ভারতের ৫০ জন শীর্ষ ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের কারণে দেশীয় ব্যাঙ্কগুলির মোট ৬৭,৬০৭ কোটি টাকা ঋণ মকুব করা হয়েছে। এক আরটিআইয়ের জবাবে একথা জানিয়েছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিশিষ্ট আরটিআই অ্যাক্টিভিস্ট সাকেত গোখলে দেশের ৫০ জন শীর্ষ ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির নাম এবং তাঁদের ঋণের বর্তমান পরিস্থিতি বিস্তারিত জানতে চেয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে একটি আরটিআই করেছিলেন। সেই আরটিআইয়ের জবাবে একথা জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
সংবাদমাধ্যমে গোখলে জানিয়েছেন, "ফেব্রুয়ারি মাসে বাজেট অধিবেশন চলাকালীন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী সংসদে এই বহুমূল্য প্রশ্নটি করছিলেন। তখন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর এই প্রশ্নের জবাব দেননি। তাই এই আরটিআই করেছি আমি।"
২৪ এপ্রিল আরবিআইয়ের সেন্ট্রাল পাবলিক ইনফর্মেশন অফিসার অভয় কুমার এর জবাবে জানিয়েছেন, ৬৮,৬০৭ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।
গোখলে সংবাদমাধ্যমে জানান, "২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের করা একটি রায় উদ্ধৃত করে বিদেশী ঋণখেলাপিদের প্রাসঙ্গিক তথ্য দিতে প্রাথমিকভাবে অস্বীকার করেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।" যদিও পরে তা সংশোধন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরবিআই প্রদত্ত ৫০ জন শীর্ষ ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছেন গীতাঞ্জলি জেমস্ লিমিটেডের কর্ণধার মেহুল চোকসি, ঋণের পরিমাণ ৫,৪৯২ কোটি টাকা। চোকসী বর্তমানে অ্যান্টিগুয়ে ও বার্বাডোস দ্বীপপুঞ্জের নাগরিক। তাঁর ভাগ্নে তথা গীতাঞ্জলি জেমস্ লিমিটেডের সহকারী কর্ণধার পলাতক নীরব মোদী এই মুহূর্তে লন্ডনে রয়েছেন।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আরইআই অ্যাগ্রো লিমিটেড, যার ঋণের পরিমাণ ৪,৩১৪ কোটি টাকা। এর ডিরেক্টর সন্দীপ ঝুনঝুনওয়ালা ও সঞ্জয় ঝুনঝুনওয়ালা গত একবছর ধরে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরটের (ইডি) তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন।
৪,০৭৬ কোটি ঋণ নিয়ে তালিকায় এরপরেই রয়েছে যতীন মেহতার উইনসোম হীরা এবং জুয়েলারী কোম্পানি। এই কোম্পানির জালিয়াতির বিরুদ্ধে তদন্ত করছে সিবিআই। লেখার সামগ্রী তৈরির কোম্পানি রোটোম্যাক গ্লোবাল প্রাইভেট লিমিটেডের ঋণের পরিমাণ ২,৮৫০ কোটি টাকা।
এছাড়াও আরটিআই অনুযায়ী বাকি কোম্পানিগুলোর নেওয়া ঋণের পরিমাণ পাঞ্জাবের কুদোস চেমি(২৩২৬ কোটি), রামদেব ও বালকৃষ্ণের রুচি সোয়া ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড (২,২১২ কোটি), গোয়ালিয়রের জুম ডেভেলপার্স প্রাইভেট লিমিটেড (২,০১২ কোটি টাকা)।
১০০০ থেকে ২০০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, তালিকায় এরকম কোম্পানির সংখ্যা ১৮টি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিজয় মালিয়ার কিংফিশার (১,৯৪৩ কোটি টাকা), ফরএভার প্রিসিয়াস জুয়েলারী অ্যান্ড ডায়মন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড (১,৯৬২ কোটি টাকা), গিলি ইন্ডিয়া লিমিটেড, নক্ষত্র ব্যান্ডস লিমিটেড, যাদের ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ১,৪৪৭ কোটি ও ১,১০৯ কোটি টাকা।
এছাড়া ৬০০ থেকে হাজার কোটি টাকার মধ্যে ঋণ নিয়েছে, এরকম ২৫টি কোম্পানি রয়েছে তালিকায়।
এদের মধ্যে অধিকাংশ কোম্পানি শেষ কয়েকবছরের মধ্যে ঋণ নিয়েছে এবং অনেক কোম্পানির কর্ণধারই ঋণ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন গোখলে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন