মাত্র আঠারো বছর বয়সে দেশকে ব্রিটিশ শাসনের কবল থেকে উদ্ধার করার জন্য হাসিমুখে ফাঁসির দড়ি গলায় পরেছিলেন যিনি, ভারতের সেই বীর সন্তান ক্ষুদিরাম বসুর আজ ১১২তম আত্মবলিদান দিবস। ১৯০৮ সালের আজকের দিনেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন ক্ষুদিরাম বসু। ফাঁসি হওয়ার সময় ক্ষুদিরামের বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর ৭ মাস ১১ দিন। বেশ কয়েকজন ইতিহাসবিদ তাঁকে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে কনিষ্ঠতম শহীদের অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন।
১৮৮৯ সালের ৩রা ডিসেম্বর অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার কেশপুর থানার হাবিবপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা ছিলেন নাড়াজোলের তহশিলদার ত্রৈলোক্যনাথ বসু ও মা ছিলেন লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী।
মাত্র ছয় বছর বয়সে মা কে ও সাত বছরে বাবাকে হারিয়ে বড়দিদির কাছে মানুষ হওয়া পিছুটানহীন ক্ষুদিরাম ছাত্র অবস্থাতেই বিপ্লবী দেশমাতার পরাধীনতার গ্লানি ঘোচাতে বিপ্লবী কর্মকান্ডে যোগ দেন। বিভিন্ন বিপ্লবী আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তিনি। বারীন্দ্র ঘোষের সংস্পর্শেও আসেন। তমলুকের হ্যামিল্টন স্কুলে পড়াকালীন মাত্র ১৫ বছর বয়সেই অনুশীলন সমিতির একজন স্বেচ্ছাসেবী হয়ে ওঠেন এবং ভারতে ব্রিটিশ শাসন বিরোধী পুস্তিকা বিতরণের অপরাধে গ্রেপ্তার হন ক্ষুদিরাম। ১৬ বছর বয়সেই ক্ষুদিরাম থানার কাছে বোমা মজুত করে সরকারি আধিকারিকদেরকে আক্রমণের লক্ষ্য স্থির করেন। এই নির্ভীক সন্তানের জীবনে বিপ্লবী সত্তার বীজ বপণ হয়েছিল এই সময় থেকেই।
যখন তাঁর মাত্র আঠেরো বছর বয়স তখন তিনি শুনতে পেলেন বিপ্লবী সুশীল সেনকে চাবুক মারার নির্দেশ দিয়েছেন অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড। এর যথোপযুক্ত প্রতিশোধ নিতে কিংসফোর্ডকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন তিনি, সঙ্গী হিসেবে পেলেন আর এক বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকীকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকবশত ১৯০৮ সালের ২৯ শে এপ্রিল তারিখে ক্ষুদিরামের ছোঁড়া বোমার আঘাতে মিস ও মিসেস কেনেডি নামের দুই ইংরেজ মহিলার মৃত্যু হয় এবং বেঁচে যান কিংসফোর্ড।
পরের দিন সকালেই মুজফ্ফরপুরের ওয়াইনি নামক একটি স্টেশনে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান ক্ষুদিরাম। হাতে হাতকড়ি লাগানো অবস্থায় ১ মে ক্ষুদিরামকে মুজফ্ফরপুর থেকে কলকাতায় আনা হয়েছিল। এরপরের দিন "দ্য স্টেটসম্যান" পত্রিকায় লেখা হয়েছিল, "একটা ছেলেকে দেখার জন্য রেল স্টেশনে ভিড় জমে যায়। ১৮ বা ১৯ বছরের এক কিশোর হলেও, তাঁকে রীতিমতো দৃঢ় দেখাচ্ছিল।... গাড়িতে নির্দিষ্ট আসনে বসার পর ছেলেটা চিৎকার করে বলে উঠলো 'বন্দেমাতরম'।"
ওয়াইনি রেল স্টেশনের বর্তমান নাম ক্ষুদিরাম বোস পুসা স্টেশন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন