একটা সময় একবেলারই খাবার জোগাড় করতে পারতেন না। গাছের ফুল খেয়েই কাটাতে হত দিন। এখন তিনিই একজন সফল বিজ্ঞানী। সিনেমার গল্পের মতো জীবন বিজ্ঞানী ভাস্কর হলামির।
মহারাষ্ট্রের চিরছড়ি গ্রামের কুরখেড়া তহসিলে তাঁর বড়ো হওয়া। আদিবাসী পরিবারের ছেলে তিনি। খুবই দরিদ্র পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করে ছিলেন। বাবা, মা আর দুই ভাইবোনের সংসারে ঠিক করে খেতে পেতেন না। তিনি বলেন, এমনও দিন গেছে যেখানে আমরা মহুয়া ফুল খেয়ে দিন কাটিয়েছি। এই ফুল খেয়ে হজম করা খুব কঠিন। আমি এখনও ভাবি কীভাবে আমরা বেঁচেছিলাম! গ্রামের প্রায় ৯০% মানুষই এইভাবে দিন যাপন করতেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রামে ৪০০-৫০০ পরিবারের বসবাস। আমার বাবা-মা বাড়ি বাড়ি কাজ করতেন। যাতে খাবারের অভাব না দেখা দেয়। আমার বাবা একবার কাজের সন্ধানে ১০০ কিমি দূরে একটি স্কুলে গিয়েছিলেন। আমাদের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে তিন চার মাস বাবার সাথে যোগাযোগই করতে পারিনি। পরে যখন বাবা ফিরে এলেন তখন জানতে পারি ওই স্কুলের রাঁধুনির কাজ করতেন।
পাশাপাশি তিনি বলেন, আমার বাবা পড়াশোনার মূল্যটা বুঝতেন, সমস্ত কষ্ট উপেক্ষা করেই আমাদের দুই ভাই বোনকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। আমি প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত কসানসুরের আশ্রম স্কুলে পড়ি। বৃত্তি পরীক্ষার পাস করে সরকারি স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পাই।
তিনি বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক হয়েছেন গড়চিরলীর একটি কলেজ থেকে। পরে নাগপুরে সায়েন্স ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৩ সালে নাগপুরের লক্ষীনারায়ণ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে সহকারী অধ্যাপক নিযুক্ত হন। মহারাষ্ট্র পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষাও পাস করেন। নিজের ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন মিশিগান টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তাঁর গ্রামে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি বিজ্ঞানী এবং ডক্টরেট ডিগ্রি প্রাপ্ত।
যে আদিবাসী সামাজিক কষ্ট করে জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়েছেন আজ সরকারের আদিবাসী বিভাগের a tea with tribal celebrity-র প্রথম মুখ হিসেবে তাঁকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে ভাস্করবাবু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে একটি বায়োফাআর্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সিরনাওমিক্স উন্নয়ন বিভাগে কর্মরত। এখানে তিনি RNA তৈরি ও সিন্থেসিসের ওপর গবেষণা করছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন