মাত্র ১৮ মাসেই পশ্চিমবঙ্গে ৬৫টি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে হয়েছে ৩০টি এবং ২০২২ সালে হয়েছে ৩৫টি। আশ্চর্যজনকভাবে এর একটিও ঘটনার কথা ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোকে রিপোর্ট করা হয়নি৷।
সম্প্রতি তথ্যের অধিকার আইনে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসা নিয়ে তথ্য জানতে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন পুলিশ কমিশনারেট এবং জেলা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন RTI কর্মী বিশ্বনাথ গোস্বামী। সেখান থেকেই এই তথ্য উঠে এসেছে। তবে সব জেলা পুলিশ প্রশাসন তথ্য সরবরাহ করতে রাজি হয়নি।
শুধুমাত্র ১২টি পুলিশ কমিশনারেট এবং জেলা পুলিশ সাম্প্রদায়িক হিংসা এবং দাঙ্গা সংক্রান্ত মামলার তথ্য সরবরাহ করেছে। কলকাতা পুলিশ, ডায়মন্ড হারবার পুলিশ এবং চন্দন নগর পুলিশ বিশ্বনাথ গোস্বামীকে তথ্য দিতে অস্বীকার করে বলে তিনি জানিয়েছেন।
তথ্য অনুসারে, সবথেকে বেশি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে হাওড়া জেলা পুলিশের কাছে। ২০২১ সালে ১৩টি এবং ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ১৫টি মামলা রেকর্ড করেছে হাওড়া পুলিশ।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলা। এই সময়ের মধ্যে ১৩টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে এখানে। ১০ টি মামলা নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট।
উল্লেখ্য, কোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনায় যাতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হলে তাকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। দাঙ্গার ক্ষেত্রে এই সংখ্যা পাঁচ বা তার বেশি।
একজন সামাজিক-আইন গবেষক বিশ্বনাথ গোস্বামী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গারও তথ্য চেয়েছেন বিভিন্ন পুলিশ কমিশনারেট এবং জেলা পুলিশের কাছ থেকে। গত ১৮ মাসে রাজ্যে মোট ২০০টি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে। ২০২১ সালে ১২৯ এবং ২০২২ সালের প্রথম ৬ মাসের মধ্যে ৭১টি ঘটনা ঘটেছে। এক্ষেত্রেও শীর্ষে হাওড়া। গোটা হাওড়া জেলা জুড়ে মোট ১২৯টি দাঙ্গার মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে হাওড়া গ্রামীণ পুলিশ ৭০ টি এবং হাওড়া শহর পুলিশ ৫৯ টি মামলা দায়ের করেছে।
RTI এ আরও জানানো হয়েছে যে, ১৮ মাসের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিহত হয়েছেন মোট ১৯ জন (২০২১ সালে ৮ এবং ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে ১১ জন)।
ক্ষুব্ধ RTI কর্মী সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, "সম্প্রতি হাওড়া এবং হুগলিতে রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়েছিল, সেই প্রেক্ষিতে এই পরিসংখ্যান অত্যন্ত চমকপ্রদ। বিপুল সংখ্যক সাম্প্রদায়িক হিংসার রিপোর্টই করা হয় না। মুর্শিদাবাদ, বীরভূম সহ বেশ কয়েকটি জেলা পুলিশের কাছে হিংসা নিয়ে কোনও তথ্যই ছিল না। অনেক জেলা পুলিশ তথ্য দিতে নারাজ ছিল। অন্যদিকে মালদা জেলা পুলিশ পরস্পরবিরোধী জবাব (Contradictory Reply) দিয়েছে।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন