গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ড প্রজেক্টে একাধিক বাধা সত্বেও সরকার সমস্ত রকম প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছে! যা নিয়ে ইতিমধ্যে কেন্দ্রের সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। তাদের অভিযোগ, এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ১০ লক্ষ গাছ কাটা পড়বে যা নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করবে।
গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ড প্রজেক্টটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (ANIIDCO)। ২০২১ সাল থেকে প্রকল্প শুরু হলেও একাধিক বাধার মুখে পড়েছে এই প্রকল্প। বিশেষ করে পরিবেশ সংক্রান্ত মামলা নিয়েই সমস্যা রয়েছে। ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালে মামলাও হয়েছে।
প্রকল্পটি দ্বীপপুঞ্জের ১৩০.৭৫ বর্গকিমি এলাকায় গড়ে উঠছে। যার মধ্যে বনভূমি রয়েছে ১২২.০৩ বর্গকিমি। ইতিমধ্যেই গাছ কাটা, গাছের গণনা ও পরিবহনের জন্য বিডিং প্রক্রিয়া চালু করেছে ANIIDCO। এর আগে ছোট ঠিকাদারদের সাথে উদ্যোগ নিয়ে গাছ কাটা হয়েছিল।
এখন প্রশ্ন উঠছে কলকাতা হাইকোর্টে ও ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালে একাধিক মামলা থাকার পরেও কীভাবে গাছ কাটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিল কর্তৃপক্ষ? তথ্য বলছে ২০২৫ থেকে ২০৪৭ সাল পর্যন্ত গ্রেট নিকোবরে শহর গড়ার জন্য ধাপে ধাপে গাছ কাটা হবে। প্রথম পর্যায়ে ২০২৫-২০৩৫ সাল পর্যন্ত ১০.৪৫ বর্গকিমি বনভূমির গাছ কেটে ফেলা হবে। ২০৩৫-২০৪১ পর্যন্ত ১২.১৮ বর্গকিমি বনভূমির গাছ ধ্বংস হবে এবং ২০৪২-২০৪৭ সালের মধ্যে ২৫.১৩ বর্গকিমি বনভূমির গাছ কাটা হবে।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে কেন্দ্রীয় পরিবেশ, অরণ্য ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করেছিল। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ থাকার পরও সেই কমিটি গ্রেট নিকোবরের পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য কোনও বিশেষজ্ঞ দলই তৈরি করেনি।'
প্রসঙ্গত, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ৮৩৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এই দুই দ্বীপপুঞ্জকে বিভক্ত করেছে ১০ ডিগ্রি চ্যানেল। যার মধ্যে নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ হচ্ছে গ্রেট নিকোবর দ্বীপ। এটি নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সর্ববৃহৎ ও দক্ষিণতম দ্বীপ।
২০২১ সালে নীতি আয়োগের বৈঠকে গ্রেট নিকোবর প্রজেক্ট-র জন্য বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ৭২,০০০ কোটি টাকা খরচ করে প্রকল্পটি হচ্ছে। মূলত এই দ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে লাভ তুলতে চাইছে ভারত। কারণ গ্রেট নিকোবর দ্বীপ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মালয়েশিয়ার ক্লাং বন্দর ও সিঙ্গাপুরের দূরত্ব প্রায় সমান।
এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কন্টেইনার ট্রান্স-শিপমেন্ট টার্মিনাল, গ্রিনফিল্ড ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, একটি সৌরশক্তি নির্ভর পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং একটি শহর গঠন করা। যে শহরে কমপক্ষে ৩ লক্ষ মানুষ বসবাস করতে পারবে। যার জেরেই এই বিপূল পরিমাণ অরণ্যভূমি ধ্বংস হবে।
মূলত এই গ্রেট নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে নৌসেনা ঘাঁটি তৈরি করতে চাইছে ভারত সরকার। কূটনীতিবিদদের মতে যার অন্যতম কারণ হচ্ছে চীনের উপর নজরদারি। কারণ মালাক্কা প্রণালী অঞ্চলে চীনের সক্রিয় প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। আর মালাক্কা প্রণালী থেকে গ্রেট নিকোবর দ্বীপের দূরত্ব বেশি নয়। এই মালাক্কা প্রণালী দিয়েই ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জলপথের মাধ্যমে বাণিজ্য হয়ে থাকে। ভারতের জাতীয় সুরক্ষার ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যেখানে নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধি করতে চাইছে চীন।
তাছাড়া কোকো আইল্যান্ডে সামরিক সুবিধার মাধ্যমে সেই অঞ্চলে নজরদারি বাড়াতে চাইছে চীন। তাই গ্রেট নিকোবরে নৌসেনা ঘাঁটি হলে সহজে নজরদারি চালানো যাবে বলে অনেকে মনে করছেন। কিন্তু জীববৈচিত্র্যে আঘাত করে বা সেগুলিকে ধ্বংস করে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের বিরোধিতা করছেন অনেকেই।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন