কোভিড পরিস্থিতিতে দেশের মানুষদের ন্যূনতম চিকিৎসা পরিষেবা দিতে ব্যর্থ ভারত। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মহল থেকে বারবারই এই অভিযোগ উঠছে। বিশেষত, আর্থ সামাজিক হোক বা সাংস্কৃতিক বৈষম্যের পাশাপাশি এখন স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রেও যা ফাঁক রয়ে গিয়েছে, তা কোভিড পরিস্থিতিতে আরও স্পষ্ট হয়েছে।এক মেডিক্যাল ট্যুরিজম ওয়েবসাইটের থেকে নেওয়া তথ্যই এই প্রশ্নচিহ্ন তুলে ধরেছে।
গত বছরই কোভিড ১৯-এর প্রথম ঢেউয়ে দেশের প্রান্তিক মানুষদের স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে সরকারের চরম অব্যবস্থার চিত্র ধরা পড়েছে। অপরিকল্পিতভাবে লকডাউনের শিকার হয়েছেন এইসব প্রান্তিক মানুষরা। বছর ঘুরে গিয়েছে, এবার ভারতবাসী আরও ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউয়ের সম্মুখীন। প্রথমবারের থেকে কি সত্যিই আমরা কিছু শিক্ষা নিতে পেরেছে ভারত? প্রশ্ন উঠছে।
সম্প্রতি নিউজক্লিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে - মহারাষ্ট্রের গড়চিরৌলির ২৮ বছরের প্রাসিক জানিয়েছেন, গত বছর তার বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। আসল সত্যিটা হল, হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। মহারাষ্ট্রের এই আদিবাসী জেলার স্বাস্থ্য পরিষেবা নেই বললেই চলে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের উপর ভরসা করেও কোনও উপায় হয়নি।
প্রাসিক জানিয়েছে, হাসপাতালের কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তার কারণ, রাজনৈতিক হোক বা সামাজিক, দুই ক্ষেত্রেই তারা অবহেলিত। এটি একটি ছোট ঘটনা, আমাদের সমাজে প্রান্তিক মানুষদের অসহায়তার। এরকম আরও বহু মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর। অক্সিজেনের অভাবে সেখানে বহু সদ্যোজাতর মৃত্যু দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এতকিছুর পরও সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপালকে দোষ দিয়ে নিজের দায় ঝেড়ে ফেলেছেন।
তথ্য অনুসারে প্রতি বছর প্রতি ১ লক্ষ জনসংখ্যায় ১২২ জন ভারতীয় অবহেলিত স্বাস্থ্য পরিষেবার কারণে মারা যান। এই সংখ্যা ব্রাজিলে ৭৪, রাশিয়াতে ৯১, চিনে ৪৬, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৯৩, পাকিস্তানে ১১৯, নেপালে ৯৩, বাংলাদেসে ৫৭ এবং শ্রীলঙ্কাতে ৫১। এক সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে প্রতি বছর ভারতে ১৬ লক্ষ মানুষ চিকিৎসাজনিত অব্যবস্থার কারণে মারা যান।
আমাদের দেশের বর্তমান স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল এখন যে সরকারের হাতে রয়েছে, তাতে প্রান্তিক মানুষদের ন্যূনতম চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার এতটুকু আশা নেই বললেই চলে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন