এই শিক্ষানী্তি ছাত্রসমাজে বিভেদ ডেকে আনবে। দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তির সুযোগ কমবে। সেই কারণে আমরা এই শিক্ষানীতির বিরোধিতা করছি। বুধবার জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ ঘোষিত হবার পর পিপলস রিপোর্টারের প্রতিনিধিকে একথা জানালেন এআইফুকটো সভাপতি ও ওয়েবকুটা সম্পাদক কেশব ভট্টাচার্য।
জাতীয় শিক্ষানীতি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন – বাইরে যাই বলা থাক, এই শিক্ষানীতিতে কেন্দ্রীকরণ, বাণিজ্যিকিকরণ, কর্পোরেটাইজেশন বাড়বে। এই সরকার অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা বলপূর্বক চালু করার চেষ্টা করছে। এর ফলে প্রান্তিক অংশের বহু ছাত্রছাত্রী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে। ডিজিটাল ডিভাইড তৈরি হবে। শিক্ষার বাণিজ্যিকিকরণের ফলে প্রান্তিক অঞ্চলের মেধাবী ছাত্ররা শিক্ষার সুযোগ হারাবে। গ্রামের দিকে বহু অঞ্চলে এখনও ঠিকভাবে ইন্টারনেট সংযোগ নেই। পরিকাঠামোগত উন্নয়ন না হলে সেখানে কীভাবে ছাত্রছাত্রীরা অনলাইন শিক্ষা গ্রহণ করবে? আমরা প্রথম থেকেই এই শিক্ষানীতির বিরোধিতা করছি।
উল্লেখ্য, এদিনই ঘোষিত হয় জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০। দীর্ঘ ৩৪ বছর আগে ১৯৮৬ সালে দেশে শিক্ষানীতি ঘোষিত হয়েছিলো। ১৯৯২ সালে সেই শিক্ষানীতিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। এবার সেই শিক্ষানীতির আমূল বদল এনে পান্টানো হচ্ছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার খোলনলচে।
জানা গেছে, এবার নাম বদলে যাবে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের। এখন থেকে এই মন্ত্রক পরিচিত হবে শিক্ষামন্ত্রক হিসেবে। বুধবার নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় সিদ্ধান্তের পর এই ঘোষণা করা হয়।
এদিন ঘোষিত নতুন শিক্ষানীতিতে জানানো হয়েছে ইন্ডিয়ান ট্রান্সলেসন অ্যান্ড ইন্ডারপ্রিটেশন (IITI) নামক এক নতুন সংস্থা স্থাপন করা হবে। এছাড়াও জোর দেওয়া হবে সংস্কৃত এবং অন্যান্য ভাষার ওপর।
নতুন শিক্ষানীতি অনুসারে ২০৩৫ সালের মধ্যে গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিও ৫০% শতাংশে নিয়ে যাবার কথা বলা হয়েছে।
দেশে বর্তমানে যে ১০+২ স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে তা ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। নতুন ঘোষিত শিক্ষানীতি অনুসারে ৫+৩+৩+৪ ভিত্তিতে স্কুলশিক্ষা চলবে। ৩ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের জন্য এই ব্যবস্থা চালু থাকবে। ৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের শিক্ষার জন্য এনসিইআরটি এক পৃথক পরিকাঠামো গঠন করবে। প্রতি বছরের পরীক্ষার বদলে স্কুল ছাত্রদের ক্লাস ৩, ক্লাস ৫ এবং ক্লাস ৮-এ পরীক্ষায় বসতে হবে।
শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে ক্লাস ৫, অথবা ক্লাস ৮ পর্যন্ত মাতৃভাষা বা স্থানীয় ভাষায় পড়াশুনো করতে হবে।
নতুন শিক্ষানীতি অনুসারে দেশে যে ৪৫ হাজার মান্যতাপ্রাপ্ত কলেজ আছে তাদের সবাইকেই অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক এবং শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হবে।
শিক্ষকদের জন্য এক নতুন পরিকাঠামো গঠন করা হবে। এই ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ৪ বছরের বি-এড ডিগ্রি থাকতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই বিষয়ে সম্পূর্ণ পরিবর্তন আনা হবে।
এছাড়াও এদিনের ঘোষিত শিক্ষানীতিতে ভোকেশানাল ট্রেনিং-এর ওপর গুরুত্ব দেবার কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে থাকবে কাঠের কাজ, ইলেক্ট্রিকের কাজ, ধাতুর কাজ, বাগান তৈরি, মাটির জিনিস তৈরি প্রভৃতি। প্রতিটি ছাত্রকে এর যে কোনো একটি শিখতে হবে।
প্রতিটি স্কুল বিল্ডিংকে স্কুলের সময়ের পর বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে চালানো হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন