যন্ত খোলা থাকে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন