জলবায়ু পরিবর্তনের মহাবিপদ ঘনিয়ে এসেছে বিশ্বের বুকে। কখনও আমাজনে দাবানল তো, কখনও দেশে দেশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। আর এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা। ব্যহত হচ্ছে খাদ্য সরবরাহ। এর জেরে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে প্রায় ৯.০৬ কোটি মানুষ অনাহারের মুখে পড়তে পারে। সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক খাদ্য নীতি গবেষণা কেন্দ্রের বৈশ্বিক খাদ্য নীতি রিপোর্ট ২০২২ (The Global Food Policy Report 2022)- এর গবেষণায় এমনই ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এসেছে।
‘ক্ষুধা মুক্ত ভারতের কথা’ দাবি এদেশে নতুন নয়। দেশের রাজনৈতিক নেতারা এনিয়ে কথা বললেও, দেখা যাচ্ছে বাস্তব পদক্ষেপের অভাবে তা এবার নিয়ন্ত্রনের বাইরে যেতে চলেছে। সেই বিষয়েই সতর্কতা জারি করে বৈশ্বিক খাদ্য নীতি রিপোর্ট ২০২২ বলছে, মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই ভারতেও খাদ্য সঙ্কট দেখা দেবে। এর জেরে অনাহারে দিন কাটাতে হবে আরও ২৩ শতাংশ বেশি ভারতবাসীকে।
ভারতের খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ মাপা হয় ‘এগ্রিগেট ফুট প্রোডাকশন’ সূচক দিয়ে। এই সূচকের আওতায় খাদ্যশস্য, মাংস, ফল, শাকসবজি, তৈলবীজ, ডাল – সবই রয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন না থাকলে, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই সূচক ২০৩০ সালে থাকত ১.৬২৭-এ। তবে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে এই সূচক নেমে যাবে ১.৫৪৯-তে।
এই অনুমানগুলি করা হয়েছে ইমপ্যাক্ট (IMPACT) মডেল অনুসারে। কী এই ইমপ্যাক্ট মডেল? জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক কৃষি বাজারের অনুকরণ করে এই মডেল। সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক, জল ব্যবস্থা এবং ফসল উৎপাদনের মডেলগুলি সমীক্ষা করে এই মডেলটি তৈরি করা হয়েছে।
একইসঙ্গে, এই রিপোর্টে ভারতের মধ্যে তাপমাত্রার বৃদ্ধির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। অনুমান করা হয়েছে, ২১০০ সালের মধ্যেই ভারতের গড় তাপমাত্রা ২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পৌঁছে যেতে পারে। একই সময়ে গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহের পরিমাণ তিন থেকে চারগুণ বাড়তে বলে সতর্ক করা হয়েছে। গবেষকদের আশঙ্কা, এই গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির বড় প্রভাব পড়তে পারে কৃষিজ উৎপাদনে।
তাদের দাবি, তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পর্যায়ক্রমে কমবে ভারতের কৃষি ফলন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৪১ থেকে ২০৬০ সালের মধ্যে কৃষিজ উৎপাদন ১.৮ থেকে ৬.৬ শতাংশ কমে যেতে পারে। ২০৬১ থেকে ২০৮০ সালের মধ্যে কৃষিজ উৎপাদন ৭.২ থেকে ২৩.৬ শতাংশ পর্যন্ত কমার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে শুধু আশঙ্কা প্রকাশ নয়, পরিস্থিতি মোকাবিলায় কি করা উচিত সেই নির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে আন্তর্জাতিক খাদ্য নীতি গবেষণা কেন্দ্রের গবেষণায়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ভারতে গ্রিনহাউস নির্গমন কমাতে জলের অভাবে থাকা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে চালের পরিবর্তে অন্য বিকল্প ফসল উৎপাদন করতে পারে।‘
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন