দীপাবলি উপলক্ষ্যে গোটা দেশ যখন শব্দবাজিতে মেতে থাকল, তখন তা থেকে নিজেদের বিরত রাখলেন তামিলনাড়ুর সাতটি গ্রামের বাসিন্দারা। শীতের মরসুমে এলাকায় আসা পরিযায়ী পাখিদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, তাই কয়েকদশক ধরে তামিলনাড়ুর ইরোদ জেলার ৭ টি গ্রামের বাসিন্দারা দীপাবলিতে এই আত্মত্যাগ করে আসছেন। কোনও শব্দবাজি ছাড়া কেবলমাত্র আলো দিয়েই দীপাবলিকে স্বাগত জানালেন তাঁরা।
ইরোদ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ভাডামুঙ্গম ভেল্লোড গ্রামে রয়েছে একটি পাখিরালয়। শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, চীন এবং মায়ানমার থেকে ২৩ প্রজাতির প্রায় ১৫ হাজার পাখি শীতের মরসুমে এই অভয়ারণ্যে আসে। অক্টোবর থেকে জানুয়ারি - চার মাসের বেশি সময় তারা এখানে থাকে। এখানেই বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে তারা। সারস, হেরন বা ক্রৌঁচ, ওপেন বিল বক, জলমুরগি, ইন্ডিয়ান হোয়াইট আই, কালো রঙের মাথাযুক্ত আইবিস সহ একাধিক পরিযায়ী পাখি আসে এই এলাকায়।
এই অভয়ারণ্যের আশেপাশে প্রায় ৯০০টি পরিবার রয়েছে। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, দীপাবলির সময় তাঁরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের নতুন জামা এবং কেবল আলোবাতি কিনে দেন, কোনও শব্দবাজি কিনে দেন না। গত ২২ বছর ধরে এই পরম্পরা চলে আসছে তাঁদের এলাকায়। এই বছরও, সেল্লাপ্পালামায়ম, ভাদামুগাম ভেল্লোডে, সেমান্ডামপালায়ম, কারুকঙ্কাট্টু ভালসু, পুঙ্গাম্পাদি এবং আরও দুটি গ্রাম এই ‘নীরব দীপাবলির’ ঐতিহ্যকে বজায় রেখেছে।
স্থানীয় এক ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার জানিয়েছেন, "এই গ্রামের বাসিন্দারা পরিযায়ী পাখিদের বিশেষ অতিথি মনে করেন। আর অতিথি এঁদের কাছে ভগবানের সমান।"
প্রতিবছরই নিয়ম করে দীপাবলির পর বায়ুতে দূষণের মাত্রা বাড়ে। দিল্লিতে দীপাবলির পর দূষণ ভয়াবহ আকার নিয়েছে। দূষণ প্রতিরোধে সরকার, প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা সচেতনতামূলক প্রচার চালালেও বিশেষ কাজ হয়না। কিন্তু এই সময় দাঁড়িয়েই বছরের পর বছর দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে তামিলনাড়ুর অখ্যাত সাত গ্রাম। তথাকথিত পিছিয়ে পড়া অখ্যাত এই সাতটি গ্রামের বাসিন্দারা পাখিদের স্বার্থে, পরিবেশের স্বার্থে কয়েক দশক ধরে এই আত্মত্যাগ করে আসছে।
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, তাঁদের এলাকার ছোট ছোট শিশুরাও কখনও বাজি ফাটানোর জন্য জেদ করে না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন